logo
আপডেট : ২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১৪:৩৮
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভাগ্য নির্ধারণ আজ
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভাগ্য নির্ধারণ আজ

দেশে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে এবার জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন দাখিল করা হয়েছে। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে গতকাল বুধবার এই আবেদন করেছেন। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিভিউ আবেদন দাখিল করা হয়েছে। আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী হলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এনিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তিনটি রিভিউ আবেদন দাখিল করা হলো। আজ বৃহস্পতিবার এই তিনটি আবেদনের ওপর একসঙ্গে শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। তিনটি আবেদন আজকের আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৪২ নম্বরে রয়েছে।

গত ২১ অক্টোবর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত এক আদেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আবেদনের ওপর ২৪ অক্টোবর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করে আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার প্রস্তুত করা কার্যতালিকায় বদিউল আলম মজুমদারের রিভিউ আবেদনটি সামনে রেখে ওপর দুটি আবেদন তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। তারও আগে গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রিভিউ আবেদন দাখিল করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক।

শেখ হাসিনা সরকার আমলে আপিল বিভাগের রায় প্রকাশের আগেই জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপর এনিয়ে রায় জালিয়াতি করেন সে সময়কার প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান। এরপর প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। এমন অবস্থায় একে একে তিনটি রিভিউ আবেদন দাখিল করা হলো।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে রায় দেন আপিল বিভাগ। তখনকার প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এই রায় দিয়েছিলেন। এই রায় দেওয়ার আগে আদালত এ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সেসময়কার আটজন সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ করে তাদের মতামত শোনেন। এদের মধ্যে ৫ জন সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। তারা হলেন, ড. কামাল হোসেন, টিএইচ খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। দুইজন সংস্কারের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। এরা হলেনÑ ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ড. এম জহির। অপর আমিকাস কিউরি ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে মত দেন। এমনকি তখনকার অ্যঅটর্নি জেনারেল (রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী) মাহবুবে আলমও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে মতামত তুলে ধরেছিলেন। সবপক্ষের বক্তব্য শোনার পর প্রকাশ্য আদালতে দেওয়া সংক্ষিপ্ত রায়ে অভিমত দেওয়া হয়, পরবর্তী দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন তথা ১০ম ও ১১তম নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে। রায়ে বলা হয়, এক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে সংসদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। রায়ে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আইনসম্মত না হলেও (প্রয়োজনের কারণে আইনসম্মত এবং জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন সুপ্রাচীনকাল ধরে চলে আসা নীতিমালার ভিত্তিতে) আগামী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করা ত্রয়োদশ সংশোধনীর আওতায়ই হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে অথবা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে একজনকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিধানটি বাতিল করার পূর্ণ স্বাধীনতাও সংসদের থাকবে। কিন্তু কয়েকবছর পর যখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয় তখন দেখা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দুটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো কথাই নেই। এই রায় দেখার পর তখন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে এই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় সংসদে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেয়।

 

ভোরের আকাশ/রন