রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ও অপসারণে বিদ্যমান সংবিধানের জটিলতায় পড়ে ‘বিপ্লবী সরকার’ এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন সরকারের উপদেষ্টা ও সম্বয়করা। তারা আক্ষেপ করে বলছেন, বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এসেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথম থেকে বিপ্লবী রূপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এক নজিরবিহীন আবেগ ও উত্তেজনার জোয়ার দেখা গেছে। সেই সময় বিপ্লবী সরকার ও সংবিধান রচিত হলে বিদ্যমান সংবিধানের ‘মারপ্যাঁচে’ পড়তে হতো না। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়ে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে, এখন ওই শপথের আক্ষেপ ঝরছে সরকারের উপদেষ্টা ও সরকার হঠানোর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কদের মুখে। বিপ্লবী সরকার হলে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও অপসারণ নিয়েও সংকটের মুখোমুখি হতে হতো না তাদের। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে ‘বিপ্লবের চেতনায়’ বিদ্যমান সংবিধান ছুড়ে ফেলে নতুন সংবিধান প্রণয়নের আওয়াজ তুলছেন সমন্বয়করা। তারা বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান কেন এ সংবিধানের অধীনে ঘটা করে বঙ্গভবনে যেয়ে পতিত সরকারের অনুগত রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিলেন, তা নিয়ে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বিপ্লবী সরকার ঘোষণা করে শহিদ মিনার বা কোনো উন্মুক্ত স্থানে জনতার সামনে অন্তর্বর্তী সরকারকে কেন শপথ নেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হলো না-তা নিয়েও নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ আবার সংবিধান পুনর্লিখনের কথা বলছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের পদচ্যুতির দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর রাষ্ট্রপ্রধানকে সরানোর উদ্যোগ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও বিশ্লেষণ। এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ কিংবা অপসারণের ক্ষেত্রে কিছু সাংবিধানিক জটিলতা সামনে এসেছে। আচমকা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিরোধিতা করে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে, এতে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণের দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় ছাত্ররা। ছাত্রজনতার দাবির পর সরকার রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির বিষয়টিকে গণদাবি হিসেবেই সামনে এনে সুরাহার উদ্যোগ নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির বিষয়টি উঠেছে এবং রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদেও জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে হলে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন লাগবে। কিন্তু এখন সংসদ বহাল নেই। সুতরাং সংবিধানের মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা সম্ভব নয়। আর রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে স্পিকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। স্পিকার পদত্যাগ করেছেন। ডেপুটি স্পিকারও জেলে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দেশে রাজনৈতিক সংকট এবং সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি করবে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যে কারণে আলোচনায় সংবিধান
রাষ্ট্রপতি পদটি বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। গণঅভ্যুত্থান এবং পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকার বিষয়টিকে রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখছে।
সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির থাকবে কি থাকবে না এটি আইনি কিংবা সাংবিধানিক বিষয় নয়; এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এর সমাধান হতে পারে। রাষ্ট্রপতির ব্যাপারে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সরকার সবচে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ‘রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ বা পদত্যাগের কোনো সাংবিধানিক পথ খোলা নেই। সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, স্পিকার পদত্যাগ করেছেন। এদিকে সংবিধানও স্থগিত করা হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণের সুযোগ না থাকায়, রাষ্ট্রপতিকে এখন অপসারণ করা হলে, সেটি সংবিধানের বাইরে গিয়ে করতে হবে, যেটি একটি খারাপ নজির হয়ে থাকবে।’
রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগ করলে কিছু জটিলতার দিক উল্লেখ করে শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, মনে রাখতে হবে, ৫ আগস্টের পরে এই রাষ্ট্রপতি এই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের শপথ করিয়েছেন এবং তিনি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। যদি ৫ আগস্টের পরে আগের সরকারের সংসদ, রাষ্ট্রপতি, স্পিকার সকলকে বাদ দিয়ে ডকট্রিন অব নেসেসিটির বরাত দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের চেতনা নিয়ে সরকার গঠিত হতো, তাহলে আজ এ প্রশ্ন উঠত না।
রাষ্ট্রপতি না থাকলে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের ব্যাপারটি কীভাবে করতে হবে এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হাফিজুর রহমান বলছেন, এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতি কীভাবে পদত্যাগ করবেন এবং নতুন রাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে ঘিরেই হবে জটিলতা। নতুন সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড সংবিধান অনুযায়ী হয়েছে, আবার অনেক কর্মকাণ্ড হয়েছে সংবিধানের বাইরে। ফলে একটা হ য ব র ল বা বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়ছে। এখন রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা হলে, সংসদ না থাকায় সংবিধান অনুযায়ী নতুন কোনো রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা যাবে না। সেটি একটি সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক শূন্যতা তৈরি করবে এবং একটি খারাপ নজির হয়ে থাকবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করতে হলে সকল প্রধান রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সিভিল সোসাইটি, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, শিক্ষক, আইনজীবী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর কনভেনশন ডেকে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করতে হবে এবং পরবর্তী সংসদে সেটিকে বৈধ করিয়ে নিতে হবে।’
গত বুধবার বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এই পদটা একটা সাংবিধানিক পদ, একটা প্রতিষ্ঠান। সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। এই পদে হঠাৎ করে পদত্যাগের মাধ্যমে শূন্যতা সৃষ্টি হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে। রাষ্ট্রীয় সংকটের সৃষ্টি হবে।’
বিপ্লবী সরকার গঠন না করার কারণ জানালেন আসিফ নজরুল
সরকার পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলোই সাংবিধানিক পথে যাত্রা শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘যদি সাংবিধানিক পথে যাত্রা ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেটা এই আন্দোলনে থাকা সবার ভুল।’
গত ২৪ অক্টোবর ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা: আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন। সভায় আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশ কীভাবে সাংবিধানিক পথে গেল, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক পথে কারা গিয়েছিল? প্রথম যে মিটিংটা ছিল, সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে আমাকে একজন ফোন করলেন। আমি তো হতবাক। আমি তো বুঝতেই পারছিলাম না যে আমাকে মারার জন্য ফোন করেছে নাকি কথা বলার জন্য। আমার ওয়াইফ (স্ত্রী) হু হু করে কান্না শুরু করল। আমাকে বলল যে তুমি যেয়ো না, তোমাকে মেরে ফেলবে। তারপর গেলাম যখন, দেখি বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল সেখানে, কেবল আওয়ামী লীগ আর তার দোসররা ছাড়া। বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজত, গণতন্ত্র মঞ্চের প্রতিটি দল, জাতীয় পার্টির তিনটি অংশ সবাই ছিল। ওনারা সবাই মিলে সাংবিধানিক পথে যাত্রা শুরু করেছে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘তারপর যখন বঙ্গবভনে আলোচনায় বসলাম, এত বড় টেবিল, যার কোনায় বসে ছিলাম আমি। সবচেয়ে জোর দিয়ে একটি কথা বলেছিলাম, খালেদা জিয়াকে আজকেই ছাড়তে হবে।’
তারপর আরও আলোচনা হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরাও উপস্থিত ছিলেন উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই যে পুরো আলোচনা প্রক্রিয়ায় কেউ তো তখন বলেন নাই যে আমরা কেন শপথ নেব, সাংবিধানিক পথে যাব, চলেন বিপ্লবী সরকার গঠন করি?’
সাংবিধানিক পথে যাওয়া দোষের ব্যাপার নয় উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, তখন এমন একটা পরিস্থিতি ছিল যে খুব সময় নিয়ে সুচিন্তিতভাবে চিন্তা করার মতো পরিবেশ ছিল না। আর যদি সাংবিধানিক পথে যাত্রা ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেটা এই আন্দোলনে থাকা সবার ভুল।
উৎকৃষ্ট গণতন্ত্র চাইলে কিছু সংস্কার করতে হবে বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, এখন এই যে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিল, জীবন বিপন্ন হলো, অঙ্গহানি হলো, তারা কি ন্যূনতম গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিয়েছে? তারা দিয়েছে উৎকৃষ্ট গণতন্ত্রের জন্য।
যদি অনৈক্য থাকে, তাহলে সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘আমার সবচেয়ে ভয় লাগে, সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন আন্দোলনের সাথে থাকা শক্তিদের মধ্যে কোনো প্রশ্নে অনৈক্য দেখি। মতবিরোধ থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, কিন্তু অনৈক্য যেন না থাকে। একসঙ্গে কথা বলে রিজলভ (সমাধান) করতে হবে। আমরা যদি একসঙ্গে থাকি, তাহলে সংবিধানের মধ্যে থেকেও সমাধান সম্ভব, সংবিধানের বাইরে গিয়েও সমাধান সম্ভব। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমাদের ঐক্য।’
আসিফ নজরুল কি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন, প্রশ্ন ফরহাদ মজহারের
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্য ঘিরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা ও বিশ্লেষণ। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে আসিফ নজরুলের বক্তব্যকে খণ্ডন করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। ফরহাদ মজহার বলেন, আসিফ নজরুল দাবি করেছেন, ‘সাংবিধানিক পথে যাত্রা ভুল হলে সেটা এই আন্দোলনে থাকা সবার ভুল। না, মোটেও না। সেটা সবার ভুল হতে পারে না। সেটা একান্তই আসিফ নজরুলের ভুল, কিংবা রাজনৈতিক দল ও সেনাপ্রধানসহ যারা গণঅভ্যুত্থানকে ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে ঢুকিয়েছে তাদের সকলেরই ভুল।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরাও উপস্থিত ছিলেন উল্লেখ করে, আসিফ নজরুল দাবি করেছেন, ‘পুরো আলোচনা প্রক্রিয়ায় কেউ তো তখন বলেন নাই যে আমরা কেন শপথ নেব, সাংবিধানিক পথে যাব, চলেন বিপ্লবী সরকার গঠন করি।’
যদি তাই হয় তাহলে আসিফ নজরুল সেই ক্ষেত্রে চুপ করে ছিলেন কেন? কেন বলেন নি এটা ‘বিপ্লবী সরকার’ গঠনের মামলা নয় একদমই, এটা হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শহীদদের রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপ দেওয়ার দায়। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য নতুন গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অভিপ্রায়কে ধারণ এবং তাকে গাঠনিক রূপ দেওয়ার কর্তব্য। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের যে সাংগঠনিক ক্ষমতা ঐতিহাসিক ভাবে তৈরি ও হাজির হয়েছে তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠন করাই আমাদের কাজ।
আসিফ নজরুল কি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন? তিনি সেনাপ্রধান ওয়াকারুজ্জামানকে বিভ্রান্ত ও ভুল পথে পরিচালিত করেছিলেন কেন? পুরো সেনাবাহিনী তো তখন জনগণের পক্ষে ছিল। এখন তিনি নিজের দায় অস্বীকার করে দোষ অন্যদের ঘাড়ে চাপাতে চান কেন? কেন তার অজ্ঞতা, মূর্খতা এবং দায়িত্বহীনতার দায় এখন সেনাপ্রধান নেবেন? গণ সার্বভৌমত্বের রাজনৈতিক ও আইনি যুক্তি তো সেনাপ্রধানের জানার কথা না। সেটা আসিফ নজরুলেরই জানার কথা। কোন বিদেশি শক্তিরও চাপ ছিল না।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, স্রেফ ক্ষমতার লোভে আসিফ নজরুল ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে গণঅভ্যুত্থানকে বিসর্জন দিয়ে সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি হওয়ার জন্যই ভুল পথে বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছেন। এই দায় একান্তই আসিফ নজরুলের। এই দায় আর কারো না।
এখন আসিফ নজরুল বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরাও উপস্থিত ছিলেন। তার মানে তিনি এখন তাদেরকেও তার দোষের দায়ভার চাপিয়ে দিচ্ছেন। দাবি করছেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বা সংবিধানের অধীনে সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার গঠনে তাদেরও সায় ছিল। তাই কি আসলে? মাহফুজ, নাহিদ, আসিফ? কিন্তু কেউ না বলুক, তিনি শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বাতিল করবার কথা বললেন না কেন? কেন তিনি গণ সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন তুললেন না? বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানও যে ধারণা মানে বা অন্তত স্বীকার করে? এখন আবার জনগণকে বিভ্রান্ত করারা জন্য আসিফ নজরুল ‘বিপ্লব বিপ্লব’ বকোয়াজি শুরু করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন বটে, কিন্তু আমরা তো বিভ্রান্তি এড়াবার জন্য একবারও বিপ্লবের কথা বলি নি? তার কাছ থেকেই আইন ও রাজনীতির সম্বন্ধ বিচার বা পর্যালোচনা সবাই আশা করেছিল। তিনি আমাদের আশা ভঙ্গ করেছেন।
ভোরের আকাশ/রন