প্রতিষ্ঠার সাত বছর অতিক্রান্ত হলেও নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারেনি যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। এখানে যারা বিনিয়োগ করেছেন হতাশায় ঘিরে ফেলেছে তাদের। অনেকেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে চলে গেছেন। বিনিয়োগকারীদের দাবি, সরকারের প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধা না মেলায় তারা নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। তবে ব্যবসায়ী নেতাদের দাবি, সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশের অন্যতম আইটি হাব হয়ে উঠবে দেশের প্রথম এই আইসিটি পার্কটি।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়ন, দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি, জ্ঞানভিত্তিক শিল্প স্থাপন, উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যশোরে গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম আইসিটি পার্ক। উদ্যোক্তাদের আশানিত করা হয় সরকারি সহযোগিতায় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কটি হবে বাংলাদেশের সিলিকন ভ্যালি। মেধাভিত্তিক অর্থনীতির দ্বার উন্মোচিত হবে। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। আসেনি বিদেশি বিনিয়োগ। বর্তমান বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগ প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল মার্কেটিং, কল সেন্টার পরিচালনা ও গ্রাফিকস ডিজাইনিংয়ের কাজ করেন। কিন্তু সরকারের প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধা না মেলায় সে কাজেও আশানুরূপ সফলতা নেই। যে কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ ইতোমধ্যে পার্কটি ছেড়েছেন। এখনও যারা আছেন তারা হতাশায় ভুগছেন।
বিনিয়োগকারী উৎসব টেকনোলজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজয় দত্ত বলেন, অনেক সম্ভাবনা নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করছিলো। আমরা আশা করেছিলাম এ প্রতিষ্ঠানটি আইটি হাব হবে। শিক্ষার্থীরা এখানে শিখবে, দক্ষ হবে এবং অর্জিত দক্ষতা দিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবে। পাশাপাশি আমাদের ব্যবসা বাড়বে। কিন্তু গত সাত বছরে তার কিছুই হয়নি। তিনি বলেন, এ আইটি পার্কের সফলতার জন্য কী কী প্রয়োজন- তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সরকার আমাদের সঙ্গে চোর পুলিশ খেলা খেলেছে। ফলে অনেক উদ্যোক্তা হতাশ হয়ে আইটি পার্ক ছেড়েছে।
বিনিয়োগকারী অংশ আইটির সিইও মহিদুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালে যখন যশোর আইটি পার্ক উদ্বোধন হয় তখন বলা হয়েছিল পাঁচ বছরের মধ্যে এটাকে সিলিকন ভ্যালিতে রূপান্তর করা হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং ওইসময় যারা বিনিয়োগ করেছিলেন তাদের ১৫ জনের ইতোমধ্যে চলে গেছেন। নতুন নতুন কিছু কোম্পানি আসলেও তারাও বিভিন্ন সময় হতাশ হয়ে চলে গেছে। মূলত সরকারিভাবে যে পৃষ্ঠপোষকতা করার কথা ছিল- সেগুলো করা হয়নি বলেই ব্যবসায়বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। আমি নিজেও হতাশ। দেখছি দেখছি বলে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু জনবলের অভাবে সেটা হচ্ছে না।
বিনিয়োগকারী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, আমাদের বাইরের প্রতিষ্ঠান ছিল। এখানে এসেছিলাম প্রতিষ্ঠানের কলবর বৃদ্ধি পাবে সেই আশায়। এখানে আসার পর আমরা বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। বিশেষ করে বরাদ্দকৃত ফ্লোরের অতিরিক্ত ভাড়া ও স্বাভাবিকের থেকেও বেশি বিদ্যুৎ বিল, দক্ষ কর্মী সংকট আমাদের বিকশিত হতে দেয়নি। অথচ সরকারের থেকে এসব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করার কথা ছিল।
ইভেন্টটেক’র কো-ফাউন্ডার নাহিদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গল শিল্পাঞ্চলে যেসব সুবিধা থাকে সেগুলো আমাদের দেয়ার অঙ্গীকার করেছিল সরকার। কিন্তু তৃতীয় পক্ষকে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়ায় সরকারি সুবিধা প্রাপ্তি এবং আমাদের কথাগুলো সরকারের কাছে পৌঁছানোর বিষয়টি পূর্ণাঙ্গতা পায়নি। কলেজে উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকার যদি তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে তাহলে যশোর আইটি পার্ককে ঘিরে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা সম্ভব। তবে ব্যবসায়ী নেতাদের দাবি, সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশের অন্যতম আইটি হাব হয়ে উঠবে দেশের প্রথম এই আইসিটি পার্কটি।
যশোর সফওয়্যার ও টেকনোলজি পার্ক ইনভেস্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহাজালাল বলেন, উদ্যোক্তাতারা যে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন- তা বাস্তবায়ন করতে হলে বিদ্যুৎসহ অন্যান্য ব্যয় কমাতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজনভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। একাডেমির সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির সমন্বয়ে ঘটাতে হবে। একইসঙ্গে সরকারি উদ্যোগে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মার্কেটের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের মেলবন্ধন করে দিতে হবে। এসব বিষয়ে আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অবহিত করেছি। সরকার সাড়া দিলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের উদ্বোধন করা হয়। যশোর শহরের নাজির শঙ্করপুর এলাকায় ১২ একরের কিছু বেশি জমিতে পার্কটি করতে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকা।
ভোরের আকাশ/রন