প্রশাসনে কাজের গতি বাড়লে উন্নয়ন কাজ গতি পায় এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে প্রশাসনে দেখা দিয়েছে কার্যক্রমে স্থবিরতা। অন্তর্বর্তী সরকারের আড়াই মাসেও প্রশাসনে এই কাজের স্থবিরতা বেড়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে অনেকটাই জটিলতা ও ধীরগতি। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন কাজ। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সেবা নিতে আসা মানুষ। গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে এ মর্মে প্রকাশিত খবরে সে কথাই তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রশাসনে কাজে স্থবিরতা নেমে আসার পেছনে নানা সমস্যা কাজ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখন বদলি আতঙ্কে রয়েছেন। তারা এই বদলি আতঙ্কের কারণে কাজে মনোযোগী হতে পারছেন না। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া অন্তত ১০০ কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল হয়েছে। পাশাপাশি অবসরে থাকা আট বঞ্চিত কর্মকর্তাকে সচিব পদে চুক্তিতে নিয়োগের পর তাদের সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সচিবদের ওএসডি, চুক্তি বাতিল ও অবসরে পাঠানো হয়েছে। মাঠ প্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনারসহ সব জেলায় ডিসি পরিবর্তন করা হয়েছে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব পদে পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সচিব পদে এসেছে নতুন মুখ। আবার অনেক বঞ্চিত ও দক্ষ কর্মকর্তার যথাযথ পদায়ন হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগ দিয়েও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ আছে কর্মরতদের। এতে প্রশাসনে ভীতি ও সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করছে বলে মনে করেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনার ঘাটতি দেখছেন তারা। তারা বলছেন, কিছু নিয়োগ-বদলি-পদোন্নতির ক্ষেত্রে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে প্রশাসনে ভীতি কাজ করছে। দীর্ঘ বঞ্চনার পর যুগ্ম সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া ১৩৩ জনের মধ্যে ৬৫ জনকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। ৪৫ জন পূর্বের পদে রয়েছেন। এসব দপ্তরে দায়িত্ব পাওয়া অতিরিক্ত সচিবরা তাদের রুটিন কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। তারা কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। বাকিদের পদায়নের ফাইল ঘুরছে। বঞ্চিত ২০৬ অতিরিক্ত সচিবের মধ্য থেকে চারজনকে সচিব করা হয়েছে। সচিবালয়ে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে কর্মকর্তাদের মধ্যে বদলি নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা নিয়োগ ও পদোন্নতি পেয়েছেন, তাদের মধ্যে এই আতঙ্ক বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে মন্ত্রণালয়ের কাজে এসেছে ধীরগতি। এছাড়াও বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে এখনও সাবেক সরকারের সময়কালে নিযুক্ত সচিব রয়েছেন। ওএসডি বা অবসরে যেতে হবে কিনা— এ নিয়ে তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ওয়াক্তী লীগ সরকারের আমলে সচিব পদ না পেয়ে বঞ্চিত অবস্থায় অবসরে গিয়েছেন তারা। দীর্ঘদিন পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে তাদের আবার চুক্তিতে সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ায় সাবেক সরকারের আমলের বর্তমান কর্মকর্তারা তাদের স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারছেন না। যে কারণে কাজের গতি কমে গিয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাঠ পর্যায়ের ছোটখাটো উন্নয়নমূলক কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। এমনকি বিভিন্ন ভাতাও সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে না। সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, উচ্চতর পদগুলোতে যারা আছেন, তাদের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। আবার যাদের বসানো হচ্ছে, তাদের মধ্যেও স্থিরতা নেই।
প্রশাসনে স্থবিরতা বিরাজ করছে— একথা তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রশাসনে স্থবিরতা তো আছে। এটা আমরা লক্ষ্য করছি। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে অসহযোগিতা পাচ্ছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থবিরতা কেটে যাবে। তখন কাজের গতি আরও বাড়বে।
আমরা প্রশাসনে কাজের গতি দেখতে চাই। কারণ প্রশাসন স্থবির হলে উন্নয়ন কাজ থেমে যাবে। কাজেই এক্ষেত্রে সরকারকে নজরদারি জোরদার করতে হবে। প্রশাসনে কাজের গতি বাড়াতে হবে। আমরা আশা করি, প্রশাসনে কাজের গতি বাড়াতে দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। আর কর্মকর্তাদের মনে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে তা কাটিয়ে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া হবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।
ভোরের আকাশ/রন