ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের পুঁজিবাজারেও টানা দর পতন অব্যাহত রয়েছে। এদিকে সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসেই বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার মূলধন। এ নিয়ে গত দুই মাসে বাজার ৪২ হাজার ৫২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার মূলধন হারিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার এক দিনেই ডিএসই পাঁচ হাজার ২৪৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকার মূলধন হারিয়েছে। আগের দিন বাজার মূলধন কমেছিল পাঁচ হাজার ৪৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। টানা দর পতনে বিনিয়োগকারী ও মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উদ্বেগ, আতঙ্ক ও হতাশা বাড়ছে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালের ধস ও পরবর্তী ১৪ বছরের নিম্নমুখী ধারায় পুঁজিবাজারের সব শ্রেণির বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত। এমন অবস্থায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের অবসান ঘটলে বিনিয়োগকারীরা নতুন আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তারা আশা করেছিলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া নতুন পরিবেশে পুঁজিবাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে। কিন্তু ঘটছে তার উল্টো।
গত রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দরপতনে সূচক কমেছে ১৪৯ পয়েন্ট, যা ছিল গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত সোমবার পতন হয়েছে আরো প্রায় ৬৭ পয়েন্ট। এ নিয়ে ১২ আগস্ট থেকে ডিএসইর সূচক লাপাত্তা হয়ে গেল ১১৪৭ পয়েন্ট। পতনের পর ডিএসইর প্রধান সূচক নেমে গেছে ৪৮৯৮ পয়েন্টে, যা গত প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৪৮৬৬ পয়েন্ট। অর্থাৎ গত তিন বছর ১১ মাসের মধ্যে বর্তমানে শেয়ারবাজারের সূচক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।
অব্যাহত দর পতনের প্রতিবাদে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত সোমবার সকালে রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরাতন ভবনের সামনে সংগঠনটির নেতারাসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন।
পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি)। এই কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, বাজার পতনের নেপথ্য কারণ বের করে প্রতিবেদন দেবে চার সদস্যের কমিটি। এই কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির পরিচালক মোহাম্মদ শামছুর রহমান, উপপরিচালক মোহাম্মদ ওরাইছুল হাসান রিফাত, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাজী মিনহাজ উদ্দিন।
ভোরের আকাশ/রন