logo
আপডেট : ৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১৩:০৭
জেনেভা ক্যাম্পের ক্ষত এবার সারাতেই হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

জেনেভা ক্যাম্পের ক্ষত এবার সারাতেই হবে

রাজধানী ঢাকার অনেক সমস্যা আছে। যানজট, পরিবেশ দূষণ, উচ্চ শব্দ আর জনসংখ্যার ঘনত্ব মূল সমস্যা। এই শহরের গায়ে আরেক ক্ষত মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প। যুগের পর যুগ এই ক্যাম্প অপরাধের সূতিকাগার হয়ে আছে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা—এগুলোর সবই হয় এখানে। অস্ত্রের ঝনঝনানি তো আছেই। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালায়। তবে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয় না। এবার সেখানে সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে। সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে দুটি বিদেশি অস্ত্রসহ সাতজনকে আটক করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেনাবাহিনী ২৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডেয়ারিং টাইগারস ইউনিট ও মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে তাদের আটক করা হয়। এ সময় দুটি বিদেশি রিভলভার, ২০ রাউন্ড গুলি, তিনটি রামদা (দেশীয় অস্ত্র) ও একটি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। মাদক সাম্রাজ্য ও আধিপত্যকে কেন্দ্র করে জেনেভা ক্যাম্পে গত কয়েকদিনে একাধিক সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছে। অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া এ ক্যাম্পে প্রায় প্রতিদিনই মাদক কারবারি ও বিভিন্ন অপরাধীদের মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সাড়াশি অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, জেনেভা ক্যাম্পের মাদকসম্রাট মুনিয়া সোহেল ক্যাম্পে অবস্থান করছেন—এমন খবর পেয়ে তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে মুনিয়া সোহেলকে আটক করা যায়নি। তার ৭ সহযোগীকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। মুনিয়া সোহেলের আস্তানায় অভিযানের সময় দুটি বিদেশি রিভলভার উদ্ধার করেছে তারা। মোহাম্মদপুরকে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত না করা পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানায় সেনাবাহিনী। আইএসপিআর জানিয়েছে, ২৭ অক্টোবর দিন ও রাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র ব্রিগেড ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এতে খুনের আসামিসহ ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা রয়েছে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড রোধ ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে দেশব্যাপী পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সন্ত্রাস দমন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সেনাবাহিনীর অবস্থান কঠোর থাকবে।

কয়েকদিন আগে জেনেভা ক্যাম্প নিয়ে ভোরের আকাশে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, জেনেভা ক্যাম্প এখন আতঙ্কের নাম। প্রায় প্রতিদিনই এই ক্যাম্পে বিবদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গত আড়াই মাসে ক্যাম্পে শতাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। এই ক্যাম্প ঘিরে মোহাম্মদপুর এলাকা এখন পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসের জনপদে। ছিনতাই, ডাকাতি থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতিবাদে মানববন্ধন এবং থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয়রা। ক্যাম্পের সন্ত্রাসীদের হাতে পুলিশের লুট করা অস্ত্রও দেখা গেছে। একটি কথা না বললেই নয়, পুলিশ এর আগেও জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। কেন হয়নি—এই প্রশ্নের উত্তর সবারই জানা। এটা নিয়ে আলোচনা করা নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু এবার আমরা খুবই আশাবাদী। কারণ সেনাবাহিনী মাঠে আছে।

 

ভোরের আকাশ/রন