তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানিতে পক্ষভুক্ত হলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে পক্ষভুক্ত করে গতকাল মঙ্গলবার আদেশ দিয়েছেন। আজ বুধবার এই মামলায় শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয় ২০১১ সালের ৩০ জুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধন করে যা পঞ্চদশ সংশোধনী নামে পরিচিত। এই সংশোধনীতে একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন, শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, সংবিধান থেকে গণভোট ব্যবস্থা বাতিল, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ অবৈধ ঘোষণা, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা ইত্যাদি বিষয় সংযুক্ত করা হয়।
এই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের জন্য সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট প্রাথমিক শুনানি নিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনী কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে গত ১৯ আগস্ট রুল জারি করেন। ওই রুলের ওপর আজ শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। গত সোমবার এই মামলায় পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। গতকাল মঙ্গলবার এই আবেদনের ওপর শুনানি হয়। ফখরুলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে আদেশ দেন। আদেশের পর অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, এই আদেশের ফলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানিতে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারবেন।
মির্জা ফখরুলের আবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন সব বিরোধী দলের দাবি মেনে নিয়ে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। পঞ্চম জাতীয় সংসদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় এটি সংসদে পাস করা সম্ভব হয়নি। সে জন্য ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর জনগণের দাবি মেনে নিয়ে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। তবে এই সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে ফেরাতে বিএনপি প্রায় দেড় দশক ধরে রাজপথে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এই মামলায় ইন্টারভেনর হয়ে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ চাচ্ছে বিএনপি।
ভোরের আকাশ/রন