আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখা নগরবাসীর এখনও শেষ ভরসা সে লাল, হলুদ, আর সবুজ বাতি। যানজট নিরসনে সরকারের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে নেই ডিজিটাল ট্রাফিক ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, আধুনিকতার জন্য দেশের এখনও উপযুক্ত হয়নি বিভিন্ন নগরীর সড়কগুলো। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজট নিরসনে আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থার বিকল্প নেই। প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষের এ ঢাকা নগরীতে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ২১ লাখের বেশি। আর অনিবন্ধিত প্রায় ২৩ লাখ রিকশার পাশাপাশি সড়কে নতুন বোঝা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এতে ব্যস্ত সড়কে আইন মানা কিংবা না মানার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনাই যেন বড় চ্যালেঞ্জ। খালি চোখে জঞ্জাল সড়ক মনে হলেও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। সড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরার লেন্সে। সেকেন্ডের মধ্যে চলন্ত গাড়ির নম্বর শনাক্ত করে দিচ্ছে বিস্তারিত তথ্য। নিয়ম অমান্য করে রাস্তা ব্যবহার করা ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করা যাবে নিমিষের মধ্যেই। আইন ভাঙলেই জরিমানা চলে যাবে যার যার অ্যাকাউন্টে। সড়কের এ বেহাল দশা রুখতে এমন দেশীয় প্রযুক্তি নিয়ে অপেক্ষায় সিগমাইন্ড এআই।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু আনাস শুভম বলেন, বাংলাদেশে তৈরি এ প্রযুক্তি বাংলাদেশের সড়ক ও যানবাহন নিয়েই সবচেয়ে ভালো সেবা দিতে পারবে। কারণ, দেশের সড়ক-মহাসড়কের ওপর জরিপ করেই এটি তৈরি করা হয়েছে। এখানে বিদেশি কোনো প্রযুক্তি বসাতে গেলে যেমন খরচ অনেক বেশি পড়বে, তেমনি সেগুলোকে দেশের সিস্টেমের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করতে হবে। এমনই এক প্রযুক্তিতে ভরসা করে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। কিন্তু বিফলে গেছে সে উদ্যোগ, সঙ্গে বিপুল বিনিয়োগ। নগরবাসীকে স্বস্তির স্বপ্ন দেখানো ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম অবশ্য দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। রাজধানী ও তার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কি এ যানজট থেকে সহসাই মুক্তি মিলছে না রাজধানীবাসীর?
যানজট নিরসন করে নাগরিক জীবনে স্বস্তি দিতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল। সড়ক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দলটি গুরুত্ব দিচ্ছে ট্রাফিক সিগন্যালের ওপর। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আপাতত রাজধানীর ২২টি মোড়ে নতুন করে ফিরবে আগের সেই ‘ট্রাফিক বাতি’। এখন প্রশ্ন হলো, ডিজিটাল এ দেশে ট্রাফিক ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় হবে কবে?
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান অবশ্য বলছেন, পৃথিবীর কোনো দেশের শহরেই এত সংস্করণের যানবাহন চলে না। সেদিক থেকে আমাদের ঢাকা শহরের অবস্থা অনেকটা আলাদা। আমরা সিগন্যাল দেখে গাড়ি চালানোতে অভ্যস্ত না। চালক ও পথচারীরা যখন এর ব্যবহার শিখবে, তখন আধুনিক প্রযুক্তি চাপানোর পরিকল্পনা করেছি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজট নিরসনে ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর দখলদারি মানসিকতায় সড়কে শৃঙ্খলা অনুপস্থিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, ঢাকায় ৩৩৯টি পয়েন্টে চার হাজার ট্রাফিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালনের পরও প্রতি বছর অপচয় হয় প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
ভোরের আকাশ/রন