রাজনীতিতে পৌড় খাওয়া এক তরুণ নুরুল হক নুর। এক সময় যুক্ত ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছিলেন সামনের সারিতে। তখনই তার পরিচিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। হয়ে ওঠেন তরুণদের আইকন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। পরে গঠন করেন গণঅধিকার পরিষদ নামে একটি দল। বর্তমানে তিনি এই দলের সভাপতি। রাজপথের বিরোধী দল হিসেবে তিনি তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করতেন। বেশ কয়েকবার কারাগারেও যেতে হয়েছে তাকে। বিরোধী দল হিসেবে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে তার গড়ে ওঠে সখ্য। তিনি সব সময় রাজপথে সরব ছিলেন। এবার তিনি সেই আন্দোলন ও কারা নির্যাতনের ফল পেতে চলেছেন বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন। কারণ এখন মাঠের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। এই দলের সঙ্গে নুরের দল গণঅধিকার পরিষদ জোট করে নির্বাচনে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিএনপির মনোনয়ন তার নিশ্চিত। আর মনোনয়ন পেলে তার বিজয়ও নিশ্চিত।
গত ২২ অক্টোবর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী চিঠি দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের পটুয়াখালী-৩ আসনে (গলাচিপা-দশমিনা) নুরুল হককে জনসংযোগ ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার সংসদীয় এলাকায় (পটুয়াখালী-৩, গলাচিপা-দশমিনা) জনসংযোগ ও তার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য আপনাদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকার থানা, উপজেলা বা পৌরসভায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিষয়টি অবহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতে আপনাদের অনুরোধ করা হচ্ছে। এই আদেশ অতীব জরুরি।
জানা গেছে, নুরুল হক নুরের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নে। এই আসন থেকে তার নির্বাচন করার গুঞ্জন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এই চিঠি প্রকাশ পাওয়ার পর পটুয়াখালীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। এই আসনে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাম মাওলা রনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ২০১৮ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তিনি আবারও সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে আলোচনা আছে।
চিঠি প্রসঙ্গে গোলাম মাওলা রনি বলেন, আসলে বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। এটা নিয়ে আমার কোনো প্রতিক্রিয়াও নেই। রাজনীতিতে আওয়ামী লীগে যেমন শেখ হাসিনা অল-ইন-অল (সর্বেসর্ব); তেমনি বিএনপিতে তারেক রহমান সাহেবের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এর বাইরে কিছু হবে না।
নুরুল হক এখন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা ফখরুল সাহেব দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে ভিপি নুরের অফিসে গিয়ে দেখা করে আসেন। হাসপাতালে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে আসেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল মঈন খান থেকে শুরু করে সব সিনিয়র নেতা। উনি (তারেক রহমান সাহেব) যদি ওখানে (পটুয়াখালী-৩) মনোনয়ন দিতে চান কিংবা বরিশাল বিভাগে সমন্বয়ক হিসেবে নুরকে দায়িত্ব দিতে চান, এখন এটার সাথে উনার কী আলাপ হয়েছে বা কী সিদ্ধান্ত, এটা আসলে দলের কারও প্রশ্ন করার মতো প্রয়োজনও নেই, দরকারও নেই, কারও সাহসও নেই।