অন্যান্য ইস্যু থেকে সরে এসে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের দিকে নজর দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছে। আমরা আশা করেছিলাম যে, তারা (সরকার) এটি গঠনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করবে। যদিও আমরা এটিকে বড় ইস্যু মনে করি না। আমরা আশা করি কমিটি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)-এর ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আশা করবো যে, তারা (সরকার) এই সময়টার সদ্ব্যবহার করবেন। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন, সেই নির্বাচনে যেন জনগণ ভোট দিতে পারে, নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে পারে। এটা আমাদের প্রত্যাশা। এটাই জনগণ চায়। তিনি বলেন, আমরা জানি, এটা খুব অল্প সময়, এখনও তিন মাস যায়নি। ১৫-১৬ বছরের জঞ্জাল, এই সময়ের মধ্যে দেশে গণতন্ত্রকে তিলে তিলে হত্যা করা হয়েছে। অর্থনীতিকে মুচড়ে দেওয়া হয়েছে। ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে এই আওয়ামী লীগ সরকার। অর্থনীতিকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, এখনও পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যে চরিত্র তৈরি করেছে, এর বাইরে গিয়ে কাউকে কাজ করতে দেখা যায় না- ঘুষ খায় না, স্বজনপ্রীতি করে না এমন লোক। শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী ও প্রশাসনসহ সব জায়গায় দুর্নীতি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। যিনি এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তিনি পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত। তিনি নিজেও বলেছেন, তার রাজনৈতিক ইচ্ছে নেই। আপনারা দায়িত্ব দিয়েছেন সঠিকভাবে পালন করুন। এ সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অনুরোধ রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, এদেশের মানুষ আপনাকে সম্মান দিয়েছে, দিতে চায়। আপনার জায়গা যেন নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, গণতন্ত্র হচ্ছে একটা সংস্কৃতি। এটা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। গণতন্ত্রকে চর্চা করতে হয়। আমাদের দেশে পাকিস্তান আমল থেকেই গণতন্ত্রের চর্চাটা হয়নি। যখনই গণতন্ত্র হয়েছে তখনই মার্শাল ল হয়েছে এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার, যে পার্টিটা সবচেয়ে বেশি গণতন্ত্রের কথা বলতো, আওয়ামী লীগ- তারাই ৭২ সাল থেকে গণতন্ত্রকে গলা টিপে ধরেছে। তারপর থেকে যখন সুযোগ হয়েছে তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।
রাজনৈতিক সংগ্রাম কখনও শেষ হয় না জানিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, রাজনৈতিক সংগ্রাম চলতে থাকবে। সংস্কার কার্যক্রম তেমনি চলমান থাকবে। আমরা প্রত্যাশা করবো, সরকার দ্রুত সংস্কার কমিশন থেকে রিপোর্ট নিয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরবে এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সব সংস্কার অবশ্যই জনগণের দ্বারা স্বীকৃত হতে হবে এবং জনগণ সত্য মনে নেবে। জনগণের মতামত ছাড়া কোনো সংস্কার দীর্ঘায়িত হবে না। ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে কোনো কিছু সফল হয় না। সুতরাং, এমন কিছু করা যাবে না, যেটা আমাদের দেশের সঙ্গে মানুষের কালচারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়। তিনি বলেন, আমরা একটা জটিল সময় পার করছি। এ ব্যাপারে আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে। অনেক কিছু সামনে আসবে। একটা কথা সবসময় মনে রাখতে হবে আমাদের, চক্রান্ত কখনো শেষ হয় না। মূল লোকগুলো চলে গেলেও কিন্তু ফ্যাসিস্টি রয়ে গেছে এবং এখনও তারা কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, আমরা সচেতন, পরিবর্তন ও সংস্কার যুগপৎ যদি না হয়, তাহলে রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এই জিনিসগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। আমি মনে করি, আমরা অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছি। এই মুহূর্তে শুধুমাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো হঠকারিতার উদ্যোগে যদি কোনো বড় ভুল হয়ে যায়, তাহলে আমরা রাষ্ট্র হিসেবে বড় বিপদে পড়ে যাব।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)-এর চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে এ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ।
ভোরের আকাশ/রণ