দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একমাত্র কাজ হলো দুর্নীতি ঠেকানো। সংস্থাটি সেই কাজই করছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মকর্তা যখন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তখন আশ্চর্য হওয়া ছাড়া আর কি-ই বা করার থাকে। তেমনই কাণ্ড ঘটিয়েছেন সদ্য সাবেক কমিশনার জহুরুল হক। তিনি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতেন স্ত্রী ও সন্তানের যাতায়াতের জন্য।
জানা গেছে, সাড়ে তিন বছর আগে বেআইনিভাবে দুদক থেকে গাড়িটি বরাদ্দ নেন জহুরুল হক। চালকের বেতন ও জ্বালানি—সবই নিতেন দুদক থেকে। যদিও সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগে আগে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক, কিন্তু জহুরুল হকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা।
গত মঙ্গলবার দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা. আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাড়িটি বুঝিয়ে দেননি জহুরুল হক। চালকসহ গাড়িটি আরও এক মাস পারিবারিক কাজে ব্যবহারের খায়েশ রয়েছে তার।
সূত্র বলছে, জহুরুল হকের নিজের ব্যবহারের জন্য একটি গাড়ি বরাদ্দ ছিল। ২০২১ সালের এপ্রিলে তিনি চালকসহ আরেকটি গাড়ি সার্বক্ষণিক ব্যবহার করার জন্য বরাদ্দ নেন। সেই গাড়িতে তার স্ত্রী ও ছেলে অফিসে যাতায়াত করতেন। গাড়িটির চালক মো. সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, সাড়ে তিন বছর ধরে গাড়িটি চালাচ্ছি। গাড়িতে স্যারের স্ত্রী ও ছেলে অফিসে যাওয়া-আসা করেন।
দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, দুদকে গাড়ির তীব্র সংকট রয়েছে। উপ-পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তারাও একটি করে গাড়ি পান না। তারা শেয়ার করে গাড়ি ব্যবহার করেন। জহুরুল হক পদত্যাগ করার পর গাড়িটি ফেরত চাওয়া হয়েছিল। তখন কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে তিনি বলেছেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা জুডিশিয়াল কর্মকর্তাদের কোনো সহযোগিতা করেন না। তিনি মৌখিকভাবে গাড়িটি আরও এক মাস ব্যবহার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
চালকসহ গাড়ি বরাদ্দের জন্য দুদকে আবেদন করেছিলেন তখনকার কমিশনার জহুরুল হকের একান্ত সচিব। আবেদনে বলা হয়, জহুরুল হক ধানমণ্ডির সরকারি বাংলোয় বসবাস করেন। তিনি তার অনুকূলে চালকসহ অতিরিক্ত একটি গাড়ি বরাদ্দ চান। গাড়ি ব্যবহার বাবদ সরকারি ফি তিনি পরিশোধ করবেন। তার বাসভবনে চালকের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। গাড়ি বরাদ্দ দিয়ে দুদকের চিঠিতে বলা হয়, কমিশনার জহুরুল হকের ইচ্ছা অনুযায়ী চালক সাদ্দাম হোসেন ও ঢাকা মেট্রো-গ-৪২-৭৬৩০ গাড়িটি সার্বক্ষণিক ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দেওয়া হলো। এ বিষয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) সমীর বিশ্বাস বলেন, কর্মকর্তা নিজে ব্যবহারের জন্য গাড়ি পাবেন। তবে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। জহুরুল হকের গাড়ি বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা পরিবহন বিভাগ দেখে। এ বিষয়ে তারা বলতে পারবে। গাড়িটি বরাদ্দ দিয়েছিলেন পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল। বারবার ফোন ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফোনকল ও বার্তায়ও সাড়া দেননি জহুরুল হক।
ভোরের আকাশ/রন