logo
আপডেট : ২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:২৫
নিষিদ্ধের খবর কেউ জানে, কেউ জানে না
হেলাল সাজওয়াল

নিষিদ্ধের খবর কেউ জানে, কেউ জানে না

পলিব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ২২ বছর আগে। কিন্তু সেটাকে ঠেকানো যায়নি। অবশেষে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে সেই পলিব্যাগ আবারও নিষিদ্ধ করেছে। গতকাল (১ নভেম্বর) সারা দেশের বাজারে এই ব্যাগ নিষিদ্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তব চিত্র উল্টো। সব জায়গাতেই আগের মতোই এটি বিক্রি ও ব্যবহার হচ্ছে। এই নিষিদ্ধের খবর অনেকে জানেন; আবার অনেকে জানেন না। যারা জানেন, তারা বলছেন, বিকল্প না থাকায় তারা এটা ব্যবহার করছেন। উৎপাদন বন্ধ না হলে এটার ব্যবহার বন্ধ হবে না। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, আগামীকাল রোববার থেকে কারাখানায় তারা অভিযান পরিচালনা করবেন। তখন হয়তো এর প্রভাব পড়বে। পর্যায়ক্রমে এটার জিরো ব্যবহার সম্ভব।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগের মতোই পলিথিন ব্যাগে সব ধরনের পণ্য দেয়া হয়েছে। কয়েকটি বাজার কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে তারা জানান, পলিথিন নিষেধাজ্ঞার কথা তারা এখনও জানেন না। তবে কেউ কেউ জানিয়েছেন, তারা নিষেধাজ্ঞার কথা শুনেছেন। তবে পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ তারা পাননি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সকল কাঁচাবাজারে ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়। এর পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ। কিন্তু রাজধানীর বেশিরভাগ বাজারে ক্রেতাদের ক্রয় করা পণ্য পলিথিন ব্যাগে বহন করতে দেখা যায়। এদিকে পলিথিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে গতকাল সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও আশপাশের বিভিন্ন কাঁচাবাজারে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। মনিটরিং কমিটির সদস্যরা পলিথিন ব্যবহার না করে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে দোকানিদের পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং পরবর্তী অভিযানে পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। গতকাল দুপুরে সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজারে দেখা যায়; সব ধরনের পন্য পলিথিন ব্যাগে করে বিক্রি করছে দোকানিরা। জনৈক সবজি বিক্রেতা এই প্রতিবেদককে জানান, মার্কেটের সবাই পলিথিন ব্যবহার করছে; এখনও তো কোনো অভিযান আসেনি। ওই বাজারে সবজি কিনতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা স্বরূপ বলেন, পলিথিনের ব্যাগ বন্ধের কথা আমরা জানি; তবে সহজ লভ্যতা এবং বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে আসা বাড়তি ঝামেলা। তিনি বলেন, যখন সরকার পলিথিন সমূলে উৎপাটন করতে পারবে তখন হয়তো আমরাও বিকল্প চিন্তা করবো। মিরপুর ৬ নম্বর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী মো. হান্নান বলেন, আজও মার্কেটের প্রায় সবাই পলি ব্যাগেই পণ্য দিচ্ছে। যদিও মার্কেট কমিটি এবং পরিবেশ অধিদপ্তার আগে থেকেই আমাদের মার্কেটে আগে থেকেই প্রচারণা চালিয়ে আসছে। তিনি বলেন, বাজারগুলোতে পলিথিন প্রতিরোধ কমিটি থাকতে হবে। প্রশাসনের প্রতিনিধিত্বে স্থানীয় সমন্বয়ক রাখতে হবে কমিটিতে। তাছাড়া সরকার যদি কাপড়ের বা পাটের ব্যাগ আমাদের সরবরাহ না করে আমরা কাপড়ের ব্যাগ কোথায় পাব। ডেমরা থানাধীন কোনাপাড়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী বরাত হোসেন বলেন, পলি ব্যাগ বন্ধের কথা আমরা জানি না। আমরা সব সময় ক্রেতাদের পণ্য কাগজের টিস্যু ব্যাগ দিয়ে থাকি। আমরা পলি ব্যাগ ব্যবহার করতে চাই না, পলিথিন পরিবেশের ক্ষতি করে। সরকার পাটের ব্যাগ সরবরাহ করলে আমরাও ক্রেতাদের পাটের ব্যাগেই বিক্রিত পণ্য দিব। পাইকারি বাজার থেকেই সব পণ্য পলিব্যাগে আসে। আমাদের কিছু করার নেই। আপনারা পলিথিনের কারখানা বন্ধ করুন আগে। এছাড়া যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, দয়াগঞ্জ, আরকে মিশন রোড, ফকিরাপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই পলিথিন ব্যাগে পণ্য বহন করছে। অধিকাংশ দোকানি জানান, তারা এরই মধ্যে বাজারের বিভিন্ন জায়গায় পলিথিন নিষিদ্ধেও বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। কিন্তু কাস্টমাররা পণ্য বহন করার জন্য বাড়ি থেকে কোনো কিছু নিয়ে আসছে না। যে কারণে ইচ্ছা না থাকলেও ক্রেতাদের সুবিধা বিবেচনা করে পলিথিন ব্যাগে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হই। তবে কাঁচাবাজারে কিছু দোকানিকে কাগজের ব্যাগে এবং টিস্যু ব্যাগে পণ্য পরিবেশন করতে দেখা গেছে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পাটের তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা খুবই সামান্য। ফকিরাপুল বাজারের এক মাছ বিক্রেতা বলেন, মাছে পানি থাকে তাই কাগজ কিংবা কাপড়ের ব্যাগে ক্রেতারা নিতে চায় না; কার্যকরী কোন বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা খুব সমস্যায় ফেলছে।

পরিবেশ মন্ত্রণালয় গঠিত মনিটরিং টিমের আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণ) তপন কুমার বিশ^াস গণমাধ্যমকে জানান, পরিবেশ রক্ষায় ৩ নভেম্বর থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে সব জেলা প্রশাসক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ১ ও ২ নভেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মোবাইল কোর্ট বন্ধ থাকলেও মনিটরিং কার্যক্রম চলমান থাকবে। তিনি নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকার ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে এবং ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। নিষিদ্ধ পলিথিন ও পলিপ্রপিলিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুত, পরিবহণ, বিপণন ও ব্যবহার বন্ধের কার্যক্রম কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হয়। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর পলিথিন শপিং ব্যাগের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় পলিথিন ব্যাগ বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর বিধান অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০২ সালের ১ মার্চ সরকার বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেই সময় পরিবেশ অধিদপ্তর শর্তসাপেক্ষে সব রকমের পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, মজুদ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে।

 

ভোরের আকাশ/রন