বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয়, বিশেষত ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর জন্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত প্রতিটি বস্তু থেকেই কিছু অপ্রয়োজনীয় উচ্ছিষ্ট অংশের উদ্ভব হয় যা ব্যবহারের অনুপযোগী, মূল্যহীন ও ত্রুটিপূর্ণ। এগুলোকে আমরা বর্জ্য পদার্থ কিংবা ময়লা নামেই আখ্যায়িত করে থাকি। এ বর্জ্য বিভিন্ন রকমের হতে পারে, যেমন গৃহস্থালি বর্জ্য, বাণিজ্যিক বর্জ্য এবং শিল্প বর্জ্য। বর্জ্য পদার্থকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে- একটি মিউনিসিপ্যাল কঠিন বর্জ্য, সাধারণত শহর বা পৌর এলাকায় উৎপন্ন গৃহস্থালি, বাণিজ্যিক এবং কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বর্জ্যকে বোঝায়, যা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়। আরেকটি শিল্প বর্জ্য, বিভিন্ন কারখানা ও উৎপাদনশীল কার্যক্রম থেকে আসে যা প্রায়ই রাসায়নিক এবং ভারী ধাতু দিয়ে দূষিত হয়।
বর্জ্য পদার্থ সাধারণত মানবস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় রেখে বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাত, পুনর্ব্যবহার ও সঠিকভাবে নিষ্পত্তির মাধ্যমে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমানোর প্রক্রিয়াকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলা হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত ধাপ সাধারণত ল্যান্ডফিল (ময়লার ভাগাড়), যেখানে বর্জ্য নিরাপদে নিষ্পত্তি করা হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হলো বর্জ্যরে মানবস্বাস্থ্য, পরিবেশ অথবা নান্দনিকতার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমানো। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলো দেশভেদে (উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ), অঞ্চলভেদে (শহর ও গ্রাম) এবং আবাসিক ও শিল্প খাতে ভিন্ন হতে পারে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
ল্যান্ডফিলে আসার আগে বর্জ্য পদার্থগুলো প্রথমে বাড়ি থেকে ছোট ভ্যানে করে সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেগুলো সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে এনে বিক্রয়মূল্য আছে এমন বর্জ্যগুলোকে আলাদা করা হয়। সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন আমাদের আশপাশে প্রতিটি এলাকাতেই রয়েছে। এরপর সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং গাড়ি এসে ময়লাগুলো তাদের শেষ গন্তব্যস্থল ল্যান্ডফিলে নিয়ে আসে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আরেকটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং মূল্যবান উপকরণগুলোকে আলাদা করে ন্যূনতম পরিমাণ অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য ল্যান্ডফিলে ফেলা, যাতে পরিবেশের ওপর এর প্রভাব কমানো যায়।
যদি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে পরিচালনা করা না হয় তবে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ যেমন মিথেন গ্যাস, কার্বন, লিচেট এবং ভারী ধাতু পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্জ্য থেকে নির্গত বিভিন্ন ক্ষতিকর ধাতু যেমন সিসা (লেড), পারদ (মার্কারি), ডায়োক্সিন এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পলিমার লিচেটের (ময়লা থেকে বের হওয়া ক্ষতিকর তরল পদার্থ) মাধ্যমে পানিতে এবং মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে, যা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। এসব পদার্থ খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট করে। নির্গত ক্ষতিকর গ্যাস শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়াতে পারে। এছাড়া দুর্গন্ধের সৃষ্টি ও পোসা-মাকড়ের ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, যেমন- কলেরা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। পরিবেশে যত্রতত্র ময়লা পড়ে থাকলে মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যায়। এ ধরনের অব্যবস্থাপনার ফলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং এর সঙ্গে চিকিৎসা ও প্রতিদিনের খরচও বেড়ে যায়। এজন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইঞ্জিনিয়ার্ড পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত ল্যান্ডফিলকে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল বলা হয়। এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, বর্জ্য পদার্থ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ যেন পরিবেশে ছড়াতে না পারে। স্যানিটারি ল্যান্ডফিল সাধারণত নদী-নালা থেকে কমপক্ষে ৩০ মিটার এবং ভূগর্ভস্থ পানির কূপ থেকে ১৬০ মিটার দূরে থাকা উচিত, যাতে বর্জ্য থেকে নির্গত ক্ষতিকর পদার্থ জলাধার বা পানির উৎসকে দূষিত করতে না পারে। অভেদ্য স্তরটি বর্জ্যরে সংস্পর্শ থেকে মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানিকে রক্ষা করে, যাতে কোনো ক্ষতিকর পদার্থ পরিবেশে মিশে না যায়। অভেদ্য স্তরের ওপর লিচেট কালেক্টর স্থাপন করা হয়, যা লিচেট সংগ্রহ করে ট্রিটমেন্ট প্লান্টে সরবরাহ করে পরিশোধনের মাধ্যমে দূষণ রোধ করে। এছাড়া গ্যাস কালেক্টর সিস্টেম ব্যবহার করা হয়, যা ল্যান্ডফিলে উৎপন্ন গ্যাসগুলো সংগ্রহ করে, যেন এ গ্যাসগুলো পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশ দূষণ না করতে পারে। সঠিক প্রক্রিয়ায় ময়লার স্তূপগুলো কভার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়, যাতে ক্ষতিকর গ্যাস ও দুর্গন্ধ ছড়ানোর সুযোগ না থাকে এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমানো যায়।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করছে। তবে এর সঙ্গে বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত তিন দশকে বর্জ্য উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে পরিমাণ সচেতন হওয়া দরকার ছিল, তার কাছাকাছিও পৌঁছতে পারিনি। এর প্রধান কারণ হলো, বিশেষত ঢাকায় প্রতিদিন যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য পদার্থ তৈরি হচ্ছে, আমরা সেগুলো যথাযথভাবে সংগ্রহ করতে পারছি না। যত্রতত্র উন্মুক্তভাবে ময়লা ফেলে রাখা হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁঁকির কারণ। জনসচেতনতার অভাব খুবই প্রকট, আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, বরং প্রতিনিয়ত এর ব্যবহার বাড়ছে, যা পরিবেশের জন্য আরো ঝুঁঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। আরেকটি বড় সমস্যা হলো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা কোনো ধরনের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই বর্জ্য সংগ্রহ ও বাছাইকরণের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। তারা প্রতিদিন উন্মুক্ত পরিবেশে কাজ করে যাচ্ছেন যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁঁকিপূর্ণ।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সাধারণত দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে পরিচালিত ল্যান্ডফিল হলো আমিনবাজারে এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে পরিচালিত ল্যান্ডফিল হলো মাতুয়াইলে। এ দুই ল্যান্ডফিলের আয়তন প্রায় সমান, ১০০ একরের কাছাকাছি হবে। বর্তমানে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের আয়তন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান। যেখানে বর্জ্য থেকে প্রায় ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশন প্রায় ১৯৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত, যেখানে প্রায় ৬১ লাখ মানুষের বসবাস। প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ কেজি বর্জ্য আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে স্থানান্তর করা হয়। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রায় ১০৯ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত, যা প্রায় ৬৩ লাখ মানুষের আবাসস্থল। মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে প্রতিদিন প্রায় ২৬ লাখ কেজি বর্জ্য জমা হয়। উত্তর সিটি করপোরেশনে মাথাপিছু বর্জ্য উৎপাদনের হার প্রায় দশমিক ৬১ কেজি। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এটি প্রায় দশমিক ৭২ কেজি।
মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল কয়েক বছর আগেই বর্জ্য ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে গেলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। একই অবস্থা এখন আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের ক্ষেত্রেও যা বর্তমানে ধারণক্ষমতা অতিক্রম করার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। দুটি ল্যান্ডফিলই স্যানিটারি ল্যান্ডফিল হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এগুলো উন্নত মানের উন্মুক্ত ল্যান্ডফিল হিসেবে কাজ করছে। কারণ এখানে বর্জ্য নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ার্ড পদ্ধতি, যেমন গ্যাস কালেক্টর ব্যবহারের কোনো সুবিধা নেই এবং ময়লা ঢেকে রাখার জন্য কোনো কভারও ব্যবহার করা হয় না। যদিও লিচেট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট রয়েছে, তবুও সঠিকভাবে লিচেট সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া এ দুটি ল্যান্ডফিলই নদীর তীরে এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁঁকিপূর্ণ।
বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রেও সমস্যা প্রকট। কারণ বাংলাদেশে সব ধরনের বর্জ্য একত্রে সংগ্রহ করা হয়। অথচ উন্নত দেশগুলোয় প্লাস্টিক, ধাতু, খাদ্য ইত্যাদি আলাদা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে মেডিকেল বর্জ্য আলাদাভাবে সংগ্রহ করে পোড়ানো হয় কিন্তু পোড়ানোর পর উৎপন্ন গ্যাস পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে, যা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সাম্প্রতিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের হাইড্রোবায়োজিওকেমিস্ট্রি ও পলিউশন কন্ট্রোল ল্যাবরেটরির বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল থেকে নির্গত লিচেটের দূষণমাত্রা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। উভয় ল্যান্ডফিল থেকে নির্গত লিচেটের মাধ্যমে আশপাশের মাটি, ভূগর্ভস্থ পানি এবং জলাশয়ের পানিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত সীমার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ক্ষতিকর ধাতুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এছাড়া উচ্চ মাত্রার মাইক্রোপ্লাস্টিক উপস্থিতি লিচেট ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এছাড়া সংলগ্ন এলাকাতেও ব্যাপক পরিমাণে ক্ষতিকর ধাতু ও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে যার প্রধান উৎস হচ্ছে এই ল্যান্ডফিল। এ ধরনের অব্যবস্থাপনা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য গুরুতর ঝুঁঁকি তৈরি করছে, যা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ যেভাবে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সে তুলনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতটি অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আপাতদৃষ্টিতে অনেক ব্যয়বহুল মনে হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশের জন্য একটি লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে। সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হলে প্রথমত, মানুষের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। পরিবেশ দূষণরোধের মাধ্যমে ঢাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে এবং এ শহর আরো বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। পাসাপাশি জনসাধারণের জীবনমানও উন্নত হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ঢাকার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার সমস্যা কিছুটা হলেও কমে আসবে। সব মিলিয়ে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষ্যে বেশকিছু কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। একেবারে বর্জ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে পুরো ব্যবস্থাপনার প্রতিটি স্তরে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। প্রথমত, এলাকাভিত্তিক ভ্যানগুলো একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ময়লা সংগ্রহের জন্য মাসিক অর্থ নেয়, যার কারণে অনেক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার এ সুবিধা নিতে পারে না এবং বাধ্য হয়ে আশপাশে বর্জ্য ফেলে। এ সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশন যদি নিজ উদ্যোগে এ ভ্যান ব্যবস্থা সরকারিভাবে পরিচালনা করে এবং মাসিক খরচ সবার জন্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করে তবে তা দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্যও সুবিধাজনক হবে। এছাড়া আশপাশে বর্জ্য ফেলার জন্য জরিমানা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে, যা মানুষকে বর্জ্য সঠিক স্থানে ফেলার জন্য উৎসাহিত করবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জড়িত সব কর্মচারীর জন্য নির্দিষ্ট পোশাক ও সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া উচিত, যাতে তারা স্বাস্থ্যঝুঁঁকির সম্মুখীন না হন। প্রতিটি বাসাবাড়িতে আলাদা আলাদা কনটেইনার সরবরাহ করা যেতে পারে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য আলাদাভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এটি পরবর্তী সময়ে পৃথকীকরণের কাজে সহায়ক হবে এবং পুনঃপ্রক্রিয়াজাত বর্জ্যগুলোর ব্যবস্থাপনা আরো সহজতর করবে। ইঞ্জিনিয়ার্ড পদ্ধতি ব্যবহার করে নতুন ল্যান্ডফিল তৈরির ব্যবস্থাগ্রহণ করা প্রয়োজন। যাতে সেখান থেকে নির্গত দূষক পরিবেশের ক্ষতি না করতে পারে। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এ ল্যান্ডফিলগুলোয় গ্যাস ও লিচেট সংগ্রহের আধুনিক ব্যবস্থা স্থাপন করা দরকার, যা পরিবেশ সুরক্ষার পাসাপাশি শক্তি উৎপাদনেও সহায়ক হবে।
অবশেষে, পরিবেশ বিজ্ঞান এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞদের সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে নিয়োগ দেওয়া উচিত। যাতে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এ খাতকে পরিচালনা করা যায়। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ঢাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যাগুলো এখনো সমাধানের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তবে সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্য নয়, বরং জনস্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকারের পাসাপাশি জনগণেরও সচেতন হওয়া এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা দরকার।
লেখক: অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ভোরের আকাশ/রন