logo
আপডেট : ৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১১:৫১
প্রয়াণ দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি
বিজ্ঞানকে সহজভাবে উপস্থাপন করতেন কুদরত-এ-খুদা
জুলকারনাইন মেহেদী

বিজ্ঞানকে সহজভাবে উপস্থাপন করতেন কুদরত-এ-খুদা

আজ ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদার প্রয়াণ দিবস। ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশের কৃতি এই বিজ্ঞানী মারা যান। ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা ১৯০০ সালের ডিসেম্বর ১ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মাড়গ্রামে এক সমভ্রান্ত পীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খোন্দকার আব্দুল মুকিদ, মাতাফাসিহা খাতুন। ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদার শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাড়গ্রাম এম.ই. স্কুলে। পরবর্তীতে তিনি চলে আসেন কলিকাতা উডবার্ন এম.ই. স্কুলে এবং কলিকাতা মাদরাসায়। কলিকাতা মাদরাসা থেকে তিনি ১৯১৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর তিনি ভর্তি হন বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখান থেকেই তিনি ১৯২৫ সালে রসায়নে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এম.এস.সি পাস করেন। পাস করার পর তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড পাড়ি জমান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় হতে Stainless Configuration of Multiplanmet Ring বিষয়ে গবেষণার জন্য তিনি ১৯২৯ সালে রসায়নে ডি.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে এসে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।

সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের পর ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং জনশিক্ষা পরিচালকের দায়িত্ব নেন (১৯৪৭-১৯৪৯)। অতঃপর তিনি পাকিস্তান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞানবিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োজিত হন। ১৯৫২-১৯৫৫ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারসমূহের পরিচালক ছিলেন। ১৯৬৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। বাংলাদেশের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে অবস্থিত বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ছিলেন তিনি প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক (১৯৭৩-৭৫)। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য যে শিক্ষাকমিশন গঠন করা হয় ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা তার সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষাকমিশন রিপোর্ট প্রণীত হয়। বলা হয়ে থাকে এই শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট যদি পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়িত করা যেত তাহলে হয়তো বর্তমান শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান অনেক সমস্যাই দূর করা যেত। ড. মুহম্মদ কুদরাত ই খুদার গবেষণা মূল ক্ষেত্র ছিল জৈব রসায়ন। তিনি পাট, কয়লা, লবণ ও বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি চিকিৎসাকাজে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন দেশীয় ভেষজ গাছ, লতা-পাতার নির্যাস বৈজ্ঞানিকভাবে সংগ্রহ করতেন। তার ও তার সহকর্মীদের ১৮টি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে। পাট কাঠি থেকে উদ্ভাবিত ‘পারটেক্স’কে তার সেরা আবিষ্কারগুলোর একটি হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া পাটকাঠি থেকে কাগজ এবং রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনেগার আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য। দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত গবেষণামূলক পত্রিকায় তার রচিত প্রায় ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

দেশীয় ভাষায় বিজ্ঞানের প্রসার না হলে একটি দেশ জ্ঞান-বিজ্ঞানে কখনোই অগ্রসর হতে পারে না। ড. মুহম্মদ কুদরাত ই খুদা এ জন্য বেশ কিছু বিজ্ঞান সংক্রান্ত বই লিখেছেন এবং তা বাংলায়। বিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য তার লেখা বই- বিজ্ঞানের সরস কাহিনী বিজ্ঞানের বিচিত্র কাহিনীবিজ্ঞানের সূচনা জৈব-রসায়ন (৪ খণ্ড), পূর্ব-পাকিস্তানের শিল্প সম্ভাবনা পরমাণু পরিচিতি, বিজ্ঞানের পহেলা কথা, যুদ্ধোত্তর বাংলার কৃষি ও শিল্প, বিচিত্র বিজ্ঞান। অনেকেই বলে থাকেন ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়িত হলে ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু হবে। অনেকেই অবাক হবেন মহান এই বিজ্ঞানী ‘পবিত্র কোরআনের পূত কাহিনী’ নামে একটি বই লিখেছেন। নিজের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননাতে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এর মাঝে রয়েছে একুশে পদক : ১৯৭৬, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার : ১৯৮৪ (মরণোত্তর), তমঘা-ই-পাকিস্তান, সিতারা-ই-ইমতিয়াজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি। ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশের কৃতি এই বিজ্ঞানী মারা যান। কিন্তু এখনো বর্তমানে যারা বাংলাদেশকে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে চান তারা সবাই এই মহান মানুষটিকে স্মরণ করেন সশ্রদ্ধচিত্তে।

 

ভোরের আকাশ/রন