মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র এক দিন বাকি। মঙ্গলবারের এ নির্বাচন সামনে রেখে বিরামহীন প্রচারণায় ব্যস্ত দুই প্রার্থী ডেমোক্রেটিক পার্টির কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নির্বাচনকে নিয়ে বিশ্ববাসীর আগ্রহেরও কমতি নেই। সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের দৃষ্টি এখন এ নির্বাচনের দিকে। ‘ইলেকশন ডে’ ঘনিয়ে আসতে থাকায় দিনটিতে কী ঘটতে পারে এবং দুই প্রার্থী ইলেকটোরাল ভোট সমান পেলেইবা কী হবে? তবে জরিপে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস।
ভোট গ্রহণ: ৫ নভেম্বর নির্বাচনের দিন অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে ভোটকেন্দ্রগুলো খুলবে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্র একাধিক ‘টাইম জোন’-এ বিভক্ত হওয়ায় দেখা যাবে সময়ের এমন পার্থক্য। একইভাবে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সময় হবে পৃথক। কখনো তা কাউন্টি ভেদেও হবে ভিন্ন। সে যা-ই হোক, অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ হবে ইস্টার্ন টাইম সন্ধ্যা ৬টা ও মিডনাইট ইস্টার্ন টাইমের (২২:০০-০৪:০০ জিএমটি) মধ্যে। এদিকে ভোটকেন্দ্র প্রথম বন্ধ হওয়ার (ইস্টার্ন টাইম সন্ধ্যা ৬টা) সঙ্গে সঙ্গে ভোট গণনার কাজ শুরু হবে। এর কয়েক ঘণ্টা পর থেকে ফলাফল আসতে শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য কোনগুলো ও তাতে ইলেকটোরাল কলেজ ভোট কত: সাতটি সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এসব অঙ্গরাজ্য হলো— পেনসিলভানিয়া (১৯ ইলেকটোরাল ভোট), নর্থ ক্যারোলাইনা (১৬), জর্জিয়া (১৬), মিশিগান (১৫), অ্যারিজোনা (১১), উইসকনসিন (১০) ও নেভাদা (৬)। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে মোট ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ৯৩টি। নির্বাচনে জিততে একজন প্রার্থীকে মোট ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে অন্তত ২৭০টি পেতে হবে। যেসব অঙ্গরাজ্য থেকে ভোটের প্রথম ফলাফল আসতে পারে, সেগুলোর একটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য জর্জিয়া। এরপর রয়েছে নর্থ ক্যারোলাইনা।
ভোট সমান হলে কী হবে: নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই যদি স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী ২৬৯-২৬৯ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পান কিংবা তৃতীয় কোনো প্রার্থী ইলেকটোরাল ভোট জেতেন, সে ক্ষেত্রে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ ‘প্রতিনিধি পরিষদ’ ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। এটি ‘কন্টিনজেন্ট ইলেকশন’ নামে পরিচিত। এ ঘটনা মাত্র একবারই হয়েছে, ১৮২৪ সালে। সে বছর ইলেকটোরাল কলেজ ভোট চার প্রার্থীর মধ্যে ভাগাভাগি হওয়ায় কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। অবশ্য এখন রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি— এ দুই দলের আধিপত্যের কারণে একই রকম ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই বললে চলে।
কন্টিনজেন্ট ইলেকশন এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে বিজয়ী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে নির্ধারণ করবে প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ। এ পরিষদে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিদের থাকবে একটি করে ভোট। জয়ী প্রার্থীকে অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধির ভোট পেতে হবে।
এর পর কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ভাইস প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করবে। প্রত্যেক সিনেটরের থাকবে একটি ভোট। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিততে প্রার্থীকে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫১ ভোট) পেতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে কন্টিনজেন্ট নির্বাচনের তিনটি উদাহরণ রয়েছে। সেগুলো হয়েছে ১৮০১, ১৮২৫ ও ১৮৩৭ সালে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফলাফল দেখা গেছে ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। সেবার জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রয়োজনীয় সংখ্যার চেয়ে মাত্র একটি বেশি (২৭১) ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পান। এর আগে ফ্লোরিডায় ভোট গণনা নিয়ে দেখা দেয় বিতর্ক। তখন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট আল-গোর পেয়েছিলেন ২৬৬ ইলেকটোরাল ভোট। সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা।
ভোরের আকাশ/রন