logo
আপডেট : ৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১৩:৫৪
স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ চাই
নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ চাই

কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না স্বর্ণ চোরাচালান। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসছে বিপুল সোনা; যা সীমান্তের ৩০ জেলা দিয়ে পাচার হচ্ছে ভারতে। আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারি চক্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি এবং এ পরিস্থিতির অবসান হওয়া জরুরি। কেননা, অর্থনীতি ধ্বংস করছে সোনা চোরাচালান। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সর্বোচ্চ নজরদারি প্রয়োজন। যদিও আইনে ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ২০ (বিশ) লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, অপরাধীর মূল হোতা আড়ালে থেকে যায় এবং ধরা পড়ে চুনো-পুঁটিরা। কিন্তু সেক্ষেত্রেও আইনের বেড়াজালে জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে চুনো-পুঁটির দল। ফলে চোরাচালান চলছে তাদের নিজস্ব গতিতেই। দেশে অবৈধ সোনা আসে আকাশপথ, সমুদ্রপথ ও স্থলপথে। সেই সোনা সাত জেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার হচ্ছে ভারতে। সোনা চোরাচালান বন্ধে এর আগে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন বাজুসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরে একাধিক পত্র দেওয়া হলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে সোনা ও হীরা চোরাচালান, দেশি-বিদেশি চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ও অর্থপাচার এবং চোরাচালান বন্ধে আইন- প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নীরবতায় হুমকিতে পড়েছে জুয়েলারি শিল্প। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে প্রচুর সোনার বার, সোনার অলংকার ও হীরা খচিত অলংকার দেশে প্রবেশ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে বিমানে কর্মরত কর্মীরাও সম্পৃক্ত থাকার বেশ কয়েকটি ঘটনায় প্রমাণ পাওয়া যায়। এ অবস্থায় সারাদেশে সোনা ও হীরা চোরাচালান, দেশি-বিদেশি চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ও অর্থপাচার এবং চোরাচালান বন্ধে সকল আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো অভিযান চালাতে হবে। নিরাপদে দেশে আসছে চোরাচালানের বিপুল পরিমাণ সোনা ও হীরার চালান। আবার একইভাবে পাচার হচ্ছে। এটাই প্রতিষ্ঠিত সত্য। দেশে অবৈধভাবে আসা সোনা ও হীরার সিকি ভাগও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের নজরে আসছে না। এই পরিস্থিতি উত্তরণে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত কড়া নজরদারি প্রয়োজন। এ ছাড়া সোনার বাজারের অস্থিরতার নেপথ্যে জড়িত চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কাস্টমসসহ দেশের সকল আইন- প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের জোরালো অভিযান ও শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সোনার বাজারে শৃঙ্খলা আনতে কঠোর অভিযানের বিকল্প নেই। তাই অবৈধ উপায়ে কোনো চোরাকারবারি যেন হীরা ও সোনা অলংকার দেশে আনতে এবং বিদেশে পাচার করতে না পারে সে জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। চোরাচালান প্রতিরোধে পৃথকভাবে সরকারি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সোনা চোরাচালান মামলায় অনেকের সাজা হয়েছে। কিন্তু এর পরও সোনা চোরাচালান থামছে না। আবার অনেক মামলার তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে। ত্রুটিপূর্ণ এজাহার, জব্দ তালিকায় গরমিল, উল্টো সাক্ষ্য দেওয়া, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশসহ নানা কারণে মামলার তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আর বিচারের এই দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে বেশির ভাগ আসামিই জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন। ফলে জড়িতদের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গডফাদাররা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। চোরাকারবারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় প্রতিনিয়তই চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত এক দশকে চোরাচালানের বিপুল সোনা আটক করেছে ঢাকা কাস্টম হাউস। তবে এসব ঘটনায় থানায় হওয়া মামলাগুলোর প্রায় আসামিই জামিন পেয়েছেন। ঢাকা কাস্টম হাউস গত ১০ বছরে চোরাকারবারিদের হাতে-নাতে আটক করে থানায় সোপর্দ করে। বড় চালানের দিক থেকে এ সময় অন্তত ৪৬টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ মামলায় আসামিরা কারাগারে আছেন। বাকি ৩৫টি মামলায় আসামিরা জামিনে আছেন।

রায় হয়েছে একটি মামলায়। এ ছাড়া বাকি ৪৫টি মামলার মধ্যে ১১টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। বাকি মামলাগুলো ঢাকা মহানগরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারাধীন।

 

ভোরের আকাশ/রন