চার বছর পর আগামী ২০ জানুয়ারি ফের হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা হতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিন তিনি ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ২৯৭ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন; কিন্তু বিজয়ের জন্য প্রয়োজন ২৭০টি। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৩টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। ট্রাম্পের নিরঙ্কুর বিজয়ের পরই তার বিদেশ নীতি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। তিনি যে তার নিজ দেশের স্বার্থকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন- সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ ২০১৬ সালের মতো এবারও তার অন্যতম স্লোগান ছিল ‘আমেরিকা ফাস্ট’। এর মানে হলো ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের বিস্তারে তিনি অন্যদেশের পণ্যের ওপর মোটা অঙ্কের শুল্ক আরোপ করতে পারেন। তিনি চীনানীতিও পরিবর্তন করতে পারেন। কেননা, আগের মেয়াদে তিনি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে তিনি ব্যাপক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবেন বলেই মনে হচ্ছে। বিজয়ী ভাষণে তিনি বলেছেন, নতুন যুদ্ধ আমি শুরু করব না। সব যুদ্ধ বন্ধ করে দেব। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু ইসরায়েল প্রতিবেশী ফিলিস্তিনের গাজা, লেবানন ও সিরিয়ায় যে হামলা চালাচ্ছে, তা বন্ধ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে তিনি আনতে সক্ষম হতে পারেন। তার উপদেষ্টারা এর আগে বলেছিলেন, ইউক্রেন শান্তি আলোচনা করতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের দখল করে নেওয়া ভূমি ফেরতের আশা তারা করতে পারেন। ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে বিরত রাখতে তিনি চুক্তি করেছিলেন। সেই যুক্তি থেকে বের হয়ে গেছে ওয়াশিংটন। তিনি ফের এই চুক্তি করতে পারেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এর আগে তিনি ন্যাটোতে তার দেশের খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ কারণে ন্যাটো থেকে তিনি বের হয়ে যেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই জোট থেকে তিনি বের না হলেও যে খরচ কমাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। অভিবাসী বিষয়েও তার কড়া পদক্ষেপ থাকবে। তিনি অবৈধ অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। এদিকে ট্রাম্পের বিদেশনীতি নিয়ে আলোচনা চলছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে। ঢাকাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তোহিদ হোসেন।
নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় নীতি বিষয়ক বহু প্রতিশ্রুতি দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও সেখানে এই নীতির বিষয়ে বিশদ বিবরণের অভাব ছিল। ‘হস্তক্ষেপহীন’ এবং ‘বাণিজ্য সুরক্ষাবাদের’ নীতির উপর ভিত্তি করেই নানা প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গেছে তাকে। এই নীতিকে মূলত ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন তিনি। চীনের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি সে দেশের বৈদেশিক নীতির কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র; যা বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। ক্ষমতায় থাকাকীলন, ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনকে সে দেশের ‘কৌশলগত প্রতিযোগী’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ক্ষেত্রে চীনা আমদানির উপর শুল্কও আরোপ করেছিলেন। পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে আমেরিকান আমদানির ক্ষেত্রে বেইজিংও শুল্ক আরোপ করে। এই ‘দ্বন্দ্বের’ অবসান ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছিল বটে কিন্তু ততদিনে কোভিড মহামারির প্রকোপ দেখা দেয়। দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হয় যখন ট্রাম্প কোভিডকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে আখ্যা দেন। যদিও বাইডেন প্রশাসন দাবি করে তারা চীন নীতির প্রতি আরও দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই চীনা আমদানির ক্ষেত্রে ট্রাম্প-প্রশাসনের শুল্ককেই বজায় রেখেছে তারা। বাণিজ্য নীতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প, উৎপাদন এবং সেই সংক্রান্ত কাজে মার্কিনদের অগ্রাধিকারের বিষয়ে জুড়ে দিয়ে ভোটারদের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট ধারণা তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ইস্পাতের মতো ঐতিহ্যবাহী মার্কিন শিল্পে দীর্ঘমেয়াদী চাকরির সুযোগ কমে আসার একটা বড় কারণ কারখানার অটোমেশন এবং উৎপাদনগত পরিবর্তন। এর পিছনে বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা এবং অফ-শোরিংর মতো কারণ তুলনামূলক ভাবে কমই দায়ী। ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ‘উজ্জ্বল’, ‘বিপজ্জনক’ এবং একইসঙ্গে ‘একজন অত্যন্ত কার্যকর নেতা হিসাবে প্রশংসা করেছেন যিনি ১৪০ কোটি মানুষকে লৌহ মুষ্টি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন। তার এই বক্তব্যকে বিরোধীরা ‘স্বৈরশাসকদের’ সম্পর্কে মি ট্রাম্পের প্রশংসা হিসাবে চিহ্নিত করেছে। চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সুরক্ষার বিষয়ে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার যে নীতি বাইডেন প্রশাসন নিয়েছিল সেখান থেকে ট্রাম্প সরে আসবেন বলেই অনুমান করা হচ্ছে।
স্বশাসিত তাইওয়ানের জন্য সামরিক সহায়তা বজায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে চীন তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসাবে দেখে এবং মনে করে সেখানে শেষ পর্যন্ত বেইজিংয়েরই নিয়ন্ত্রণ থাকবে। গতমাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, যদি তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন, তাহলে তাকে চীনা অবরোধ ঠেকাতে তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তা দিতে হবে না। এর কারণ প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানেন যে তিনি ‘(অভিজ্ঞ) উন্মাদ’ এবং তিনি চীনের উপর এমন শুল্ক আরোপ করবেন; যা ওই দেশকে ‘পঙ্গু’ করে দিতে পারে। বহু বছরের ‘সমান্তরাল সংকটের’ আবহে ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সম্ভাব্য বাধাগুলোর একটার সম্মুখীন হতে চলেছে, তারই ইঙ্গিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নির্বাচনি জয়।
নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় ট্রাম্প এশাধিকবার বলেন, তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ ‘একদিনে বন্ধ’ করে দিতে পারেন। তবে সেটা কীভাবে করবেন সেই প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য তিনি কিছু বলতে চাননি। দুই প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানের লেখা এক গবেষণা পত্রে বলা হয়েছিল, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা উচিৎ। তবে কিয়েভের রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় প্রবেশের বিষয়কে শর্তসাপেক্ষে সমর্থন করা উচিৎ। রাশিয়াকে ‘প্রলুব্ধ’ করতে, পশ্চিমারা ন্যাটোতে ইউক্রেনের বহু কাক্সিক্ষত অন্তর্ভুক্তিকে বিলম্বিত করার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে- এই বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টারা বলেছিলেন, ইউক্রেন যে রাশিয়ার দখল থেকে তাদের সমস্ত অঞ্চল ফিরে পেতে পারে, সেই আশা ত্যাগ করা উচিৎ নয়। তবে এই আলোচনা হওয়া উচিৎ বর্তমানের ‘ফ্রন্ট লাইনের’ ভিত্তিতে। ট্রাম্পের বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তার বিরুদ্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøলাদিমির পুতিনের সঙ্গে সহযোগিতা করার অভিযোগ প্রায়ই তুলে থাকে। তাদের দাবি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি ইউক্রেনের জন্য আত্মসমর্পণের সমান। শুধু তাই নয়, তার এই নীতি সমগ্র ইউরোপকেই বিপদে ফেলবে। ট্রাম্পকে ধারাবাহিকভাবে বলতে শোনা গেছে যে যুদ্ধ বন্ধ করা এবং (যুদ্ধের কারণে) মার্কিন সম্পদ ‘বেরিয়ে যাওয়া’ বন্ধ করা তার কাছে অগ্রাধিকার পাবে।
যুদ্ধ বন্ধ করার ক্ষেত্রে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ দৃষ্টিভঙ্গি ন্যাটোর ভবিষ্যত সম্পর্কিত কৌশলগত ইস্যুতেও প্রভাব ফেলতে পারে। এই মুহূর্তে ৩০টারও বেশি দেশ ন্যাটোর অংশ। কিন্তু ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই এই জোটের বিষয়ে সন্দেহপ্রবণ ছিলেন। অন্যদিকে, আমেরিকার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতির সুযোগ ইউরোপ নিচ্ছে বলেও অতীতে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তবে ন্যাটো থেকে সত্যিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেবেন কি না; সেটা একটা বিতর্কের বিষয়। কিন্তু যদি তা হয়, তাহলে সেটা প্রায় শতাব্দী প্রাচীন ট্রান্স-আটলান্টিক প্রতিরক্ষা সম্পর্কের বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের একটা ইঙ্গিত হবে। কিছু মিত্রদের মতে তার এই কড়া অবস্থান ন্যাটোর সদস্যদের জোটের প্রতিরক্ষা ব্যয় সংক্রান্ত নির্দেশিকা পূরণ করানোর জন্য দরকষাকষির কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। তার এই জয় ন্যাটোর ভবিষ্যতের জন্য কী বার্তা বয়ে আনে এবং ‘হস্টাইল’ নেতারা (বিদ্রোহী নেতারা) এর ‘নেতিবাচক’ প্রভাবকে কীভাবে দেখবেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন জোটের নেতারা।
ইউক্রেনের মতোই, মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি’ আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর অর্থ হলো তিনি গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং লেবাননে ইসরাইল-হেজবুল্লাহ যুদ্ধের ইতি টানবেন। কিন্তু তা তিনি কীভাবে করবেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনি বারবার দাবি করেছেন, জো বাইডেনের পরিবর্তে যদি তিনি ক্ষমতায় থাকতেন তাহলে ইরানের (যারা হামাসকে অর্থায়ন করে) উপর তার (ডোনাল্ড ট্রাম্পের) ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতির কারণে হামাস ইসরায়েল আক্রমণ করত না। অনুমান করা যায় ক্ষমতায় এসে তার দ্বিতীয় মেয়াদেও ট্রাম্প সেই নীতিই মেনে চলার চেষ্টা করবেন; যার ভিত্তিতে তার প্রশাসন ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে এনেছিল। ইরানের উপর বৃহত্তর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল এবং ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করেছিল। প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন ডোনাল্ড ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে ইসরায়েল-পন্থী নীতি প্রণয়ন করেছিলেন। তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেমে স্থানান্তর করেন তিনি। তার এই পদক্ষেপ খ্রিস্টান ‘এভাঞ্জেলিকাল’দের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল। রিপাবলিকানদের ভোটার বলে বিবেচিত হয় এই গোষ্ঠী। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ‘ইসরায়েলের সবচেয়ে ভালো বন্ধু যেমনটা ইসরায়েল হোয়াইট হাউজে আগে কখনও পায়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন। এদিকে, ফিলিস্তিনিরা ট্রাম্প প্রশাসনকে বয়কট করেছিল। কারণ ফিলিস্তিনিদের জাতীয় ও ধর্মীয় জীবনের ঐতিহাসিক কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও জেরুজালেমের প্রতি তাদের (ফিলিস্তিনিদের) দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি ওয়াশিংটন। ফিলিস্তিন আরও ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়ে যখন ট্রাম্প তথাকথিত ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর মধ্যস্থতা করেছিলেন যাকে ইসরায়েল এবং বেশ কয়েকটা আরব ও মুসলিম দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য একটা ঐতিহাসিক চুক্তি হিসাবে দেখা হয়। এই মধ্যস্থতার সময় শর্ত হিসাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ফিলিস্তিনকে মেনে নিতে হয়নি। এর পরিবর্তে, এই চুক্তিতে সামিল দেশগুলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিনিময়ে উন্নত মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের সুবিধা পেয়েছিল। ধীরে ধীরে আরও কোণঠাঁসা হয়ে পড়ে ফিলিস্তিন। নির্বাচনি প্রচারের সময় বেশ কয়েকটা বিবৃতি দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান চান। এদিকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে তার একটা জটিল সম্পর্ক রয়েছে; যা মাঝে মাঝে ‘অকার্যকর’ অবস্থারও সম্মুখীন হয়েছে। তবে এটা ঠিক যে মি. নেতানিয়াহুর উপর চাপ প্রয়োগ করার ক্ষমতা তার রয়েছে। অন্যদিকে, আরব দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতার (যাদের সঙ্গে হামাসের যোগাযোগ রয়েছে) সঙ্গে মি ট্রাম্পের সম্পর্ক ভাল। তবে সংঘাতের কারণে অস্থির মধ্যপ্রাচ্যে, তার এই দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে কার্যকর হবে সেই বিষয়টা স্পষ্ট নয়।
হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে গাজার যুদ্ধবিরতি বিষয়ে বাইডেন প্রশাসন যে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছিল; তা স্থবির অবস্থায় রয়েছে। সেই কূটনৈতিক প্রক্রিয়া কীভাবে চালু হবে বা আদৌ তা শুরু হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিতে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ দৃষ্টিভঙ্গিই প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে আমেরিকান শিল্প সংরক্ষণের নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি চীন ও ভারতসহ একাধিক দেশ থেকে আমদানির উপরে চড়া শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান দিয়ে আসছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ভারতকে আমেরিকান হার্লে ডেভিডসন মোটরসাইকেলের উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার বা কমানোর কথা বলা হয়েছিল। যেসব দেশ মার্কিন পণ্য বা পরিষেবা আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি কড়া অবস্থান নিতে পারেন। ভারতও কিন্তু এই তালিকায় আসতে পারে। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি পর্যবেক্ষণকারী সাংবাদিক শশাঙ্ক মট্টু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটারে) লিখেছেন, ট্রাম্পের চোখে ভারত বাণিজ্য সংক্রান্ত নিয়ম খুব বেশি লঙ্ঘন করে। তিনি চান না যে ভারত মার্কিন পণ্যের উপর খুব বেশি পরিমাণ শুল্ক আরোপ করুক। ট্রাম্প চান তার দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হোক। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চীনের কট্টর বিরোধী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের বেশ অবনতি দেখা গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলেই আশা করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার প্রথম মেয়াদে, কোয়াডকে শক্তিশালী করার বিষয়ে খুব সক্রিয় ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের জোট হলো কোয়াড। ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের সঙ্গে অস্ত্র রফতানি, যৌথ সামরিক মহড়া ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে আরও মজবুত সমন্বয় হতে পারে। এর ফলে চীন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান শক্তিশালী হবে। মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘র্যান্ড কর্পোরেশন’-এর ইন্দো-প্যাসিফিক বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ট্রাম্পের জয় ভারত ও আমেরিকার বর্তমান কৌশল অব্যাহত রাখবে। মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেওয়া ছাড়াই ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারিত্বের ধারাবাহিকতা দেখা যাবে বলে অনুমান করা যায়। মোটের উপর ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হওয়ায় ভারত লাভবান হবে।
সাংবাদিক শশাঙ্ক মট্টু লিখেছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বে থাকাকালীন ভারতের সঙ্গে বড় ধরনের প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন এবং চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। এদিকে ট্রাম্প যে অবৈধ অভিবাসীর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবেন; তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি অবৈধ অভিবাসীদের তাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অনেকবার।
ঢাকার প্রত্যাশা: ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন অবস্থানের বড় কোনো পরিবর্তন হবে না বলে মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের চ্যালেঞ্জের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে থেকে কোনো কিছু স্পেকুলেট (অনুমান) করার প্রয়োজন নেই। আমরা আরও দুই মাস দেখি, সময় তো রয়েছে। তারপর ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেবেন, এরপর উনি কী কী পদক্ষেপ নেন, সে অনুযায়ী। উনি তো (ট্রাম্প) বলেননি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হবে অথবা খারাপ হবে- কিছুই বলেননি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক যে দলের ভিত্তিতে হয়, তা তো না। যেসব বিষয় নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ চলছিল, তাদের যে চাওয়া ছিল, দেনদরবার হচ্ছিল, সেগুলো কিন্তু পূর্ববর্তী ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও ছিল। কাজেই এটা বলা ঠিক হবে না, ট্রাম্প প্রশাসন ও বাইডেন প্রশাসনের নীতিতে বাংলাদেশ নিয়ে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে। তিনি বলেন, আমরা দেখি, তারপর যোগাযোগের চেষ্টা করব, তারপর দেখা যাবে।
জাতিসংঘের সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, সম্মেলনে বাংলাদেশ তার অবস্থান আবারও পরিষ্কার করেছে, আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধী। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ এটিও বলেছে যে সন্ত্রাসবাদের যে মূল কারণ, সেটি যদি দূর করা না হয়, তাহলে সম্মেলন করে কাজ হবে না। সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম বাড়ছে, একই সঙ্গে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যাও বাড়ছে। তার মানে যে কার্যক্রমগুলো নেওয়া হচ্ছে, তা কাজে লাগছে না।
ভোরের আকাশ/ সু