logo
আপডেট : ৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১৬:১২
ট্রাম্প প্রশাসনে আসছেন কারা

ট্রাম্প প্রশাসনে আসছেন কারা

অবিস্মরণীয় এক জয় নিয়ে জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতার পালাবদলে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী চেয়ারটিতে বসার পর তার প্রশাসনকে ঠিকঠাকমত চালিয়ে নিতে কারা সহযাত্রী হবেন, তা বাছাইয়ে এরই মধ্যে কাজে নেমে পড়েছে একটি দল। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে প্রশাসনের প্রথম কর্মী হিসেবে ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচার শিবিরের সহ-ব্যবস্থাপক সুসান সামারল উইলসকে (সুসি উইলস) বেছে নিয়েছেন। সুসি উইলস হচ্ছেন হোয়াইট হাউজের প্রথম নারী চিফ অব স্টাফ। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ঘিরে এখন নতুন কিছু নাম এসেছেÑ যারা তার মন্ত্রিসভায় হোয়াইট হাউজ ও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ভূমিকা পালন করতে পারে। আলোচনায় থাকা এমন কয়েকজনের নাম জানিয়েছে বিবিসি।

রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র: সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাতিজা গত দুই বছর বেশ ভালো সময়ই পার করেছেন। পেশায় পরিবেশবাদী আইনজীবী কেনেডি জুনিয়র ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। জো বাইডেনের পুনঃভোটের প্রশ্নে তার পরিবারের বেশির ভাগই সমর্থন করেন এবং তারা কেনেডি জুনিয়রের টিকাবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিরুদ্ধে কথা বলেন। এরপরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার দিকে মনোযোগ দেন তবে নানা বিতর্কের মধ্যে ভোটের দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন এবং ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। নির্বাচনের আগে শেষ দুই মাসে তিনি ‘মেইক আমেরিকা হেলদি এগেইন’ নামে ট্রাম্পের একটি প্রচার উদ্যোগে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। ট্রাম্প সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, কেনেডি জুনিয়র রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এবং খাদ্য ও ওষুধ সুরক্ষা প্রশাসনের (এফডিএ) মতো জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংস্থার সঙ্গে বড় ভূমিকায় থাকবেন।

সুসি উইলস: কমলা হ্যারিসের বিপক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক বিজয়ের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন প্রচার শিবিরের কো-চেয়ার ক্রিস লাসিভিটা ও সুসি উইলস, যাদেরকে তিনি বুধবার তার বিজয় ভাষণে ‘আইস বেবি’ বলে বর্ণনা করেছেন। সুসি উইলস যে ট্রাম্প প্রশাসনে চিফ অব স্টাফ হচ্ছেন তা ইতোমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। ট্রাম্পের ভাষ্য, উইলস সবসময় পর্দার পেছনে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। তাকে দেশের অন্যতম ভয়ংকর ও সম্মানীয় রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। রাজনীতিতে কাজ শুরু করার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি ১৯৮০ সালে রোনাল্ড রেগানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানে ছিলেন। পরে তিনি হোয়াইট হাউজের ‘শিডিউলার’ হয়েছিলেন। ২০১০ সালে তিনি স্বল্প রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তৎকালীন ব্যবসায়ী রিক স্কটকে সাত মাসের মধ্যে ফ্লোরিডার গভর্নর হতে সহায়তা করেন। স্কট এখন সিনেটর। ২০১৫ সালের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়নের সময় ট্রাম্পের সঙ্গে উইলস দেখা করেছিলেন এবং ট্রাম্পের ফ্লোরিডা প্রচারে কো-চেয়ার হয়েছিলেন। সেই সময় ফ্লোরিডাকে দোদুল্যমান রাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ২০১৬ সালে সেখানে হিলারি ক্লিনটনকে অল্প ব্যবধানে পরাজিত করেন ট্রাম্প।

ইলন মাস্ক: বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি চলতি বছরের শুরুতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে তার সমর্থন ঘোষণা করেন। যদিও ২০২২ সালে মাস্ক বলেছিলেন, ট্রাম্পের ক্যাপ ঝুলিয়ে রাখার এবং সূর্যাস্তের দিকে যাত্রা করার সময় এসেছে। তবে ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়ার পর থেকে এ প্রযুক্তি বিলিয়নেয়ার শক্ত অবস্থান নেন। ভোটে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আমেরিকা পিএসিকে তিনি ১১৯ মিলিয়নের বেশি ডলার অনুদান দিয়েছেন। টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এর মালিক মাস্ক ভোটের প্রচারের শেষ সময়ে দৈবচয়ন ভিত্তিতে দোদুল্যমান রাজ্যের ভোটারদের প্রতিদিন ১ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন। ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে রিপাবলিকান হিসাবে নিবন্ধিত হওয়ার পর থেকে মাস্ক অবৈধ অভিবাসন এবং ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারের মতো বিষয়ে সোচ্চার হন। মাস্ক ও ট্রাম্প দুজনই ‘সরকারী দক্ষতা বিভাগ’ নামে নতুন ধারণার দিকে মনোযোগ দিয়েছেন, যেখানে ব্যয় হ্রাস করার পাশাপাশি বিধিবিধান (আমলাতন্ত্র) সংস্কার করার কথা। সংস্থাটির সংক্ষিপ্ত রূপ ‘ডিওজিই’, যেটিকে ‘মিম-কয়েন’ ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে এর আগে মাস্ক প্রচার করেছিলেন।

মাইক পম্পেও: কানসাসের সাবেক এই কংগ্রেসম্যান ট্রাম্পের আগের আমলে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) পরিচালক এবং পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পররাষ্ট্রনীতিতে তীক্ষè-ধীসম্পন্ন ও ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি ইসরায়েলের তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাসকে জেরুজালেমে স্থানান্তরে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছিলেন। আব্রাহাম চুক্তি বাস্তবায়নের মূল ক্রীড়ানকদের মধ্যে তিনি ছিলেন, যে চুক্তি ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল। ২০২০ সালের শেষের দিকে নির্বাচনে জালিয়াতির ট্রাম্পের মিথ্যা দাবির মধ্যে তিনি তার বসের অনুগত ছিলেন। পম্পেও তখন রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রশ্নে একটি মসৃণ পালাবদল’ হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর জন্য পম্পেওর পাশাপাশি ফ্লোরিডার আইনপ্রণেতা ও সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্য মাইকেল ওয়াল্টজকে বিবেচনা করা হচ্ছে। ওয়াল্টজ হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভে অস্ত্র সেবা কমিটিতে আছেন।

রিচার্ড গ্রেনেল: জার্মানিতে ট্রাম্পের রাষ্ট্রদূত, বলকান অঞ্চলে বিশেষ দূত এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন রিচার্ড গ্রেনেল। দোদুল্যমান রাজ্য নেভাদায় ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় উল্টে দেওয়ার চেষ্টায়ও ব্যাপকভাবে জড়িত ছিলেন এ রিপাবলিকান। আনুগত্যের প্রশ্নে গ্রেনেলের প্রশংসা করে ট্রাম্প তাকে ‘আমার দূত’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের একান্ত বৈঠকে বসেছিলেন গ্রেনেল। ট্রাম্প প্রায়ই বলে আসছেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের '২৪ ঘণ্টার মধ্যে' ইউক্রেইনে যুদ্ধ শেষ করবেন; আর গ্রেনেল পূর্ব ইউক্রেনে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছেন, যাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে কিয়েভ। তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে বিবেচনা করা হচ্ছে, যে পদে বসাতে সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না।

ক্যারোলিন লেভিট: ট্রাম্পের ২০২৪ সালের প্রচার শিবিরের জাতীয় প্রেস সেক্রেটারি এর আগে হোয়াইট হাউজে সহকারী প্রেস সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন ক্যারোলিন লেভিট। ২৭ বছর বয়সী এই জেন-জার ২০২২ সালে কংগ্রেসে সর্বকনিষ্ঠ নারী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন। তবে নিজ রাজ্য নিউ হ্যাম্পশায়ারে ভোট করে তিনি হেরে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি হতে যাচ্ছেন, যে পদধারীকে সবচেয়ে বেশি জনগণের সামনে আসতে হয়।

টম হোমান: ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টে (আইসিই) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন টম হোমান। অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে শিশুদেরকে তাদের পিতা-মাতার কাছ থেকে আলাদা করার প্রবক্তা ছিলেন তিনি। যেসব রাজনীতিবিদ ‘অভয়ারণ্য নগর’ নীতিকে সমর্থন করেন, তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা উচিত- এমন মন্তব্য করে তিনি সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির মাঝামাঝি সময়ে তিনি তার আইসিইর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তখন থেকেই তিনি ট্রাম্পের গণঅভিবাসী নির্বাসন পরিকল্পনার নেপথ্যের হোতা হিসেবে বিবেচিত। তাকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান হিসেবে ভাবা হচ্ছে। গত মাসে সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হোমান বলেন, টার্গেট করে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করা হবে। আমরা কাকে গ্রেপ্তার করতে যাচ্ছি, কোথায় এমন অসংখ্য ব্যক্তির খোঁজ মিলতে পারে, তা তদন্তের মাধ্যমে জানতে পারব।

 

ভোরের আকাশ/রন