মাঠে নামার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে আজ রোববার (১০ নভেম্বর, ২০২৪) তারা রাজধানীর গুলিস্তানে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ জন্য তারা শহীদ নূর হোসেন দিবসকে বেছে নিয়েছে। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। গণঅভ্যুত্থানে পতন হওয়া শেখ হাসিনার দলটির জড়ো হওয়ার ঘোষণায় রাজনীতিতে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, গণহত্যাকারী অথবা নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ মাঠে নামার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। অন্যদিকে, গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন কয়েকজন যুবক।
আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, "১০ নভেম্বর আসুন- নূর হোসেন চত্বরে জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, ঢাকা। আমাদের প্রতিবাদ দেশের মানুষের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে, আমাদের প্রতিবাদ মৌলবাদী শক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে, আমাদের প্রতিবাদ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে। অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আপনিও অংশ নিন।"
প্রসঙ্গত, ১০ নভেম্বর ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’। ১৯৮৭ সালের এই দিনে তৎকালীন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকার রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মিছিলে শহীদ হন নূর হোসেন। দিবসটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে এবার প্রথমবারের মতো দিবসটিতে মাঠের কর্মসূচি ঘোষণা দিল আওয়ামী লীগ।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, "আওয়ামী লীগ যদি সমাবেশ করার চেষ্টা করে, তবে কঠোর হাতে তা দমন করা হবে।" গতকাল ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি এমন হুঁশিয়ারি দেন। তিনি লিখেছেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট দল। এই ফ্যাসিস্ট দলকে বাংলাদেশে কোনো ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। যারা গণহত্যাকারী এবং স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নির্দেশে সমাবেশ, মিছিল বা সভা আয়োজন করতে চাইবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূর্ণ শক্তি দিয়ে ব্যবস্থা নেবে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশে কোনো ধরনের সহিংসতা কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা সহ্য করবে না। এদিকে, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে 'নিরাপদ বাংলাদেশ চাই' শিরোনামে আয়োজিত সেমিনারে শফিকুল আলম বলেন, "জুলাই-আগস্টে ছাত্রদের আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল ছাত্রলীগ। ফ্যাসিবাদের বয়ান তৈরি করেছে ছাত্রলীগ। পুরো জাতিকে জিম্মি করে রেখেছিল তারা। চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করে রেখেছিল। সাধারণ ছেলে-মেয়েদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। বাংলাদেশকে নিরাপদ করতে হলে শিক্ষাঙ্গনকে নিরাপদ করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দূর করতে হবে।" এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, "গণহত্যাকারী বা নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচির চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
গতকাল বিকেলে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ কথা লিখেন তিনি। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, "গণহত্যাকারী/নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।"
আওয়ামী লীগ নেতা আটক: ১০ তারিখের সমাবেশে যোগ দিতে এসে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে আটক হয়েছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। তবে প্রাথমিকভাবে আটককৃত ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি। শনিবার সন্ধ্যায় তাকে আটক করেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। এ সময় তার সঙ্গে থাকা দুই ব্যক্তি পালিয়ে গেছেন। যারা আটক করেছেন তাদের একজন বলেন, "আওয়ামী লীগের ওই নেতাকে আটকের পর তিনি দুই-তিন লাখ টাকা দিতে রাজি হন এবং তাকে ছেড়ে দিতে বলেন।" তিনি বলেন, আটক ওই ব্যক্তি আওয়ামী লীগের ‘এ টিম’-এর সদস্য। তার মোবাইল ফোনের গ্যালারিতে সরকারবিরোধী বিভিন্ন পোস্টার পাওয়া গেছে। তার ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে সরকারবিরোধী বিভিন্ন তৎপরতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আরেক যুবক বলেন, আওয়ামী লীগের ওই নেতা ড. ইউনূসের ফাঁসি চেয়ে ফেসবুকে অনেক পোস্ট করেছেন। তাকে আটকের পর পল্টন থানায় জানানো হয়েছে। পুলিশ এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আটক ব্যক্তি নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী স্বীকার করে বলেছেন, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে আসেননি।
ভোরের আকাশ/রন