logo
আপডেট : ১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১৩:৩৩
মেগা প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন চাই
নিজস্ব প্রতিবেদক

মেগা প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন চাই

মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এই লক্ষ্যে বিগত সরকারের আমলে নেওয়া হয়েছিল বহু মেগা প্রকল্প। সেগুলোর অনেকগুলোই বাস্তবায়ন কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তবে অনেক মেগা প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। এসব মেগা প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হলেই দেশ যে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, যে এসব প্রকল্পের কাজে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতির অভিযোগ উঠেছে। গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে এই মর্মে একটি খবর ছাপা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অগ্রাধিকার মেগা প্রকল্প ছিল দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন। প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যেই শেষের পথে। এ মেগা প্রকল্প চালু হওয়ার এক বছরের মধ্যেই মেগা বড় ধরনের ভুল-ত্রুটি ধরা পড়েছে। অভয়ারণ্য এলাকা দিয়ে যাওয়া এই লাইনে চলাচলকারী রেলের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু, প্রথম বছরেই বন্যায় রেললাইন বেঁকে যাওয়া, দেশের প্রথম আইকনিক রেল স্টেশনে শেড বেয়ে পানি পড়াসহ ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি। এমন অবস্থায় ১০১ কিলোমিটার রেলপথটি গত মঙ্গলবার ও বুধবার সরেজমিন পরিদর্শন করেছে সরকারি রেল পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাদের পরিদর্শনকালে এই ত্রুটি ধরা পড়েছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৬ জুলাই দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল একনেক। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। পরে রামু-ঘুমধুম অংশ বাদ দিয়ে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১২ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ২০১৮ সালের জুলাই মাসে কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। ১ ডিসেম্বর থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে।

এদিকে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝিনুকের আদলে দেশের প্রথম আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয় কক্সবাজারে। কিন্তু সেটির ওপরের শেড থেকে পানি চুইয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম হয়ে যাত্রীদের গায়ে পড়ছে। ড্রেনেজের পানি উপচে প্লাবিত হয় প্ল্যাটফর্ম। বিঘ্নিত হচ্ছে স্টেশন পরিচালনা কার্যক্রম। এছাড়া দোহাজারি-সাতকানিয়া-লোহাগাড়া-চুনতি-হারবাং-ডুলাহাজরা-অভয়ারণ্য ভেদ করে চকরিয়া-রামুর মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া রেলপথের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় কালভার্ট নির্মাণ না করায় গত বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে রেলপথ বেঁকে যায়, ধসে যায় রেললাইনের মাটি। তাছাড়া রেলপথের পাহাড়ি এলাকায় রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ, উভয়পাশে শক্তিশালী ও উঁচু রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ না করায় গত বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ভেঙে রেললাইন ভরাট হওয়ার ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে দোহাজারি-কক্সবাজার পর্যন্ত ৯টি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বর্ষার সময় পানি প্রবেশ করে। প্ল্যাটফর্মের শেডের উচ্চতা স্বাভাবিক নিয়মের চেয়ে উঁচু হওয়ায় প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত যাত্রীরা বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে। প্রতিটি স্টেশন ভবনের অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করে। ফলে প্রকল্পের সমীক্ষা, কাজের মান, ডিজাইনসহ নানা কাজ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে আমরা মনে করি। এই মেগা প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই এমনটি হয়েছে তা অস্বীকার করা যাবে না। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় সঠিকভাবে তদারকি করা হলে এমনটি হতো, বলে আমরা মনে করি না।

আমরা চাই, দেশের উন্নয়ন। আর এই উন্নয়নের জন্য মেগা প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি। এই উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি মেগা প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন হোক, সেই কামনাই করছি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অভিযোগ উঠছে তা খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলেই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি, উদাসীনতা ও দুর্নীতি বন্ধ হবে, বলে আমরা মনে করি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এসব মেগা প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, বলে আমরা আশাবাদী।

 

ভোরের আকাশ/রন