logo
আপডেট : ১১ নভেম্বর, ২০২৪ ১১:২৮
এনসিটিবিতে লুটপাট
শিপংকর শীল

এনসিটিবিতে লুটপাট

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ভ্যাট না কাটায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৩ টাকা। সার্ভিস চার্জ বাবদ কেটে রাখা টাকা কর্মকর্তাদের পকেটে গেছে। কর্মশালার নামে ব্যয় করা হয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮৬ টাকা। প্রশিক্ষণ-কর্মশালায় ভাতা ও নির্দিষ্ট সীমার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ অগ্রিম দেওয়ায় প্রায় ২৫ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত সম্মানি দেওয়াসহ ১১ খাতে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের অধীন শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর। এই দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র খুঁজতে একটি কমিটি গঠন করেছে এনসিটিবি।

জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি পাঠ্য বই ছাপানো হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৪৫ কোটি ৬৪ লাখ ২৮ হাজার ৭৭৩ টাকা। পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের দায়িত্বে থাকা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্তারা (এনসিটিবি) সার্ভিস চার্জের বিল নিয়েছেন। কিন্তু কেটে রাখা হয়নি ভ্যাটের অংশ। এ কারণে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৩ টাকা। এসবের নেতৃত্ব দিতেন এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মশিউর রহমান। একটি কর্মশালার জন্য ব্যয় দেখানো হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। শিক্ষক সহায়িকা এই কর্মশালার প্রয়োজনই ছিল না। চলতি বছরে হওয়া ১০টি কর্মশালায় টাকা খরচ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮৬ টাকা। গত এপ্রিল থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত হয় এসব কর্মশালা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থান খারাপ দেখে আগস্টের প্রথম চারদিনে কর্মশালার খরচ দেখিয়ে উঠিয়ে নেওয়া হয় প্রায় ১১ লাখ টাকা।

এনসিটিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ভ্যাট ফাঁকির অডিট আপত্তির পরও যোগ্য জবাব দেয়নি সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মশিউর রহমানের সিন্ডিকেট। এমনকি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সান্নিধ্যে থেকে অডিট আপত্তির জবাবদিহিতা এড়িয়ে যাওয়া হয়। এরপর হওয়া কর্মশালাগুলোতেও ভ্যাট কাটা হয়নি। তিনি বলেন, বই ছাপানোর কাজে গঠিত বিভিন্ন কমিটিকে অতিরিক্ত হারে ৬৪ লাখ ৭২ হাজার ৩০ টাকার সম্মানি দেওয়া হয়েছিল; যা হয়ে উঠেছিল ওপেন সিক্রেট। কিন্তু সে সময় কেউ কিছু বলেনি। এই অতিরিক্ত সম্মানীর প্রশিক্ষণ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রোডম্যাপে ছিল না। এরপরও প্রাপ্যতা না থাকার পরও সম্মানী ও অন্যান্য ভাতা দেওয়া হয়। আবার প্রশিক্ষণ-কর্মশালায় ভাতা ও নির্দিষ্ট সীমার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ অগ্রিম দেওয়ায় প্রায় ২৫ কোটি টাকার অনিয়ম হয়।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বইয়ের মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা একজন লেখক বলেন, আমরা প্রশিক্ষণে যেতাম। সেখানে আমাদের জন্য একটা সম্মানী বরাদ্দ থাকতো। সেটা নিতাম। কিন্তু এতে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছিল কি-না, তা আমি জানি না। সরকারি খাতের বিপুল পরিমাণ টাকা খরচের গরমিলের এই খতিয়ান তলব করেছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। জরুরিভাবে এনসিটিবির গত ১৫ বছরের বিভিন্ন খাত উপ-খাতে যে টাকা খরচ হয়েছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ হিসাব চেয়ে এনসিটিবিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিয়াজুল হাসান বলেন, বিগত সরকারের আমলে নানা ধরনের আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। এগুলো আমরা বের করতে কমিটি গঠন করেছি। উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আর্থিক অনিয়ম বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রদান করে উপদেষ্টার দপ্তরে পৌঁছে দিতে।

 

ভোরের আকাশ/রন