সবজির ভান্ডার হিসাবে বিখ্যাত জেলা বলা হয় গাইবান্ধাকে। উত্তরের এই জনপদ গাইবান্ধায় প্রতি বছরেই আলু চাষ করা হয়ে থাকে। তাই চলতি মৌসুমে আগাম বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করা হচ্ছে জেলা জুড়েই। অন্যন্য বছরের তুলনায় এ বছর আলুর ফলন ভালো হবে প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা। তাই বেশি লাভের আশায় আগাম আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
গাইবান্ধা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গতবছর জেলার সাতটি উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০ হাজার ৩১৪ হেক্টর। এর মধ্যে অর্জিত হয়েছিল ১১ হাজার ১৫২ হেক্টর। এবছর জেলায় আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৩৬ হেক্টর। ইতিমধ্যেই আগাম অর্জিত হয়েছে ৩৫০ হেক্টর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফসলি মাঠে বিভিন্ন জাতের আলু রোপন করছেন কৃষকরা। জাতগুলো হচ্ছে বারি সেভেন, গ্যারুনুলা, বারি ৪৬, অজেটো, বারি ৫৪ (মিউজিকা), বারি ৯০ (এলয়েট), কুমারিকা সহ বেশ কিছু জাতের আলু চাষ করছেন কৃষকরা কয়েকটি ধাপে। কেউ হালচাষ করছেন, আবার কেউ জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত। কেউ সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, বীজ আলু সংগ্রহ, পাশাপাশি রোপণও করছেন কৃষকরা।
এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে আলু যাচ্ছে পাশের জেলাগুলোসহ রাজধানী ঢাকায়। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কৃষি কাজে সহযোগিতা করছেন। ইতিমধ্যেই জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে নতুন আলু।
সাদুল্লাপুর উপজেলার দক্ষিণ ফরিদপুর এলাকার কৃষক গফুর মন্ডল (৫৫) বলেন, এবার ২২ শতাংশ জমিতে আগাম বারি সেভেন জাতের আলু লাগিয়েছি। এবার আলুর যে দাম, অনেক চড়া দাম দিয়ে এবার আলু কিনতে হয়েছে। অন্যন্য বাড়ের তুলনায় এবার খরচ পড়েছে বেশি। আলু কেনা, সার, লেবার খরচসহ ২২ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করতে খরচ গেল ২০ হাজার টাকা। তার পরেও এই বারি সেভেন আলু চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। কারণ এই আলু স্বল্প সময়ে পরিপক্ব হয়। আর নতুন আলু বাজারজাত করলে বেশি দামেই বিক্রি করা যায়।
একই এলাকার কৃষক মোজাম্মেল হক (৭২) বলেন, এবার ধান কাটার পর ২৫ শতাংশ জমিতে আগাম বারি সেভেন জাতে আলু লাগিয়েছি। এই আলু ৬০ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হয় এবং বাজারে বিক্রি করতে পারি। বারি সেভেন আলু চাষ করি বেশ কয়েক বছর থেকেই। তবে অন্যন্য বাড়ের তুলনায় এবার আলুর দামটা বেশি। তাই খরচও বেশি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন ভালো হবে। বাজারে বিক্রি করে দাম ভালো পাওয়া যেতে পারে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম ভোরের আকাশকে বলেন, আগাম আলু ইতিমধ্যেই উত্তোলন শুরু হয়েছে, আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত এই উত্তোলন চলমান থাকবে। আগাম এই আলু চাষ করে কৃষকরা অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে। বাজারে এখন আলু ৫৫-৭০ টাকা কেজি তরে বিক্রি হচ্ছে। যার ফলে এই আলু গুলো চাষ করে কৃষকরা অধিক আয় করছেন। এবার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি অর্জন করেও আরো অধিক পরিমাণে আবাদ হবে বলে প্রত্যাশা করছি। তার নমুনা স্বরূপ এ জেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষে যে পরিমান বীজ দরকার তার থেকে অধিক বীজ ইতি মধ্যেই বিক্রি হয়েছে, বিভিন্ন ডিলার ও বিএডিসির মাধ্যমে। আমরা আশা করছি এবছর আলুর আবাদ আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
ভোরের আকাশ/ সু