আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম ব্যর্থতা ছিল নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। এজন্য সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজিকে দায়ী করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর নিত্যপণ্যের দাম আরেকটা বাড়ে। কিন্তু এখনও কী সিন্ডিকেট-চাঁদাবাজি আছে? না থাকলে পণ্যের দাম কমছে না কেন? সরকার কেন সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না- সেই প্রশ্নও উঠেছে। নিত্যপণ্যের দর যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা আর উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্যে দামের পার্থক্য ন্যূনতম রাখার লক্ষ্য নিয়ে গঠন করা হয় টাস্কফোর্স। গত এক মাসে বাজারে আসলে কতটা প্রভাব রাখতে পারছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দর বেড়ে চলার ধারাবাহিকতায় কোনো ছেদ পড়েনি; উল্টো আগের চেয়ে বেশি খরচ করতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্রিফিং করে বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লেগে যাবে। কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে, এ বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
গত ৭ অক্টোবর টাস্কফোর্স গঠনের আদেশে বেশ কিছু দায়িত্বের কথা বলা আছে। এর মধ্যে আছে, নিয়মিত বিভিন্ন বাজার, বৃহৎ আড়ত/গোডাউন/কোল্ড স্টোরেজ ও সাপ্লাই চেইনের অন্যান্য স্থান সরেজমিন পরিদর্শন এবং পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারকি করা; উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্যে যাতে দামের পার্থক্য ন্যূনতম থাকে, তা নিশ্চিত করা এবং সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা। প্রতিদিন একটি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল এবং জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠানো।
বাজার নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্সের কাজ শুরু হওয়ার পর এই এক মাসে দাম বৃদ্ধির তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে আলু, পেঁয়াজ, চাল আর খোলা সয়াবিন তেল। এই এক মাসে আলুর দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা, চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১২ টাকা, পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, রসুনের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে।
এসব পণ্যের দর বৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবন আরও কঠিন করে তুলেছে। এর কারণ, স্বল্প আয়ের মানুষরা তাদের খাদ্যের পেছনে ব্যয়ের বেশিরভাগ করেন এসব পণ্য কিনতেই। পাইকারি, খুচরা ও উৎপাদন পর্যায়ে এসব পণ্যের দামের পার্থক্য ন্যূনতম রাখার বিষয়ে কোনো ঘোষণা আসেনি, কোনো পর্যায়ে অযৌক্তিক মুনাফা করার বিষয়ে কোনো তথ্যও দেয়নি টাস্কফোর্স। অথচ এই সময়ে সরকার চালের আমদানি শুল্ক শূন্যে নামিয়েছে, পেঁয়াজ, আলু আর ভোজ্যতেলের শুল্ক কমিয়েছে। তবে সরকারি সংস্থা টিসিবির তালিকা বলছে, ডিম, ব্রয়লার মুরগির দামও বেশি। অবশ্য গত এক মাসে ডিমের দাম আগের তুলনায় অনেকটাই কমে এসেছে।
পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত অগাস্টে খাদ্য খাতে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল, সেপ্টেম্বরে তা ছিল ১০ দশমিক ৪০; আর অক্টোবরে হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি। অর্থাৎ গত বছর খাদ্যের পেছনে খরচ ১০০ টাকায় হলে গত অক্টোবরে তা বেড়ে হয়েছে ১১২ টাকা ৬৬ পয়সা। গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।’ তবে গত ৭ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বর্তমানে দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতি কমে আসতে দেড় বছরের মতো অপেক্ষা করতে হতে পারে। সে জন্য আমাদেরকে ধৈর্য ধরতেই হবে। এখন প্রশ্ন হলো- ওই সময় পর পণ্যের দাম কমবে- এই নিশ্চয়তা কে দেবে?
ভোরের আকাশ/রন