logo
আপডেট : ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:১৭
বড় তিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সরকার
শিপংকর শীল

বড় তিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সরকার

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একশ দিন পূর্ণ হচ্ছে আগামী ১৮ নভেম্বর। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রশাসন, পুলিশ, মানবাধিকার, অর্থনীতি ও আইন-শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রশাসন ও পুলিশে বড় রদবদল করা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিগত সরকারের সমর্থকদের আধিক্য থাকায় পরিস্থিতি উত্তরণে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিন দফা সংলাপ এবং ৭টি সংস্কার কমিশন গঠনই সরকারের প্রধান সাফল্য। দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর গতি বেড়েছে অভাবনীয়ভাবে। ব্যাংকগুলোতে অর্থপ্রবাহ বেড়েছে কয়েকগুণ। এই সময়ের মধ্যে কার্যত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেদের ঘর গোছাতেই সময় পার করছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, প্রশাসনিক কাজে গতি ফেরানোই বর্তমান সরকারের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

স্থবির হয়ে পড়া প্রশাসনে গতি বাড়লেও তা আশানুরূপ হয়নি। ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার এবং দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে পৃথক দুটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলো নামের তালিকা দেওয়া শুরু করেছে। এ সরকারের তিন মাসে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের কঠোর সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ কর্মকর্তাদের বদলি, ওএসডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নজির তেমন একটা দেখা যায়নি। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের কাজে ঢিলেমি চোখে পড়ার মতো। সব মিলিয়ে প্রশাসনিক সংস্কার সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, প্রশাসনের প্রায় ৩ শতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি এবং ১০ জন সচিবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) এবং ৬ জন সচিবের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ বেশিরভাগ মন্ত্রণালয়ে থাকা ফ্যাসিবাদী ও ক্ষমতাধর কর্মকর্তাদের বদলি করা হলেও স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে উপদেষ্টার পিএস নাসির উদ্দিন এবং ওবায়দুল কাদেরের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে বদলি না করায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে কোনো কোনো কর্মকর্তা বদলি ঠেকাতে তৎপর রয়েছেন বলে জানা গেছে। এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জনপ্রশাসনে পৃথক পৃথক চিঠি গেছে বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে প্রশাসনিক সংস্কার সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। গতকাল ৮ নভেম্বর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টাসহ এ সরকারের সদস্যসংখ্যা ২৪ জন। উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার একজন বিশেষ সহকারী, একজন আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বর্তমানে সচিব নেই। এসব দপ্তরে দায়িত্ব পাওয়া অতিরিক্ত সচিবরা সচিবের রুটিন কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। মাঠ প্রশাসনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ জেলা প্রশাসক (ডিসি)। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এখনো তাদের প্রত্যাহার করা হয়নি। শূন্য পদ পূরণে তোড়জোড় শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কোথাও কাউকে পদায়ন করার পরই আদেশ বাতিল করার ঘটনাও ঘটছে। এদিকে যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে দুটি ব্যাচের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা পদোন্নতির অপেক্ষায়। পদায়ন ও পদোন্নতির কাজে দক্ষতা দেখাতে না পারলেও উল্টো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা নানা বিতর্কে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছেন।

বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে গত ১৯ আগস্ট সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। তবে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের আরও কিছুদিন পদে রাখার ঘোষণার পর আবার ১২ আগস্ট বিভিন্ন পদে থাকা চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। পরে তা কার্যকর করা হয়। আবার প্রশাসনে নতুন করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও দেওয়া হয়। সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ১ সেপ্টেম্বর। জনপ্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ পদগুলোতে পরিবর্তন এসেছে। উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বদিউল আলম মজুমদার; পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন; বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান; দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান; জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। আর সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হলেও পরে তা পরিবর্তন করে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতার জেরে গত জুলাইয়ে দেশের অর্থনীতির প্রধান চারটি খাত সংকুচিত হয়। তাতে পিএমআইয়ের মান নেমেছিল ৩৬ দশমিক ৯-এ। এর আগের মাসে অর্থাৎ জুনে যা ছিল ৬৩ দশমিক ৯। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে পিএমআই মান ২৭ পয়েন্ট কমে যায়। এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। আগস্টে সূচকের মান বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ দশমিক ৫ পয়েন্টে। আর সেপ্টেম্বরে পিএমআই মান ছিল ৪৯ দশমিক ৭ পয়েন্টে।

সম্প্রসারণের ধারায় ফিরেছে দেশের অর্থনীতি। কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা খাতেই গতি ফিরেছে। তাতে এসব খাতের সূচকের মান বেড়েছে। গত অক্টোবর মাসের পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স বা পিএমআইয়ের সার্বিক মান আগের মাসের চেয়ে ৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫৫ দশমিক ৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরে এই সূচকের মান ছিল ৪৯ দশমিক ৭ পয়েন্টে। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের শতবর্ষের পুরোনো সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে এই সূচক প্রণয়ন করছে। গত বৃহস্পতিবার অক্টোবর মাসের পিএমআই প্রকাশ করা হয়। তাতে বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে গত মাসে অর্থনীতির সম্প্রসারণের চিত্র তুলে ধরা হয়। এর আগে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাস অর্থনীতি সংকোচনের ধারায় ছিল।

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাস অর্থনীতি সংকোচনের ধারায় ছিল। অর্থনীতির চারটি মূল খাতের (কৃষি, উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবা) কার্যক্রমের ভিত্তিতে পিএমআই তৈরি করা হয়। অক্টোবরের পিএমআইবিষয়ক এক বিজ্ঞপ্তিতে মেট্রো চেম্বার ও পলিসি এক্সচেঞ্জ জানিয়েছে, গত মাসে কৃষির পিএমআই সূচকের মান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ পয়েন্টে। সেপ্টেম্বরে এ খাতের সূচকের মান ছিল ৪৭ পয়েন্ট। অক্টোবরে উৎপাদন খাতের সূচকের মান বেড়ে হয়েছে ৫৬ দশমিক ৬ পয়েন্ট। সেপ্টেম্বরে এই খাতের সূচকের মান ছিল ৫২ দশমিক ৬ পয়েন্ট। এ ছাড়া নির্মাণ খাতের পিএমআই সূচকের মান ৪ পয়েন্টের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ১ পয়েন্টে। সেপ্টেম্বরে এ খাতের সূচকের মান ছিল ৪৬ পয়েন্ট। সেবা খাতের পিএমআই সূচকের মান বেড়ে হয়েছে ৫৬ দশমিক ৯ পয়েন্ট। সেপ্টেম্বরে যে মান ছিল ৪৯ দশমিক ৪ পয়েন্টে।

পিএমআই সূচকের মান ৫০-এর নিচে থাকার অর্থ হলো, অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। আর ৫০ পয়েন্টের বেশি থাকা মানে অর্থনীতি সম্প্রসারণের ধারায় রয়েছে। অক্টোবরের পিএমআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি খাতের নতুন ব্যবসা ও অন্যান্য তৎপরতায় গতি এসেছে। যদিও এই খাতে কর্মসংস্থানের হার কমছে। এ ছাড়া উৎপাদন খাতের নতুন ব্যবসা, রপ্তানি, কারখানার উৎপাদন সব ক্ষেত্রেই গতি ফিরেছে। কিন্তু এই খাতের আমদানি, কর্মসংস্থান, সরবরাহ এসব ক্ষেত্রে এখনো সংকোচনের ধারা অব্যাহত আছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন হয়েছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের কাছে আদানির পাওনা দাঁড়িয়েছে ৮৫ কোটি মার্কিন ডলার। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এরইমধ্যে প্রায় ৩৫ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে বলে জানা গেছে। আদানি বকেয়ার আরও অর্থ চায়। এজন্য তারা বাংলাদেশ সরকারকে চিঠিও দিয়েছে। এমনকি বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়েও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

নিত্যপণ্যের বাজারে এখনো স্বস্তি ফেরেনি। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ ভোক্তা। এতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে ভেবেছিল ভোক্তারা। কিন্তু পণ্যের দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। চাল, মাছ, মাংস, ডিম, সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে থাকছে না। জুলাই থেকে অক্টোবরে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম ৯ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত জুলাই ও অক্টোবর বাজারদর ও রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা ও মহাখালী কাঁচাবাজারের দর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত জুলাইয়ের তুলনায় অক্টোবরের খুচরা পর্যায়ে মোটা চাল ব্রি-২৮ ও পাইজাম প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১১ শতাংশ দাম বেড়ে মানভেদে ৬০ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৩ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দামও কেজিতে ৯ থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় উঠেছে। বাজারে মাছের সংকট না থাকলেও ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে মাঝারি রুই মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন সব ধরনের সবজির দাম চড়া। গত জুলাই মাসের তুলনায় অক্টোবরে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দামও ৩৩ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে রাজধানীর খুচরা বাজারে ঢেরশ, করলা, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল ও বরবটির মতো সবজিও এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে মিলছে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রাজধানীতে ৬৮ জন খুন হয়েছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজধানীতে খুনের ঘটনা ছিল ১১টি, অক্টোবরে ১৯টি। বেড়েছে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনাও। যদিও এ ধরনের ঘটনার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা মামলা করতে চান না। ডিএমপির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গত মাসের প্রথম ২৩ দিনে রাজধানীতে ২৬টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে। একই সময়ে ডাকাতির মামলা হয় চারটি। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ১৫টি ছিনতাই ও ৫টি ডাকাতির মামলা হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ২৯টি মামলা হয়েছিল, ডাকাতির কোনো মামলা হয়নি। ওই বছরের অক্টোবরে ছিনতাইয়ের মামলা ছিল ২৮টি, ডাকাতির মামলা ৩টি। নানা কারণে মোহাম্মদপুর আগে থেকেই রাজধানীর অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি। জনবল সংকটের কারণে পুলিশ সেখানে ঠিকমতো টহল দিতে পারছে না। পুলিশ, ভুক্তভোগী ও হাসপাতাল সূত্র বলছে, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে পুলিশি কার্যক্রম ভেঙে পড়ে। পরে পর্যায়ক্রমে সেটা স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করলেও হঠাৎ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও ডাকাতি বেড়ে গেছে।

ভূমি সেবায় জনগণের দুর্ভোগ ও হয়রানি বন্ধে ভূমি আইন সংস্কার ও ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালকরণে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। গত ২৪ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক প্রশাসন এ কে এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়েছে। ভূমি সেবায় জনগণের দুর্ভোগ ও হয়রানি বন্ধে সারাদেশে মাঠ প্রশাসনে ডিসি-এডিসি এবং এসিল্যান্ডদের নির্দেশনা দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

৫ সেপ্টেম্বর গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২৯ আগস্ট ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের বিশেষ নিরাপত্তা সুবিধা বাতিল করা হয়।

৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পদত্যাগ করেন। গত ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। একই দিনে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তার আগে ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামানকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেন। ৬ আগস্ট বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়। জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয় ২৮ আগস্ট। গত ১৩ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়। ৪ সেপ্টেম্বর সরকারি অর্থে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনার নামকরণের বিষয়ে আইনি কাঠামো ঠিক করতে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই দিনে সরকারের সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সর্বশেষ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ ২৯ জলবায়ু সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানসহ বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতা সাক্ষাৎ করেছেন।

এ সময় তাঁরা জলবায়ু সংকট সমাধানের উপায় এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ‘জলবায়ু সম্মেলনের সাইডলাইনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টসহ ২০ জন বিশ্বনেতা আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।’

তিনি বলেন, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ায় তাঁরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় তাঁকে অভিনন্দন জানান।

 

ভোরের আকাশ/রন