বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক খাত। গত বছর ৪৭.৩৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়। কিন্তু কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম হলেই প্রথম আঘাত আসে এই খাতের ওপর। জুলাই-আগস্টে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঢেউ লাগে এ খাতে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ১০-১৫ শতাংশ ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যায়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিলেও সংকট কাটেনি। তিন মাসেরও বেশি সময় রপ্তানি অঞ্চল আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরে শ্রমিক অসন্তোষ চরম আকার ধারণ করে। বিভিন্ন দাবিতে বিশেষ করে বেতন-ভাতা দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, গুজব, ন্যায্য ও অযৌক্তিক দাবি রয়েছে। এ জন্য বিদেশি শক্তিকে দায়ী করছেন এ খাতের সংশ্লিষ্ট অনেকে। এছাড়া কতিপয় মালিকের গাফিলতি এবং অনেক মালিক পলাতক থাকায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আবার তারল্য সংকটও এর জন্য দায়ী। ব্যাংক টাকা না দিতে পারায় বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছেন না অনেক মালিক।
অস্থিরতায় ইতোমধ্যে ১০-১৫ শতাংশ সম্ভ্যাব্য ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে গেছে বলে জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। কয়েকটি দেশ এই সুযোগকে ব্যবহার করে ক্রেতাগোষ্ঠীকে টানার চেষ্টা করছে। ‘বিদেশি শক্তির’ ইন্ধনের বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানোর কথা জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তবে শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকায় দুষ্কৃতকারীরা সুযোগ নিচ্ছে; শ্রমিক সেজে হামলা করছে। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠী নানা দাবিতে মাঠে নেমেছে। পোশাক ও ওষুধ শিল্পের শ্রমিকরাও ১০ দিনের বেশি সময় ধরে নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। পোশাক শ্রমিকদের দাবিগুলো সুনির্দিষ্ট নয়। একেক কারখানায় একেক ধরনের দাবি উঠছে। কোনো কোনো কারখানায় সমানুতিক হারে নারী-পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ; মাতৃত্বকালীন ভাতা, নাইট ভাতা এবং যেকোনো ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য বিক্ষোভ করা হয়। এটা মূলত বহিরাগতদের কাজ বলেই মনে করেন কারাখানা সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কোনো শ্রমিক এমন দাবি করতে পারে না।
সরকারের পক্ষে শুরুতে উসকানি ও ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়, যৌথ অভিযানও শুরু হয়। তারপরও শ্রমিক অসন্তোষ যেন থামছেই না। কয়েকদিন আগে টানা ৫৮ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের কর্মীরা। পরে বেতন দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এর আগে আশুলিয়ায় শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সেখানে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এছাড়া রাজধানীর মিরপুরেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়। সেখানে দুই শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়। তারা সেনাবাহিনী ও পুলিশের দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এই দুই স্থানে সংঘর্ষের পেছনেই ছিল গুজব। কেননা, শ্রমিকরা সেøাগান দিচ্ছিল ‘আমার ভাই মরল কেন, জবাব চাই, জবাব চাই’। আদতে সেখানে আগে কেউ মারা যায়নি। কেবল গুজব ছড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেতন না দিয়ে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের মালিক এখন বিদেশে পালিয়ে রয়েছেন। মালিক দেশে নেই- এমন যুক্তি দেখিয়ে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। ফলে শ্রমিকরা আন্দোলনের সুযোগ পাচ্ছেন। বিশেষ করে অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে দেশের পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করে। বেতন না পেয়ে সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর ও মিরপুরে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। শ্রমিকদের বেতন সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এ সময় সড়কের উভয় পাশে যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা স্থানীয় তারা টেক্স ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিক। এটি টঙ্গীর আউচপাড়া নাইমুদ্দিন মোল্লা সড়কে অবস্থিত। কারখানাটিতে কাজ করেন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। তাদের অক্টোবর মাসের বেতন বকেয়া। নিয়ম অনুযায়ী চলতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করার কথা। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন না দেওয়ায় সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এদিকে, শ্রমিকদের নামে করা মামলা প্রত্যাহার এবং বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুর সদর থানার বানিয়ারচালা (বাঘের বাজার) এলাকার অ্যাপারেলস-২১ লিমিটেড (লিথি গ্রুপ) কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে তারা মহাসড়কের বাঘের বাজার মণ্ডল ইন্টিমেন্টস পোশাক কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। আগের দিন ১২ নভেম্বর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে পার্কের প্রধান সড়ক অবরোধ করেন। কিছু শ্রমিক সরে গেলেও অবরোধ দীর্ঘক্ষণ ধরে স্থায়ী ছিল। এতে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। যদিও পরে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন তারা। টঙ্গীর তারাগাছ অ্যাপারেলসের প্রায় ২ হাজার শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন। কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বস্ত করেন নভেম্বরের ১৪ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করা হবে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন। সাভারের এজিআই অ্যাপারেলসের প্রায় ২ হাজার শ্রমিকও অক্টোবর মাসের বেতন চেয়ে কারখানার বাইরের সড়কে বিক্ষোভ করেন। মিরপুরে রিশাল গ্রুপের প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক অক্টোবর মাসের বেতন না পেয়ে কারখানা প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এছাড়া, গাজীপুরের বিকেএসপি এলাকায় ডরিন গার্মেন্টস হঠাৎ শ্রম আইন ১৩(১) ধারা অনুযায়ী সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করলে প্রায় ৫০০ শ্রমিক কারখানাটি পুনরায় চালুর দাবিতে জড়ো হন।
বহু দলে বিভক্ত শ্রমিক সংগঠন: গার্মেন্টস খাতে শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভেদ, প্রতিবেশী দেশের স্বার্থে কাজ করা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের অনুসারী ও শ্রমিক নেতাদের মধ্যে অনৈক্যের কারণে শ্রমিক অসন্তোষ বন্ধ হচ্ছে না বলে জানালেন বেশ কয়েকজন গার্মেন্টস মালিক ও শ্রমিক নেতা। একজন কারখানার মালিক বলেন, পোশাক খাতে শ্রমিকদের বিভিন্ন নামে অন্তত ১০০টি সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনের বা ফেডারেশন নেতাদের জবাবদিহি নেই। আরেকজন উদ্যোক্তা জানান, শুধু শ্রমিকদের নিজেদের রাজনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য সাধারণ শ্রমিকদের সড়কে নামিয়ে দেওয়া হয়।
ব্যাংকের তারল্য সংকটও দায়ী: ব্যাংক খাতের চলমান সংকটে বিপাকে পড়েছেন বেশ কয়েকজন গার্মেন্টস মালিক। তাদের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও শুধু ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না বেশ কয়েকটি কারখানা। শুধু তাই নয়, নগদ টাকার সংকটে এলসি খুলতে পারছে না- এমন ঘটনাও ঘটছে। এ প্রসঙ্গে সচল ও উৎপাদনে থাকা একটি কারখানার মালিক বলেন, আগের সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা বের করে নেওয়ার খেসারত দিচ্ছে গার্মেন্টস খাত। তিনি দাবি করেন, ব্যাংক যদি আগের মতো সাপোর্ট দিতো তাহলে কোথাও শ্রমিক অসন্তোষ থাকতো না।
আইনের শক্ত প্রয়োগ নেই: নতুন সরকার তিন মাস অতিক্রম করলেও গার্মেন্টস খাতের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আগের সরকারের লোকজনের হাতে। তারা শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের ইমেজ নষ্ট করার জন্য এই খাতকে বেছে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ থাকলেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শক্তহাতে আইন প্রয়োগ করছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কারখানার মালিক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতার সুযোগ নিয়েছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা। তিনি বলেন, পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের এখনও চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাক খাতে অধিকাংশ শ্রমিকই নিরীহ। তারা কাজে ডুবে থাকে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে হাতে গোনা কিছু শ্রমিক। এদের মধ্যে কিছু দুষ্কৃতকারী, কিছু এনজিওর লোক রয়েছে। তারা নিরীহ শ্রমিকদের অপকর্মে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতার সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক দলের হয়ে শ্রমিকদের একটি পক্ষ পোশাক খাতকে অস্থিতিশীল করছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতাকে সন্ত্রাসীরা মনে করছে- সেনাবাহিনী হোক আর পুলিশ হোক, গুলি তো করবে না। এ কারণে তারা ক্রিমিনাল কাজ করতে ভয় পাচ্ছে না। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জে একটি কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন দিতে পারেননি। এ কারণে ওই কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হামলায় চালিয়ে কারখানাটি ভাঙচুর করে। পাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা ওই সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।
বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, কিছু কারখানার মালিক সত্যি বিপদে আছেন। আবার ব্যাংকের কারণেও অনেকে সমস্যায় পড়েছেন। এটা অনেক শ্রমিক বুঝতে চান না। দেখা যায় মালিক বেতনের জন্য ব্যাংকে চেক দেন; কিন্তু ব্যাংকে নগদ টাকা না থাকায় শ্রমিকদের বেতন পেতে সমস্যা হচ্ছে। আগের সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা লুট হওয়ার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, এতো বড় শিল্প খাতে একটা দুইটা কারখানায় সমস্যা হতে পারে। ব্যাংকের অসহযোগিতার কারণেও বেতন পেতে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু শ্রমিকরা ধৈর্য ধরতে চান না। সমস্যা একটি বা দুটি কারখানায় অথচ সেটাকে কেন্দ্র করে ৩০টা কারখানার শ্রমিককে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে অরাজকতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা কোনও মতেই কাম্য নয়। তিনি উল্লেখ করেন, একটি বা দুটি কারখানার কারণে এতো শ্রমিক নেমে আসার বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি। যদি এই সেক্টরে অস্থিরতা তৈরি করাই তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে সাধারণ শ্রমিকরা সবাই সতর্ক হতে পারে। এদিকে মঙ্গলবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের যৌক্তিক সমাধান করা হবে। শ্রমিকদের রাস্তা অবরোধ করে, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ওপর ভরসা রাখুন। আমরা আপনাদের কষ্ট অনুভব করছি। আপনাদের ন্যায্য পাওনা অবশ্যই পাবেন।
মালিকপক্ষকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ভাতা সঠিকভাবে পরিশোধের আহ্বান জানিয়ে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, শ্রমিক ভাইবোনদের বকেয়া পাওনা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই মালিকদের কারখানা চলে। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। সব কারখানায় সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি ব্যত্যয়ের কোনো সুযোগ নেই। কেউ মজুরি বোর্ড বাস্তবায়ন না করলে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। মালিকপক্ষের সমস্যা পাওয়া গেলে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। শ্রমিক অসন্তোষ তৈরিতে বহিরাগতদের উসকানি রয়েছে কি-না, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
শ্রমিক অসন্তোষের কারণ অনুসন্ধান করা ও তা নিরসনে ক্লাস্টার ভিত্তিতে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত। তিনি বলেন, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, সাভারসহ কারখানা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ক্লাস্টার ভিত্তিতে কমিটি গঠন করতে হবে। ওই কমিটি মালিকপক্ষকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। তারা বেতন-ভাতা পরিশোধ করছেন কি-না, সেটিও নিশ্চিত করবে। শ্রমিক অসন্তোষ কেন হচ্ছে, তা অনুসন্ধান করে সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
বিদেশি শক্তির ইন্ধন: দেশের তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতার পেছনে ‘বিদেশি শক্তির’ ইন্ধনও দেখছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেছেন, পোশাক শিল্পে অসন্তোষের পেছনে এই শিল্পের ভিতরের কেউ খেলছে কি-না, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তৃতীয় পক্ষ (বিদেশি) কাজ করছে কি-না, তা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা জানতে কাজ করছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের পিছনে শ্রমিক নামধারী কিছু দুর্বৃত্তরা কাজ করছে। এছাড়া সাবেক এক সংসদ সদস্য ও মুরাদ জং এর অনুসারীদের হাত আছে।
সমাধান কী: অসন্তোষ থামিয়ে কারখানা খোলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোক্তাদের কারখানা যাওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন গাজীপুর জেলা গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি সাইফুল আলম। তিনি বলেন, মালিকরা যদি নিয়মিত ফ্যাক্টরি ভিজিটে যান, বেতনভাতা-বোনাস পরিশোধ করেন, মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে তবে অনেকাংশে কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষসহ বিভিন্ন সমস্যা দূর করা যায়। শিল্পক্ষেত্রে নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা নিরসনে শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মালিকপক্ষের ফলপ্রসূ আলোচনা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান চালিয়ে তা থামানো যাবে না। আর গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু মনে করেন, একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া দরকার, যেখানে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ থাকবে। তিনি বলেন, শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিক অসন্তোষ বা অস্তিরতা নিরসনে বিচ্ছিন্নভাবে একদিন এক শ্রমিক নেতাকে দিয়ে কিছু বলানো, আরেকদিন আরেকজনকে দিয়ে কিছু বলানো হচ্ছে- এভাবে সমস্যার সমাধান হবে না। একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া দরকার, ত্রিপক্ষীয় সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।
ভোরের আকাশ/রন