logo
আপডেট : ১৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:৩১
অর্থনীতিতে ৩ ধরনের ঝুঁকিতে দেখছে সিপিডি
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক

অর্থনীতিতে ৩ ধরনের ঝুঁকিতে দেখছে সিপিডি

আগামী দুই বছরে দেশের অর্থনীতিতে তিন ধরনের ঝুঁকি থাকবে বলে মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এই তিন ঝুঁকির পাশাপাশি দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ করহারসহ ১৭ ধরনের বাধায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসায় বাণিজ্য। আলোচ্য সময়ে তিন ধরনের সামাজিক ঝুঁকিও রয়েছে। যেগুলো হলো- বেকারত্ব, জ্বালানি ঘাটতি এবং হৃদরোগ, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস রোগের প্রাদুর্ভাব অর্থাৎ স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা ও সামিজিক অবক্ষয়।

গতকাল রোববার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ সংস্কার : অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডা’ শীর্ষক একটি সংলাপে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন।

সংলাপে প্রধান উপদেষ্টার (উপদেষ্টা) আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত অধ্যাপক লুৎফে সিদ্দিকী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি জাভেদ আখতার, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলী শামীম এহসান, ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আশরাফ আহমেদ ও বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।

প্রবন্ধ তৈরিতে দেশের সেবা, কৃষি, ম্যানুফ্যাকচারিং ও নন-ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের এক দশকের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার মানদণ্ডে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ও ভারতের চেয়ে পিছিয়ে। অর্থনীতির তুলনায় ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশে ডুয়িং ব্যবসা করার জন্য ১৭টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- দুর্নীতি, আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, নীতির অস্থিতিশীলতা, দুর্বল শ্রমশক্তি, উচ্চ করহার, উদ্ভাবনের জন্য অপর্যাপ্ত ক্ষমতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঝুঁকিপূর্ণ জনস্বাস্থ্য এবং শ্রমনীতির সীমাবদ্ধতা।

তবে দুর্নীতিকে মূল সমস্যা জানিয়ে মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা মনে করি দুর্নীতি সর্বদাই প্রধান সমস্যা। যদিও অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর সমস্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে। বছরের পর বছর অদক্ষ আমলাতন্ত্র একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা একটি বড় কারণ হয়ে উঠেছে। মুদ্রাস্ফীতি সব সময় বড় চিন্তার কারণ। অন্যদিকে নীতির অস্থিতিশীলতা একটি মাঝারি স্তরের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।

সংলাপে আরও বলা হয়, সার্বিকভাবে অর্থনীতির অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা, দুর্নীতি, প্রবৃদ্ধির হিসাবে গরমিলের কারণে অর্থনীতিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হচ্ছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনীতির বড় অনিশ্চয়তা এখন উৎপাদন খাতে। নানা রকম উদ্যোগের পরও সবচেয়ে বড় রপ্তানি শিল্প পোশাক খাতে উৎপাদনব্যবস্থা এখনো ভঙ্গুর রয়ে গেছে।

বিভিন্ন খাতের সমস্যা ও সংস্থার প্রসঙ্গে বলা হয়, এনবিআর বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, যার মধ্যে রয়েছে পরিচালনা, সাংগঠনিক এবং ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। এসব সীমাবদ্ধতার ফলে ট্যাক্স জালিয়াতি কমানোর চেষ্টা চলছে। বর্তমান ভ্যাট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং মূল ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলো প্রধানত ম্যানুয়াল।

এখানে স্বচ্ছতার জন্য আধুনিকীকরণের প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে। এছাড়া শিক্ষায় মাথাপিছু ব্যয় কম। এখানে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়গুলো প্রাথমিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা ও সকল শিক্ষার্থীর জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কর্মক্ষমতা পর্যালোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি আর্থিক খাতেও ন্যায়পাল নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।

 

ভোরের আকাশ/রন