গত রোববার (১৭ নভেম্বর) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। এই শতদিনে সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতার কথা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত রোববার (১৭ নভেম্বর) সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে তিনি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে দেশবাসীর কাছে সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতার উল্লেখ করেছেন। আমরা মনে করি, তিনি দেশ ও জনসেবায় অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন সেকথাই তার বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। তার বক্তব্যে দেশের সংকটময় পরিস্থিতির পরিবর্তন, উন্নয়ন, সংস্কারসহ তার সরকারের আগামী দিনের পথ চলার তুলে ধরা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তার সরকারের সততা, নিষ্ঠা ও বাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট সরকারপ্রধান পালিয়ে গেলে দেশ সরকার শূন্য হয় সাময়িকভাবে। পুলিশ প্রশাসনও এ সময় সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে উদ্বেগজনক এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাদের এক কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। এই পরিস্থিতি উত্তরণের পর স্বৈরশাসনে বিপর্যস্ত এ দেশকে সবাই মিলে পুনর্গঠন করতে হচ্ছে। ড. ইউনূস বলেন, আমরা মনে করি না যে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিলেই নির্বাচন আয়োজনে আমাদের দায়িত্ব শেষ। রাষ্ট্রব্যবস্থায় সংস্কার আমাদের এই সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। আপনারাই আমাদের এই ম্যান্ডেট দিয়েছেন। যে ছয়টি সংস্কার কমিশন আমরা শুরুতে গঠন করেছিলাম, তারা ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। কয়েকটি সংস্কার কমিশন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে। সংস্কার হলো জাতির দীর্ঘমেয়াদি জীবনীশক্তি। সংস্কার জাতিকে, বিশেষ করে আমাদের তরুণ-তরুণীদের নতুন পৃথিবী সৃষ্টির সুযোগ দেবে। নির্বাচনি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপও পাওয়া যাবে। সংস্কারের জন্য নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে। সংস্কার শেষে নির্বাচন করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক-জনতার শহীদি মৃত্যু হয়। সরকার প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে জোগাড় করছে। এই বিপ্লবে আহত হয়েছেন ১৯ হাজার ৯৩১ জন। আহত ব্যক্তিদের জন্য ঢাকার ১৩টি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবই। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব। গত ১৫ বছরের সব অপকর্মের বিচার করা হবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছেন, খুন হয়েছেন এই সময়ে। গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনপ্রধান তাকে জানিয়েছেন- অক্টোবর পর্যন্ত তারা এক হাজার ৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছেন। তাদের ধারণা, এই সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে যাবে। কেবল দেশে নয়, গুম, খুন ও জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক আদালতেও বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা সরকারের এসব উদ্যোগের সঠিক বাস্তবায়ন দেখতে চাই। একই সঙ্গে দেশ পরিচালনায়, দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে, জনগণকে সর্বোত্তম সেবা দেওয়া তথা রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সরকার সেই নজিরও তৈরি করতে হবে। আমরা মনে করি , গত ১৫ বছরে দেশের প্রশাসন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে, সেই প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনতে সংস্কার করতে হবে। তা নাহলে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ ব্যাহত হবে। সরকার পরিবর্তনের পর প্রশাসনের সীমাহীন দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অপকর্মের কথা প্রকাশ পাচ্ছে। প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তির যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকে উদ্ধার পাওয়াই হবে সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
আমরা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। অতীতের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত এমন প্রশাসন আর দেখতে চাই না । এ জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যেকের সম্পদের হিসাব প্রদান বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং কঠোরভাবে নিরীক্ষার মধ্যে রাখতে হবে।নিকট অতীতে প্রশাসনে থাকা প্রত্যেকের সম্পদ ও আয়ের উৎস মিলিয়ে দেখতে হবে। অসংগতি পাওয়া গেলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা চাই, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদীহীতা। প্রশাসন স্বচ্ছ হলেও দেশে দুর্নীতি কমে আসবে। আর এই দুর্নীতি হচ্ছে উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। সেটা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই মানুষ পাবে প্রকৃত সেবা। সর্বোপরি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সঠিক বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সরকার সেলক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।
ভোরের আকাশ/রন