মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো-বাইডেনের চার বছর পূর্তি হচ্ছে দুই মাস পর। আগামী ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিচ্ছেন তিনি। এদিন নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন বাইডেনের আগে চার বছর যুক্তরাষ্ট্র শাসন করা ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাটদের চিরাচরিত চিত্র পাল্টে ফেলেছেন বাইডেন। তার শাসনামলে ভয়াবহ যুদ্ধের শিকার হয়েছে বিশ্ব। অথচ মনে করা হয় ডেমোক্র্যাটরা যুদ্ধের বিপক্ষে। তারা শান্তির পক্ষে। কিন্তু বাইডেন বুঝিয়ে দিলেন- সাদা চোখে তাদের যেভাবে দেখা হয়; তারা আসলে তা নন। শেষ মুহূর্তে এসে তিনি ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। এতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছেন। মার্কিন অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা হলে কড়া জবাব দেওয়ার হঁশিয়ারি দিয়েছে ক্রেমলিন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, রাশিয়া মনে করে- আমাদের ভূখণ্ডের গভীরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সিদ্ধান্তের অর্থ হলো- উত্তেজনা নতুন করে বাড়ানোর পাঁয়তারা করা। আর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, মার্কিন অস্ত্র দিয়ে হামলা চালালে ইউক্রেনকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে। এখন দেখার বিষয় হলো মার্কিন অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেন হামলা করে কি না। যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি হামলা করার ব্যাপারে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুখে মুখে হামলা হয় না...ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিজেরাই কথা বলবে।’
প্রায় তিন বছর ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ করছে। এরই মধ্যে ইউক্রেনের বিশাল এলাকা দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। এই যুদ্ধে সরাসরি অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে অনেক বার জেলেনস্কি মার্কিন অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালানোর অনুমতি চেয়েছেন বাইডেনের কাছে। কিন্তু বাইডেন তাতে সাড়া দেননি। কিন্তু শেষ সময়ে এসে তিনি এই অনুমতি দিলেন। তার এই সিদ্ধান্ত যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার সূত্রপাত বলে মনে হচ্ছে। আবার এই যুদ্ধ থেমেও যেতে পারে। কেননা, ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অর্থ দিচ্ছে আমেরিকা এবং তার মিত্ররা। ট্রাম্প ৫ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচনের দিন বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর বলেছেন, তিনি নতুন যুদ্ধ শুরু করবেন না। তিনি সব যুদ্ধ থামিয়ে দিবেন। এমনকি এর আগে তিনি বলেছেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ হতো না। ট্রাম্পকে পুতিনের ‘ঘনিষ্ঠ’ বন্ধু বলে থাকেন ডেমোক্র্যাটরা। ট্রাম্প এই যুদ্ধ থামিয়ে দিবেন বলেই ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু এর আগে যদি যুদ্ধের ভয়াবহতা বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে ট্রাম্প ফেল করবেন- এমনটা বিবেচনায় নিয়ে বাইডেন মার্কিন অস্ত্র রাশিয়ার ভূখণ্ডে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। কেননা, যুদ্ধ বেঁধে গেলে তা থামানো কঠিন। এতে অনেক ধরনের হিসাব-নিকাশ থাকে। ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর ইউক্রেনের মানুষের মধ্যে এক প্রকার আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি মার্কিন সহায়তা কমাবেন- এটা নিশ্চিত। তার একজন উপদেষ্টা এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ভোটের আগে। আর মার্কিন সহায়তা না পেলে ইউক্রেনের লোকজনকে খাদ্য সংকটেও পড়তে হবে। জীবনযাত্রা আরও কঠিন হবে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যে বাঁধতে পারে- সেই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্পের ছেলে জুনিয়র ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, তার বাবা সব যুদ্ধ থামিয়ে দিতে চান। শান্তি ফিরিয়ে আনতে চান। এর আগেই বাইডেনরা যুদ্ধের বিস্তৃতি বাড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এখন মোদ্দা কথা হলো- ইউক্রেন মার্কিন অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে হামলা করলে কড়া জবাব দেবে ক্রেমলিন। তারা সর্বশক্তি দিয়ে হামলা করবে। একই সঙ্গে রাশিয়ার আশপাশে থাকা মার্কিন মিত্রদেশগুলোও মস্কোর হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে। আর এটা হলে অন্যদেশগুলোও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।
ভোরের আকাশ/রন
ভোরের আকাশ/রন