বিদ্যুৎ নিয়ে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে সব চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করতে উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দুই মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। এ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এম কাইয়ুম। এ ছাড়া শুনানিতে আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে আদানি পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চুক্তি কেন পুনর্বিবেচনা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। মামলার বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
অনুসন্ধান কমিটিতে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ রাখতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এক মাসের কমিটি গঠন করে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ নিয়ে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে অসম চুক্তি বাতিল করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। এছাড়া ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তির সময় যে দর কষাকষি হয়েছিল, তার নথি এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
গত ১৩ নভেম্বর ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত সব চুক্তি বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ব্যারিস্টার এম কাইয়ুম জনস্বার্থে এ রিট করেন। রিটে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনায় আদানির সঙ্গে ‘তাড়াহুড়া’ করে ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি হয়। ওই সময় দেশে আমদানি করা কয়লানির্ভর কোনও বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়নি। এসব চুক্তির একটি ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে করা ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডে আদানির এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মূলত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় পর্যালোচনা কমিটির সভায় ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়। এসব তথ্য-উপাত্ত ও নথি কমিটিকে সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে আছে ভারতের আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এদিকে গত ৬ নভেম্বর বিদ্যুৎ নিয়ে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠান হয়। নোটিশে বলা হয়েছিল, অবিলম্বে অন্যায্য একতরফা চুক্তি পুনর্বিবেচনা অথবা পুরোটাই বাতিল চাওয়া হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে আদানিকে এই ঘটনায় চুক্তি পুনর্বিবেচনার কার্যক্রম শুরু না করলে হাইকোর্টে রিট করবেন বলেও জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্যও নোটিশে আহ্বান জানানো হয়েছিল। নোটিশের জবাব দিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তিন দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সে নোটিশের সময় পেরিয়ে যাওয়ায় রিটটি দায়ের করা হয়।
ভোরের আকাশ/রন