গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কড়াইবাড়ী চর সহ বিভিন্ন চরগুলো দুর্যোগ প্রবণ এলাকা হওয়ায় দারিদ্রতা ও জীবন জীবিকার মান উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে পড়ছে সেখানকার গায়ে গতরে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। এ জেলার ৪ টি উপজেলা নদী বেষ্টিত যেমন গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা।
গাইবান্ধার বেসরকারি অলাভজনক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডশিপ এর এ্যাসিসটেন্ট ফর সাসটেনেবল ডিভিলপমেন্ট ট্র্যান্সিশন ফান্ড (এ,এস,ডি) প্রজেক্ট এর বাস্তবায়নে ও ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ এর আর্থিক সহযোগিতায় গাইবান্ধা সদরের কামারজানি, ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ও ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া সহ ৩টি ইউনিয়নের ৮টি চরাঞ্চলের মানুষকে উন্নতজাতের ভেড়া প্রদান করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্বাবলম্বী করে তুলছে। ফ্রেন্ডশিপ এ,এস,ডি প্রজেক্ট এর আওতায় গাইবান্ধার ৮ টি চরের প্রতিটি ঘরে ৩০ জন করে মোট ২শ ৪০ টি সুবিধাভোগীদের মাঝে উন্নতজাতের ভেড়া প্রদান করা হয়েছে। আর এই ভেড়া বিক্রি করে চরাঞ্চলের মানুষদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে। এতে করে আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি নারীদের মিলছে কাজের সুযোগ।
ফ্রেন্ডশিপ উল্লেখিত প্রকল্পের কর্মএলাকাগুলো হচ্ছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানির কড়াইবাড়ি চর, ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাশিয়া চর।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কড়াইবাড়ি চরের বাসিন্দা এ,এস,ডি প্রজেক্ট এর সদস্য সুবিধাভোগী ফতেজা বেগম বলেন, আগে হামরা নারীরা অবহেলিত ছিলাম। ফ্রেন্ডশিপ এর সুযোগ সুবিধা পেয়ে হামরা নারীরা আর অবহেলিত বা পিছিয়ে নেই। আগে হামরা অনেক কষ্টে ছিলাম। ফ্রেন্ডশিপ হামারঘরোক (আমাদের) উন্নতজাতের ভেড়া দেয়ায় হামার ঘরে জীবিকার মান উন্নয়ন হচ্ছে। ফ্রেন্ডশিপের দেয়া একটি গাভীন ভেরা থেকে অনেকগুলো ভেড়া হয়েছে। একটি ভেড়া হামরা ৬/৭ হাজার টাকা করে বিক্রি করে এখন আমরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চলেছি।
আরেক জন সুবিধাভোগী বাবলি বেগম বলেন, বাড়ির আশেপাশে পতিত জমি রয়েছে। ফ্রেন্ডশিপ এনজিও থেকে বিভিন্নপ্রকার সবজির বীজ দিয়েছে হামাকে। সেই বীজ বাড়ির উঠান সহ পতিত জমিতে লাউ সহ বিভিন্ন প্রকার সবজি পরিচর্যা করে নিজেদের খাবারের চাহিদার পাশাপাশি নিকটস্থ বাজারে বিক্রি করে বাচ্চার লেখাপড়া ও সংসারের যাবতীয় খরচ চালানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চলেছি।
ফ্রেন্ডশিপ প্রজেক্ট ম্যানেজার দিবাকর বিশ্বাস বলেন, আমাদের কাজের মধ্যে রয়েছে সবজি চাষ। আধুনিক পদ্ধতিতে ভেড়া চাষ। পরিতাক্ত জায়গায় সঠিকভাবে সবজি চাষ। এখানে আমরা কমিটি করেছি। কমিটিতে ৩০ জন সদস্য রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে মিটিং এর মাধ্যমে তাদের শেখানো হয় বসতবাড়ীতে সবজি চাষ। ভেড়া লালন পালনের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া।ভেড়া ৬ মাস পর থেকে বাচ্চা ধারনের সক্ষমতা হয়। একটি পূর্ন বয়স্ক ভেড়া ২৮ থেকে ৩০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে এবং তা বাজারে বিক্রি করলে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। ভেড়ার মৃত্যুহার কম। ভেড়া বন্যা সহ্য করতে পারে। কিন্তু অন্য পশু তা পায়না। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা উন্নতজাতের ভেড়া পালন ও পরিচর্যা করে এখন আত্নকর্মসংস্থান ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। একবছরে ৩০ টি ভেড়া থেকে ৭০ টি হয়েছে ভেড়া। যারা এখানে সঞ্চয়ী রয়েছেন তারা সঞ্চয়ের মাধ্যমে কিছু টাকা সঞ্চয় করছেন যাতে বন্যাকালীন সময়ে বন্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারে। চরে ভুমিহীন যে সকল মানুষ রয়েছে তারা যাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে। এরা যে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে টিকে না থাকতে পেরে বড় শহরে বসবাস করতে শুরু করবে। এতে করে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রকট আকার ধারন করবে। যেখানে আছে সেখানে যেন থাকতে পারে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে আমরা এই পদক্ষেপ নিয়ে থাকি।
উল্লেখ্য, ফ্রেন্ডশিপ একটি বেসরকারি, অলাভজনক, অরাজনৈতিক এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ২০০২ সাল হতে বাংলাদেশের দুর্যোগ প্রবণ অঞ্চলে, বিশেষ করে চড় উপকূলীয় এলাকায় দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করে আসছে। টেকসই উন্নয়ন সরকারি সরকারি উদ্যোগে সহায়ক হিসেবে দরিদ্র মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সংস্কৃতির রক্ষণ, সুশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন ফ্রেন্ডশিপের অন্যতম কার্যক্রম।
ভোরের আকাশ/মি