ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অর্থনীনিতে চরম অস্থিরতা চলছে। আওয়ামী লীগ ঘরানার অনেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। ফলে অনেকে কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না। সার্বিক পরিস্থিতিতে গত তিন মাসে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯১০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ টাকার বড় অংশই আদায় অযোগ্য বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ব্যাংক খাতেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। এই ঋণের বড় অংশই আদায় অযোগ্য। গত জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। ফলে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে; তখন খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাত সংস্কারে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে ৯টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে; যার বেশির ভাগের নিয়ন্ত্রণ ছিল এস আলম গ্রুপের হাতে। পরিস্থিতি উত্তরণে ব্যাংকগুলোকে নানা নির্দেশনাও দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের চিত্র আগামী দিনে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। খেলাপি ঋণ উদ্ধারে করণীয় সম্পর্কে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ঋণখেলাপিদের প্রশ্রয় দেওয়ায় খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। প্রকৃত খেলাপি ঋণ এখন ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়া ঋণ ও অবলোপন করা ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে আসেনি। ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সব ব্যাংকের শীর্ষ ১০ খেলাপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের সম্পত্তি জব্দ করে টাকা আদায় করতে হবে। না হলে টাকা আদায় হবে না, খেলাপিরা আইনি ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাবেন।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের মধ্যে তালিকার শীর্ষে রয়েছে জনতা ব্যাংক। এর খেলাপি ঋণ প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রধানত বড় তিনটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কারণে। এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের ১৮ হাজার কোটি টাকা; অ্যাননটেক্স গ্রুপের প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা এবং এস আলম গ্রুপের ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা কোনো কিছু গোপন করছি না। ফলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এত বেড়ে গেছে। খেলাপি হয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগও করছি। তারা টাকা জমা দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল করার চেষ্টা করছে। বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, এখন নিরপেক্ষ নিরীক্ষা করে খেলাপি গ্রাহকের প্রকৃত চিত্র বের করতে হবে। খেলাপি ঋণের সমস্যা কতটা গভীর, তা জানতে হবে। এসব ঋণের বিপরীতে থাকা জামানতের প্রকৃত মূল্য বের করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে ঋণ আদায় হতে পারে। শুধু ঢালাও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঋণ আদায় হবে না।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত : বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিপত্রে দেখা গেছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা; যা মোট ঋণের প্রায় ৮ শতাংশ। তালিকার শীর্ষে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি এখন বেসরকারি ব্যাংকেও খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি, সাবেক ও বর্তমান আমলাদের পর্ষদে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়োজিত পর্যবেক্ষকও অনেক বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণে লাগাম পরাতে পারছে না।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলারের যে ঋণ দিয়েছে। এ জন্য কয়েকটি শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। এর একটি শর্ত হচ্ছে ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। তবে একেবারে উল্টোটিই ঘটেছে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে। কোভিড মহামারি শুরু হলে সব ধরনের গ্রাহককে ঋণ পরিশোধ না করার সুবিধা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে কিছু ভালো ঋণগ্রহীতাও ঋণ পরিশোধে অনাগ্রহী হয়ে ওঠেন।
সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দিয়ে ঋণ খেলাপিদের ঢালাও ছাড় দিয়ে নতুন নীতিমালা জারি করেন। আড়াই থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেওয়া হয়। খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে আগে জমা দিতে হতো ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ। এর পাশাপাশি খেলাপি ঋণ পাঁচ থেকে আট বছরে পরিশোধের সুযোগ রাখা হয়। আগে এসব ঋণ শোধ করতে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো।
নতুন নীতিমালায় খেলাপি ঋণের বিপরীতে সুবিধা প্রদান এবং তা পুনঃতফসিলের ক্ষমতাও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের হাতে ছেড়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ব্যাংকমালিকেরাই ঠিক করেছেন কোন ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা পাবে। আগে ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগতো। ফলে খেলাপি হয়ে পড়া ঋণ আড়াল করার সুযোগ আরও বেড়েছে। এরপরও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির যে চিত্র মিলছে, তা ভয়াবহ ও আতঙ্কের বলে মনে করেন ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকায় মোট ঋণের পরিমাণ ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। দেশে মোট ঋণখেলাপি গ্রাহকের সংখ্যা ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫। তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি বিএনপির নেতাদের প্রতিষ্ঠানও রয়েছে শীর্ষ খেলাপির তালিকায়। ২০ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টিই চট্টগ্রামের। ২০ খেলাপির তালিকার বেশির ভাগই বিদ্যুৎ, জাহাজ নির্মাণ, পাদুকাশিল্প, ভোগ্যপণ্য ও ইস্পাত খাতের প্রতিষ্ঠান। খেলাপির তালিকা অনুযায়ী, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এটি গড়ে তুলেছিলেন ৭ জন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারেও তালিকাভুক্ত ছিল। তবে আর্থিক অব্যবস্থাপনার কারণে এখন ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকায়। এটি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর রাইজিং স্টিল লিমিটেডের ঋণ ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। চট্টগ্রামের পুরোনো ব্যবসায়ী পরিবার মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্সের ঋণের পরিমাণ ৯৬৫ কোটি টাকা। তবে শুধু রাজনীতি করা ব্যবসায়ীরাই যে খেলাপি হচ্ছেনÑ এমনটা নয়। যেমন দেশের অভিজাত ব্যবসায়ী ও প্রয়াত শিল্পী নিতুন কুণ্ডুর ছেলে অনিমেষ কুণ্ডুর কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেডের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮১১ কোটি টাকা।
চট্টগ্রামের সাদ মুসা ফেব্রিকসের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। এর কর্ণধার মোহাম্মদ মহসিন। তিনি নতুন প্রজন্মের সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মেরিডিয়ান ফাইন্যান্সের সাবেক পরিচালক। প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রামের রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলসের খেলাপি ঋণ ৭৭০ কোটি টাকা।
নারায়ণগঞ্জের বি আর স্পিনিং মিলসের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭২১ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের এস এ গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আলমের এস এ অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের ঋণ ১ হাজার ১৭২ কোটি টাকা ও সামান্নাজ সুপার অয়েলের ১ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। শাহাবুদ্দিন আলম মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক।
এ ছাড়া নতুন করেও কিছু প্রতিষ্ঠান শীর্ষ খেলাপির তালিকায় উঠে এসেছে। এর মধ্যে মানহা প্রিকাস্ট টেকনোলজির ৬৪৭ কোটি টাকা। এর ঠিকানা ধানমণ্ডির ১৬ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাসায়। আর আশিয়ান সিটির প্রতিষ্ঠান আশিয়ার এডুকেশন লিমিটেডের খেলাপি ঋণ ৬৫৩ কোটি টাকা। আশিয়ান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের আরএসআরএম স্টিলের প্রতিষ্ঠান এস এম স্টিল রি-রোলিং মিলের ঋণ ৮৮৮ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠান দুটি রতনপুর গ্রুপের। গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুর রহমান। তিনিও সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সাবেক পরিচালক।
রাজধানীর অ্যাপোলো ইস্পাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৭২ কোটি টাকা। এটি প্রয়াত শিল্পোদ্যোক্তা দীন মোহাম্মদের প্রতিষ্ঠান। তার ফিনিক্স গ্রুপ ও অ্যাপোলো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক ও ফিনিক্স ফাইন্যান্সের অন্যতম উদ্যোক্তাও ছিলেন তিনি। তার মুত্যুর পর নেতৃত্বশূন্যতায় গ্রুপটির সব প্রতিষ্ঠাই এখন ঝুঁকছে। আবার মৃত্যুর পর কর্মকর্তাদেরও অনেকে সুযোগ নিয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামের এহসান স্টিল রি-রোলিং মিলের খেলাপি ঋণ ৬২৪ কোটি টাকা ও সিদ্দিক ট্রেডার্সের ঋণ ৬৭০ কোটি টাকা।
এদিকে, দেশের শীর্ষ পাঁচটি শিল্পগোষ্ঠী কর ফাঁকি দিয়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ লক্ষ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।
ধারাবাহিকভাবে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আয়কর আইন, ২০২৩ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর অধীনে কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে না দেওয়া কর উদ্ধারের পাশাপাশি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঋণ পরিশোধ না করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীরা ইউরোপ, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, দুবাই, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থায়ী আবাস গড়েছেন। এসব ব্যবসায়ী ভোগ্যপণ্য, শিপ ব্রেকিং, গার্মেন্টস, আবাসন, কৃষি ও পরিবহন খাতে বিনিয়োগের কথা বলে দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন।
এসব সমস্যা সমাধানে বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ পর্যন্ত গৃহীত পদক্ষেপগুলো হলো:
১. ব্যাংক কমিশন গঠনের উদ্যোগ।
২. কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করা।
৩. বিদেশে পাচার হওয়া মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা।
৪. অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা।
৫. ঋণখেলাপিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা।
উল্লেখ্য, ঋণখেলাপিদের আটকের হার তুলনামূলকভাবে কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ তারা বেশিরভাগ আগেই পালিয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হলো পালিয়ে থাকা ঋণখেলাপিদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কী হবে? কারণ পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তারা টাকা সরিয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয় ঋণখেলাপিদের অনেকে বিদেশে পালিয়ে থাকলেও তাদের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা সদর্পে দেশে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে ও বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করছে। অথচ ঋণখেলাপিদের স্ত্রী ও সন্তানরাও তাদের ব্যবসায়ের অংশীদার ও অপরাধের ভাগীদার।
ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক খোদ আওয়ামী লীগ আমলেই সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স (এসনিএসি) ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ ও তার একমাত্র মেয়ে তাজরি আমজাদসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে ও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তারপর আমজাদ ও তার পরিবার আমেরিকা পালিয়ে থাকার পর তৎকালীন সরকারের সাথে বোঝাপড়ার মাধ্যমে আবার দেশে ফিরে আসেন। কোনো ঋণখেলাপিরই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এ দেশ যেন ব্যাংক লুটেরাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।