কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তায় তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠতে তিন ব্যাংক পেল ২৬৫ কোটি টাকা। একই সঙ্গে বন্ড ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে দুই হাজার কোটি টাকার তোলার অনুমতি পেয়েছে পাঁচ ব্যাংক। পাশাপাশি ‘দুর্বলদের রক্ষায়’ সম্মত হয়েছে সবল ১০ ব্যাংক। তারল্য সংকট কাটাতে ন্যাশনাল, এক্সিম ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ২৬৫ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে কে কত পেয়েছে, সেই হিসাব প্রকাশ হয়নি। এই তিন ব্যাংককে টাকা দিয়েছে ডাচ বাংলা, সিটি, ইস্টার্ন ও পূবালী ব্যাংক। এই চার ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি বরাবরই বেশ মজবুত।
তারল্য ঘাটতি মেটাতে গত সপ্তাহে ‘দুর্বল’ সাত ব্যাংককে ৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার সহায়তা দেয় ১০ ব্যাংক। সেদিন কোন ব্যাংককে কত টাকা দেওয়া হয়েছিল, সেই হিসাব প্রকাশ করা হয়েছিল। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ১৭টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে সভা করেন। সেই সভায় দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা অব্যাহত রাখতে শক্তিশালী ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করেন তিনি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হয়ে আহসান এইচ মনসুরের প্রথম ঘোষণা ছিল, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আর কোনো সহায়তা দেওয়া হবে না। তার এই বক্তব্যের পর গ্রাহকরা আতঙ্কিত হয়ে টাকা তুলে নিতে থাকে অনেক ব্যাংক থেকে।
এদিকে বন্ড ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে দুই হাজার কোটি টাকা তোলার অনুমতি পেয়েছে ৫ ব্যাংক। গত মঙ্গলবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা বিএসইসি এই অর্থ তোলার অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫০০ কোটি টাকা তুলতে পারবে ইসলামী ব্যাংক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫০ কোটি টাকা তোলার অনুমোদন পেয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক। ঢাকা ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া তুলতে পারবে ৪০০ কোটি টাকা করে। এক্সিম ব্যাংককে ২৫০ কোটি টাকা তোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিএসইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বন্ডগুলো হবে নন কনভার্টেবল, আনসিকিউরড, ফুললি রিডিমেবল। এর রেট থাকবে ফ্লোটিং। বন্ডের অর্থ দিয়ে ব্যাংকগুলো টিয়ার-২ মূলধন বাড়াবে। অন্যদিকে, দুর্বলদের রক্ষায়’ সম্মত হয়েছে ‘সবল’ ১০ ব্যাংক। গতকাল বুধবার গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে ১০ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) তারল্য সহায়তা দিতে সম্মতি প্রকাশ করেছেন। তারল্য সংকটে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোর লেনদেন কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজার থেকে তাদের সহায়তা দিতে আপত্তি নেই ১০টি ‘সবল’ ব্যাংকের।
দীর্ঘদিন তারল্য সংকটে ভোগা ডজনখানেক বাণিজ্যিক ব্যাংক রক্ষায় টাকা না ছাপিয়ে কীভাবে তাদের সংকট কাটানো যায়, তার উপায় হিসেবে এই ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগ দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এই প্রক্রিয়ায় আসতে রাজি সবল ও দুর্বল ব্যাংকগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে এমন সুযোগ তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যারা তারল্য সহায়তা পেতে দুর্বল ব্যাংকের গ্যারান্টর বা জামিনদার হচ্ছে। সর্বশেষ এই অগ্রগতির আগেই সংকটে থাকা সাতটি ব্যাংক তারল্য সহায়তা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংককে গ্যারান্টর হওয়ার জন্য আবেদন করেছে। এই সাত ব্যাংক মিলে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি নগদ অর্থ সহায়তা চেয়েছে। আবেদন করা সাত ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়তা চেয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, যারা সাত হাজার ৯০০ কোটি টাকার চাহিদা দিয়েছে। ইসলামী ও ন্যাশনাল ব্যাংক পাঁচ হাজার কোটি করে, এক্সিম চার হাজার কোটি, গ্লোবাল ইসলামী তিন হাজার ৫০০ কোটি, স্যোশাল ইসলামী দুই হাজার কোটি এবং ইউনিয়ন ব্যাংক দেড় হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। যেসব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, তারা এখন আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করে বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্যারান্টির জন্য পাঠাবে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার দেওয়া গ্যারান্টির আওতায় কোন ব্যাংক কত টাকা নিতে পারবে, তা বিবেচনা করে অনুমতি দেবে।
ভোরের আকাশ/রন