logo
আপডেট : ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ০৯:২৫
ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক নতুন যুগে
সিরাজুল ইসলাম

ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক নতুন যুগে

স্বাধীনতার পাঁচ যুগ পর বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনীতিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার পর থেকেই দেশ দুটির সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে। দেশ দুটির মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের করাচি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য নিয়ে জাহাজ এসেছে। ইসলামাবাদ সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে ঢাকাকে অনুরোধ করেছে। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এদিকে পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ খবরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বাংলাদেশি ১০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশন বলছে, তারা রাজনীতি নয়, ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) উর্দু বিভাগ চালু করা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সমালোচনা হয়। তবে তা গায়ে মাখেনি সরকার। সব মিলিয়ে দেশ দুটির সম্পর্ক এখন নতুন যুগে প্রবেশ করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের সামা টিভির খবরে বলা হয়, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০টি স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এই স্কলারশিপ প্রদানের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন। বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আরও প্রসারিত হলো।

ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদারকি করছেন। সরকারিভাবে অনুমোদন পাওয়ার পর পাকিস্তানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব পোর্টালে বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যুক্ত করবে। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্কলারশিপ প্রাপ্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা শুরু হয়েছে বলেও সামা টিভির খবরে দাবি করা হয়।

এদিকে, দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কূটনীতির নতুন যুগের সূচনা হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। তাই দুই দেশের অবশ্যই রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে বাণিজ্য জোরদারের সুযোগকে কাজে লাগানো উচিত। গত সোমবার বিকেলে ঢাকায় একটি হোটেলে আয়োজিত তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনে (বঙ্গোপসাগরীয় সংলাপ) নির্ধারিত বক্তা হিসেবে রাষ্ট্রদূত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের বক্তৃতার প্রতিপাদ্য ছিল, ‘আধুনিক যুগে অর্থনৈতিক কূটনীতি’। তিনি তার বক্তৃতায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আন্তরাষ্ট্রীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনা এবং বর্তমান হালচাল নিয়ে কথা বলেন। এরপর তিনি কথা বলেন দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়ে। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বর্তমান পরিসংখ্যান এবং সম্মিলিত অর্থনীতির আকারের তুলনায় বিপুল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন পাকিস্তানের হাইকমিশমনার। তিনি বলেন, সঠিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, বাণিজ্য সহজীকরণ ব্যবস্থার বর্ধিতকরণ এবং অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর নতুন করে গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান বাণিজ্যের পরিমাণ যথেষ্ট বাড়াতে পারে। দুই দেশ বস্ত্র, কৃষি, জ্বালানি এবং প্রযুক্তির মতো খাতে সহযোগিতার নতুন উপায় খুঁজতে পারে।

পাকিস্তানের হাইকমিশনার বলেন, বাণিজ্য শুধু আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে না; বরং এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনে অবদান রাখবে। যেহেতু আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার সুযোগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছি, আমার বিশ্বাস, আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক আগামী বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কের একটি মূল স্তম্ভ হবে।

আহমেদ মারুফ বলেন, ১১ নভেম্বর মাত্র ১০ দিনের মধ্যে করাচি থেকে একটি জাহাজ সরাসরি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। এ ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে দুই দেশের ব্যবসার সম্প্রসারণকে উৎসাহ জোগাবে।

পাকিস্তানি হাইকমিশনার বলেন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আঞ্চলিক একীকরণের ওপর জোর দিয়ে দুই দেশের জনগণের বৃহত্তর সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার স্বার্থে আমরা একটি পথ ধরে এগোতে পারি। তাই আমাদের অবশ্যই রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে নিবিড় বাণিজ্য সম্পর্কের স্বার্থে সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে এত দিন সরাসরি কোনো কনটেইনার জাহাজসেবা ছিল না। দুই দেশের বাণিজ্যও বিলিয়ন ডলারের কম। তবে সরকারের পটপরিবর্তনের পর হঠাৎ গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার জাহাজ পরিষেবা চালু নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

এ আগ্রহের সূত্রপাত ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাস বিষয়টি এক ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরার পর। বুধবার এক পোস্টে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আহমেদ মারুফের বক্তব্য তুলে ধরে বলা হয়, সরাসরি জাহাজ পরিষেবা পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর একটি বড় পদক্ষেপ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বাণিজ্য রয়েছে, তাতে সরাসরি কনটেইনার জাহাজসেবা চালুর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানায়, গত অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়েছে ৭৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের পণ্য। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল সুতা-কাপড় ও প্রস্তুত চামড়া ছিল ৭৯ শতাংশ বা ৫৯ কোটি ডলার। এ ছাড়া সিমেন্টশিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, ফল, শুঁটকি ও মেয়েদের থ্রি-পিস আমদানি হয়েছে। আবার একই সময়ে পাকিস্তানে রপ্তানি হয় ৬ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য। রপ্তানির তালিকায় রয়েছে কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা ও তৈরি পোশাক।

গত অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে মোট আমদানি পণ্যের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে কনটেইনারে আনা হয়Ñ এমন পণ্যের পরিমাণ ছিল তিন লাখ টনের কম। শিপিং ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাকিস্তান থেকে মাসে সর্বোচ্চ এক-দেড় হাজারের বেশি কনটেইনারে পণ্য আমদানি হয় না; যা দিয়ে একটি জাহাজসেবা চালু করা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, আমদানি ব্যয়ের দিক থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে। সে সময় পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি ব্যয় ছিল ৮০ কোটি ডলার।

এখন বাণিজ্য কমলেও কেন সরাসরি জাহাজসেবা চালু হলো? এ প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা জানান, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। আগে দেশটির পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হতো। গত ২৯ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে এনবিআর তা তুলে নিয়েছে। তাতে সামনে আমদানি বাড়তে পারে, এমন আশায় নতুন এই সেবা চালু হয়েছে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য খুব বেশি নয়। আমদানিতে কড়াকড়ি শিথিল করায় হয়তো সামনে বাড়তে পারে, এ জন্যই এই সেবা চালু হতে পারে। কনটেইনার জাহাজের সেবা প্রথমবার হলেও দুই দেশের বন্দরগুলোর সঙ্গে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ অনিয়মিতভাবে চলাচল করছে।

শিপিং সূত্র জানায়, দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ফিডার লাইনস ডিএমসিসি’ একটি কনটেইনার জাহাজ দিয়ে নতুন এই সেবা চালু করেছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গ্রুপটির পাকিস্তানের করাচির সঙ্গে ব্যবসা রয়েছে।

বাংলাদেশে কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে রিজেনসি লাইনস লিমিটেড এই সংস্থার বাংলাদেশে স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি নিয়ে জানতে গ্রুপটির নির্বাহী পরিচালক আনিস উদ দৌলার মোবাইল ফোনে কল করা হয়। তবে তিনি কল গ্রহণ করেননি। এ কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে গ্রুপটির একজন কর্মকর্তা একজন সাংবাদিককে বলেন, নতুন এই কনটেইনার জাহাজের পরিষেবা শুধু পাকিস্তান-বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আরও চারটি দেশ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দর থেকেও পণ্য আনা-নেওয়া করবে। এই ছয় দেশে পুরো একবার যাত্রা শেষ করতে সময় লাগবে ৩৮ দিন। অর্থাৎ পণ্য আনা-নেওয়া মিলে পুরো যাত্রা শেষ করতে সময় লাগবে ৭৬ দিন। এখন পর্যন্ত ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামে একটি জাহাজ দিয়ে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে।

বন্দরসচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ জাহাজটিতে করে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি হয়েছে ৩৭০ একক কনটেইনার। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নেওয়া হয়েছে ২৮৯ একক কনটেইনার। এর মধ্যে পণ্যবাহী কনটেইনার ছিল একটি। বাকিগুলো সব খালি কনটেইনার।

বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, ছয় দেশের এই জাহাজসেবার প্রথম যাত্রায় পণ্য আমদানি হয়েছে মূলত পাকিস্তান থেকে। পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র একটি কনটেইনারে, তা-ও গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং।

ফ্লাইট চালুর অনুরোধ : সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ অনুরোধ পেয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান। গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, পাকিস্তান থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালুর অনুরোধ পেয়েছে বাংলাদেশ। বিষয়টি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ যাচাই করছে। এ সময় ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি দুদেশের সম্পর্কের জন্য মোটেই কাম্য নয়। এ বিষয়ে ভারতের হাইকমিশনারকে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো পুনর্মূল্যায়নের বিষয়ে গত ১০০ দিনে অগ্রগতি সীমিত। তবে আগামী দিনে অগ্রগতি হবে বলে আশা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, ডিসেম্বরে ভারত-বাংলাদেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে। দুদেশের সম্পর্ক এর মাধ্যমে গতিশীলতা পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক সবসময়ই একটা সংবেদনশীল বিষয় ছিল। ১৯৭১ সালের ইতিহাস বিবেচনায় এ নিয়ে আলোচনা, রাজনীতি কম হয়নি। তবে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে আওয়ামী লীগ আমলে, বিশেষত যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রেক্ষাপটে।

তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নানা পরিবর্তনের মতো এখানেও কিছুটা ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। আভাস পাওয়া যাচ্ছে সম্পর্কের নতুন রসায়নের।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ যেহরা বালোচ জানান, বাংলাদেশের ব্যাপারে পাকিস্তান সবসময়ই একটা শ্রদ্ধাশীল, ইতিবাচক ও গঠনমূলক অবস্থানের আগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে সমস্যা হয়েছে; কিন্তু যখন সেসব সমস্যা অতিক্রম করার ইচ্ছা এবং সামনে এগিয়ে যেতে সম্পর্কের সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করার ইচ্ছা থাকে। তখন দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে সামনে এগিয়ে যেতে আমরা সমস্ত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ৩০ আগস্ট ক্যামেরুনে ওআইসির সম্মেলনের ফাঁকে কথা বলেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব। বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাইকমিশনারও দেখা করেছেন ১০ সেপ্টেম্বর। গত কয়েক বছর ধরে তো পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক একটু শীতল যাচ্ছিল। পাকিস্তান সেটি থেকে বেরিয়ে আসতে চায় বলে জানান উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

বাংলাদেশের লেখক ফাহাম আবদুস সালাম মনে করেন গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সরকার ভারতের চোখে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করেছে এবং ১৯৭১ সালকে ঘিরে বিভাজনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছে, যেটা সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। ভারতবর্ষের মানুষের মধ্যে অনেক পুরোনো একটা সম্প্রীতির জায়গা ছিল, আধুনিক সময়ে এসে সেটা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের পেছনে ভারতের মূলধারার গণমাধ্যমকে ঘৃণার সংস্কৃতি প্রচারের জন্য দায়ী করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। ৯ মাসের ওই যুদ্ধে বাংলাদেশের ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন। পাক-বাহিনীর হাতে ইজ্জত হারিয়েছেন এ দেশের দুই লাখ মা-বোন। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও পাকিস্তান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি।

 

ভোরের আকাশ/রন