logo
আপডেট : ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১৯:০২
বনভোজনের বাস বিদ্যুতায়িত
ফেনীর ফতেহপুরের নিজ বাড়িতে অন্তিম শয়ানে নাঈম
ফেনী জেলা প্রতিনিধি

ফেনীর ফতেহপুরের নিজ বাড়িতে অন্তিম শয়ানে নাঈম

গাজীপুরের শ্রীপুরে বনভোজনে যাওয়ার পথে বাসে বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত হওয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থী নাঈমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে তার নিজ বাড়ি ফেনীর ফতেহপুরের পারিবারিক কবরস্থানে।

বনভোজনে যাওয়ার আগের দিন রাতে মা নাহিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়েছিল মীর মোজাম্মেল হোসেন নাঈমের। তখন মাকে বলেছিলেন, বনভোজন শেষেই তিনি বাড়ি আসবেন। ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ার বাসায় গত শনিবারও ছেলের অপেক্ষায় ছিলেন মা। রোববার নাঈমের আসার কথা ছিল। কথামতো ফিরেছেন নাঈম, তবে নিথর দেহে।

গত শনিবার সকাল ১০টার দিকে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থীদের বহনকারী বনভোজনের বাস জেলার উদয়খালী এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়। গন্তব্য থেকে আধা কিলোমিটার দূরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের দরজার দিকে থাকা তিনজন বিদ্যুতায়িত হয়ে গুরুতর আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনায় নিহত তিন শিক্ষার্থীর একজন মীর মোজাম্মেল হোসেন নাঈম। নিহত নাঈম ইইউটির মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

রোববার ভোরে নাঈমের লাশ ফেনী সদর উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। সকাল ১০টায় ফতেহপুর ঈদগাহ ময়দানে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় নাঈমের সহপাঠী, আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসীসহ কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। এরপর বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

স্বজন ও প্রতিবেশীরা নাঈমের বাবাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। জবাবে কিছুই বলতে পারছিলেন না তাঁর কলেজ শিক্ষক বাবা মীর মোতাহের হোসেন। সাউথইস্ট ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক মীর মোতাহের হোসেনের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নাঈম ছিলেন দ্বিতীয়। বড় ভাই বাক্‌প্রতিবন্ধী। তাই নাঈমকে ঘিরেই ছিল পরিবারের অনেক আশা। তবে চোখের সামনে এভাবে সব শেষ হয়ে যাবে, তা মানতে পারছেন না এই শিক্ষক পিতা।

ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে তার মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। অনেকটাই নির্বাক হয়ে গেছেন তিনি। জানাজায় আসা লোকজন জানালেন, নাঈম ছিলেন হাসিখুশি। সবার সঙ্গে মিশতেন। গ্রামে গেলে আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে হেসে কথা বলতেন। খোঁজ খবর নিতেন।

স্বজনেরা জানালেন, মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন নাঈম। ফেনী শহরের হলি ক্রিসেন্ট স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা ও ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এরপর গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ভর্তি হয়েছিলেন। প্রকৌশলী হবেন, এমন ইচ্ছা ছিল তাঁর। কিন্তু দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।

 

ভোরের আকাশ/মি