নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) শপথ নিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গতকাল রোববার বেলা দেড়টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে তাদের শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ নেওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে কমিশন। এর আগে সম্ভব নয়। এদিকে বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থাকায় এ কমিশনের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। এরই মধ্যে রাজনীতিকরা কমিশনের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। বিষয়টি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, প্রথমে সিইসি শপথ গ্রহণ করেন। এরপর চার কমিশনার শপথ নেন। শপথ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা। এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতিরা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সিইসি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে নিয়োগ দেন। চার ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুসারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২১ নভেম্বর নিয়োগসংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে। নির্বাচন কমিশনাররা হলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার; অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ; সাবেক যুগ্ম সচিব তাহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
শপথগ্রহণের পর নতুন চার কমিশনারকে নিয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো মতবিনিময়ে আসেন সিইসি নাসির উদ্দীন। নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে- এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, দিনক্ষণ দিয়ে বলতে পারব না কবে নির্বাচন হবে। আমাদের তরফ থেকে প্রস্তুতি আজ (গতকাল) থেকেই শুরু করব।... তবে ইলেকশন করার জন্য যে যে রিফর্ম প্রয়োজন, সেটা ছাড়া নির্বাচন সম্ভব না। তিনি বলেন, ফেক ভোটার আছে শুনেছি, রাজনৈতিক দলের মধ্যেও (সংসদ) দ্বি-কক্ষ হবে নাকি বর্তমানের মতোই থাকবে তা নিয়ে মতানৈক্য আছে। কেউ চায় আনুপাতিক হারে নির্বাচন, কেউ চায় এখনের মতোই। এসব বিষয়ে ফয়সালা না হলে আমরা কীভাবে প্রস্তুতি নেব? রিফর্ম কমিশন থেকে সাজেশন আসবে। সবার থেকে পরামর্শ ইনকরপোরেট করে তারপর ফ্রি ফেয়ার নির্বাচন হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সকল প্রচেষ্টা নিবিড়ভাবে থাকবে যাতে একটা ফেয়ার, ক্রেডিবল নির্বাচন করা যায় এবং এর জন্য সর্বশক্তি নিয়োজিত করব। একটা ফেয়ার ও ক্রেডিবল নির্বাচন দেওয়ার জন্য যা যা করার দরকার করব।
আওয়ামী লীগ ও এর জোটবদ্ধ দলগুলোর নির্বাচনে আসার প্রশ্নে সিইসি বলেন, রিফর্ম কমিশনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও সহযোগীদের ব্যাপারে ফয়সালা হলে বলতে পারব। এটা তো জাতিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এখন মন্তব্য করতে চাই না।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন করা হয়েছে;, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বদিউল আলম মজুমদার। গঠনের পর থেকে সেই কমিশন বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করে সুপারিশ নিচ্ছে। সেসব সুপারিশ যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে কমিশন।
সরকারের সংস্কার কমিশনের উদ্যোগুলো তুলে ধরে সিইসি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় বারবার বলেছেন, আপনারা রিফর্মসের সুপারিশগুলো আমাকে দেন; আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বসব। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সুপারিশে একমত হবে সেগুলো আমরা গ্রহণ করব; যেখানে বিতর্ক হবে, কোনো কোনো দল মানবে না, সেগুলো রেখে যাবে, পরবর্তী সরকারের জন্য রেখে দিয়ে যাবে। সুতরাং সংস্কার কমিশনের যে সুপারিশগুলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য... আমরা কাজে নেমে পড়ব। তবে আমাদের তরফ থেকে আমরা যথাসম্ভব নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি ফ্রম টুডে, আমরা নেব আমাদের তরফ থেকে। কিন্তু (নির্বাচন করতে) পারব না তো, রিফর্মসগুলো না আসলে পারব না।
নতুন সিইসি বলেন, নির্বাচন করার জন্য যে যে সংস্কারগুলো করা দরকার, যেগুলো ছাড়া করা যাবে না এবং অনেকগুলো রিফর্ম কমিশনের ইন্টাররিলেটেড। শুধু বদিউল আলম মজুমদারের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে করা যাবে না; যদি স্থানীয় সরকার, সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত না হলে।
নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার শেষে ভোট কি না জানতে চাইলে এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, অ্যাবসলিউটলি। নির্বাচন রিলেটেড এসেনসিয়াল রিফর্মগুলো হলেই তারপরে হবে; না হলে আমার পক্ষে সম্ভব না। নতুন নির্বাচন কমিশনের ওপর ‘চ্যালেঞ্জ’ কী জানতে চাইলে সিইসি বলেন, চ্যালেঞ্জ একটাই, একটা ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা।
এই কমিশন এক তরফা নির্বাচনে বিশ্বাসী না উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কোনো দল নাই। রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নাই। আমাদের ওপর তাই কোনো রকম চাপ নাই।... আমি কনভিন্সড সামনেও কোনো চাপ থাকবে না।
বিগত সময়ের কথা উল্লেখ করে সিইসি নাসির বলেন, আমাদের সকল প্রচেষ্টা নিবিড়ি থাকবে যাতে, একজন ভোটার নিজের পছন্দের মানুষকে নির্বিঘ্নে ভোটটা দিতে পারে, সেরকম পরিবেশ নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ। এটা করার জন্য আমাদের যা যা করা লাগে করব। আর আমরা এক তরফা নির্বাচনে বিশ্বাসী না। একতরফা নির্বাচনকে দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হিসেবে দেখেন তিনি।
সিইসি বলেন, একতরফা করেই তো দেখছেন, দেশের কী বারটা বেজে গেছে। এই একতরফা করেই তো, গায়ের জোরে নির্বাচন করলে যা হয়। আমরা কোনো গায়ের জোরে ইলেকশন দেখতে চাই না। একতরফা ইলেকশন দেখতে চাই না। আমরা একটা প্রতিযোগিতামূলক, আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ক্রিয়েট করে দিব, যাতে করে এখানে সবাই খেলতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থাটা করব। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে শতভাগ। ফেয়ারনেস নিশ্চিতে শতভাগ চেষ্টা থাকবে।
বিগত সরকারের সময়ে তিন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে সেসব যেন না হয়, তার জন্য ‘আল্লাহ তায়ালা’ এই কমিশনকে পাঠিয়েছেন বলে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, আমি নির্বাচন হয়েছে, ডামি নির্বাচন হয়েছে, ১৫৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। এগুলোর জন্যই আমাদের আসা। আমাদের আগমন কিন্তু ওইগুলো মোকাবিলা করার জন্যই। এরকম যাতে না হয় এজন্য আল্লাহ তায়ালা আমাদের পাঠিয়েছেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে। এই দায়িত্বকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে ‘জাতির জন্য কিছু করার’ প্রতিশ্রুতি দেন সিইসি। তার ভাষ্য, দিস ইজ দ্য গ্রেট অপরচুনিটি। আমি এটাকে একটা মহৎ সুযোগ হিসেবে নিয়েছি। আপনার চ্যালেঞ্জ বলছেন তো, আমি এটাকে অপরচুনিটি হিসেবে নিচ্ছি। জীবনের শেষ বয়সে এসে আমরা একটা অপরচুনিটি পেয়েছি জাতির জন্য কিছু করার জন্য। আমার কলিগদের সঙ্গে নিয়ে। আমরা এখন ফিল করছি যে, আমাদের শেষ জীবনে এসে সুযোগ এসছে। আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। এই সুযোগটার সদ্ব্যবহার আমরা করি। এখানে যদি আমরা ফেল করি, তাহলে এই দেশের ভোটিং সিস্টেমের কী হবে আপনারাই জানেন।
এই কমিশনের নিয়োগকে পুরোপুরি ‘স্বচ্ছ’ দাবি করে সিইসি বলেন, তার কমিশনারদেরও তিনি চিনতেন না। আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ভেরি ট্রান্সপারেন্ট প্রসেসে। ভেরি ট্রান্সপারেন্ট প্রসেস। নিয়োগের বিষয়টি ‘টেলিভিশনে স্ক্রল দেখে’ প্রথম জানতে পারেন বলে ভাষ্য নাসির উদ্দীনের।
তিনি বলেন, কারো কোনো ডিজায়ারের কারণে আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। একটা ট্রান্সপারেন্ট প্রসেসের মাধ্যমে আমরা আসছি।
শপথ নেওয়া নতুন চার নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাসুদ, তহমিদা আহ্মদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাড়ে তিন মাসের মাথায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেতে যাওয়া সাবেক আমলা এ এস এম মো. নাসির উদ্দীন আত্মবিশ্বাসী যে তিনি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন, যেখানে মানুষ স্বপ্রণোদিত হয়ে তার পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। তবে তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ দেখছেন একজন নির্বাচন পর্যবেক্ষক; আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয় কি না, আছে সেই প্রশ্নও। আওয়ামী লীগ ও তার জোটের শরিক দলগুলো এ মুহূর্তে দেশের রাজনীতিতে গুরুত্ব না পেলেও তাদের একটি বড় সমর্থকগোষ্ঠী ভোটের বাইরে থাকবে কি না, সেই প্রশ্নেও নানা মত আছে সরকার ও তার অংশীদারে।
যা বলছে রাজনৈতিক দলগুলো: নির্বাচনি ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে- বলে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণে যে বক্তব্য রেখেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশনে গঠন সেটির একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেন, আমরা নতুন নির্বাচন কমিশনের উপরে আস্থা রাখতে চাচ্ছি। আমাদের অনুরোধ থাকবে- কথা কম বলে বেশি কাজ দিয়ে সেটা চেষ্টা করা উচিত শুরু থেকেই। একটু কম কথা, একটু বেশি কাজ। তাহলে আশান্বিত হব-যেটুকু বলেছে বাস্তবে দেখা যাবে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, আমরা আশা করি, এই ইসি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এবং একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং ভয়ভীতিহীন নির্বাচন করবে।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা প্রত্যাশা করব, তারা (নির্বাচন কমিশন) যেন একটা ভালো নির্বাচন বলতে যেটা বোঝায়, নির্বাচনে দাঁড়ানো, ভোট দেওয়া, ভোটে দাঁড়ানোর সমঅধিকার নিশ্চিত করা, এমন একটি ভালো নির্বাচন উপহার দেবে। তারা এমন একটি নির্বাচন বা নির্বাচনের সময় এমন উদাহরণ সৃষ্টি করবে; যাতে করে ভবিষ্যতে নির্বাচন আর নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো প্রশ্ন সামনে আসবে না। দলীয় সরকার থাকলে অনেক সময় নির্বাচন কমিশন ভালো ভূমিকা রাখতে পারে না মত দিয়ে তিনি বলেন, এখন একটা অন্তর্বর্তী সরকার আছে, তার উপরও নানা গ্রুপের প্রভাব শোনা যায়। সকল প্রভাবমুক্ত হয়ে তারা যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে, এই চ্যালেঞ্জ তারা যথাযথভাবে পালন করবে, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে। কতটুকু করতে পারলেন না পারলেন সেটি সময় বলে দেবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে আর কেউ যাতে ভোটাধিকার কেড়ে নিতে না পারে; এই দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করবেন। জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় নির্বাচন কমিশন যাতে একটা ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে পারে, এই মর্যাদায় তারা নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে যাবে।
কমিশনের সামনে চ্যালেঞ্জ কী- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রশাসন পুনর্গঠন এবং একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ, ভোটার তালিকা স্বচ্ছভাবে তৈরি করা। সেই সঙ্গে নির্বাচনে যাতে কোনোভাবে কেউ প্রশাসনিক কারসাজি কিংবা পেশিশক্তি বা টাকার খেলা করতে না পারে, জনগণ যাতে অবাধে তার প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ পায়। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, আমরা চাই এই নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠুু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেবে, যে নির্বাচন হবে আন্তর্জাতিক মানের। এটা এমন একটি নির্বাচন, যেটি আসলে আন্তর্জাতিক মহলের কাছেও একটি মানদণ্ড হিসেবেই সব সময় বিবেচিত হবে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহমিদুল আলম বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই তাদের বিবেচনা করা হবে। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন এবং বিগত ১০ বছরের স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে নির্বাচনের নামে যে তামাশা হয়েছে, তার পুনারাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না। যেহেতু বিগত ১০ বছর আমরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলাম, তাই ভবিষ্যতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলো যেন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য হয় সেই প্রত্যাশা থাকবে তাদের কাছ থেকে। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও যেন তারা সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত না হয় সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখার তাগিদ দেন তিনি। বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরিরত ইসমাইল মৃধা বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কমিশন হওয়াতে মানুষের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া কিছুটা এগিয়ে গেল। তবে তাদের উচিত সময় নিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করা যেন মানুষের আর কখনও এমন নির্বাচন দেখতে না হয়, যে নির্বাচনের কোনো মানে হয় না। এখানেও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে অনেক।
বড় চ্যালেঞ্জ: জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মনে করেন ভোটার তালিকা নতুন করে তৈরি করা একটা বড় কাজ। নীতিমালা তৈরির ব্যাপারটাও গুরুত্বপূর্ণ। আর সবার কাছে বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ। বহু বছর ধরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, সব দল এবং ভোটারকে নির্বাচনে টেনে আনা তাদের জন্য কঠিন হবে। কারণ আগের মত কমিশন গঠন করা হয়েছে, এখানে সব পেশার প্রতিনিধিত্ব নেই।
সার্চ কমিটি যে ১০ জনের নাম সুপারিশ করেছিল তার মধ্যে পাঁচজনের নাম কেন প্রকাশ করা হলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, শেখ হাসিনা যে নির্বাচন কমিশনগুলো গঠন করেছিল সব এই আদলে। একেবারেই সংস্কার করতে পারে নাই। একজন গবেষক, পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক থাকতে পারত এখানে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, সেই কমিশন রিপোর্ট দেওয়ার আগেই কেন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হল? তারা যে সুপারিশগুলো দেবে, সেখানে নির্বাচন কমিশন কেমন হবে সে সুপারিশও থাকতে পারত।
প্রসঙ্গত, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গঠিত কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে। সবশেষ এ বছরের ৭ জানুয়ারি তাদের অধীনেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে গত জানুয়ারিতে সেই নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এর আট মাসের মাথায় গণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়।
ভোরের আকাশ/রন