কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানা ও নাসরিন আক্তারের ঘরে জন্ম নিলো একজোড়া কন্যা সন্তান। নতুন অতিথির আগমনে যেখানে আনন্দের বন্যা বইয়ে যাওয়ার কথা সেখানে কন্যা সন্তানদের দেখে এক সমুদ্র হতাশা চেপে বসে তাদের মাথায়। এই হতাশা কন্যা সন্তানের জন্য নয়, দুই নবজাতকের মেরূদণ্ডে জোড়া লাগানো অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হওয়ার কারণেই যত দুশ্চিন্তা রানা-নাসরিন দম্পতির। পৌনে তিন বছর আগে যে হতাশায় চেপে ধরেছিল যাদের, সেই দম্পতিই গতকাল সোমবার কুড়িগ্রামে ফিরেছেন হাসিমাখা মুখে। এর কারণ জটিল ও ব্যয়বহুল অস্ত্রোপচারে আলাদা হয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছে তাদের দুই কন্যাসন্তান। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল ছেড়ে কুড়িগ্রামে নিজেদের বাড়ি ফিরেছে ফুটফুটে দুই কন্যা নূহা আর নাবা। তারা আলাদা হয়ে ফেরায় যেন দুই প্রজাপতি ডানা মেলেছে আকাশে।
জানা যায়, নূহা ও নাবার এই বাড়ি ফেরা হতে পারতো গত ৭ নভেম্বর। কিন্তু বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ৭ নভেম্বর রানার হাতে ২২ লাখ টাকার বিলের কাগজ ধরিয়ে দেয় তখন মাথায় তার আকাশ ভেঙে পড়ে। অথচ তাদের চিকিৎসা হওয়ার কথা বিনামূল্যে। এই বিশাল পরিমান টাকার বিলের কপি পেয়ে হতবিহবল হয়ে পড়েন তিনি। এ সমস্যা সমাধানের জন্য দপ্তরে দপ্তরে ঘুরতে হয়। এর ফলে বাড়ি ফেরা আটকে যায় নুহা-নাবার। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর একটি কোম্পানি ১৫ লাখ টাকা দেওয়ায় হাফ ছেড়ে বাচেন রানা-নাসরিন দম্পত্তি। বাকি ৭ লাখ টাকা মওকুফ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন অবস্থায় গতকাল রানা-নাসরিন দম্পতি দুই কন্যা সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরেছেন। জমজ দুই শিশু সম্পূর্ণ আলাদা দেখার খবর পেয়ে তাদের একনজর দেখতে ছুটে আসেন এলাকার হাজারো মানুষ। দুই ফুটফুটে রাজকন্যাকে হাটতে দেখে খুশির জোয়ারে ভাসেন আগত মানুষেরা। জানা গেছে, দুই শিশুর চিকিৎসা তথা আলাদা করার জন্য ২২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এজন্য তাদের বিএসএমএমইউ হাসপাতালে থাকতে হয়েছে ৩২ মাস। যদিও আগামী ৬ মাস পর তাদেও আবারও বিএসএমএমইউ হাসপাতালে আসতে হবে পৃথক একটি অপরাশেনের জন্য।
২০২২ সালের ২১ মার্চ কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানার স্ত্রী নাসরিন আক্তার মেরূদণ্ডে জোড়া লাগানো দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। ওই বছরের ৪ এপ্রিল তাদের ঢাকায় আনা হয়। তখন থেকে তারা বিএসএমএমইউতে ভর্তি ছিল। কয়েক ধাপে অস্ত্রোপচারের পর তাদের চূড়ান্তভাবে আলাদা করা হয় গত ২০ ফেব্রুয়ারি। দুই শিশুকে আলাদা করার পর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী (তৎকালীন) শেখ হাসিনা তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন।’ কিন্তু সেই ঘোষণা শুধুই ফাঁকা বুলি ছিল তা প্রমানিত হয় যখন রানা-নাসরিন দম্পতির হাতে ২২ লাখ টাকার একটি বিল ধরিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও বিএসএমএমইউর সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান হাওলাদারের দাবি, নুহা ও নাবার চিকিৎসায় এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫১ লাখ টাকা। এরমধ্যে ১৫ লাখ টাকা অনুদান ছাড়া বাকি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করেছে। পরবর্তী সময়ে চিকিৎসায়ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিশু দুটির পাশে থাকবে বলে জানান এই চিকিৎসক।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নুহা-নাবা হাসপাতালের নিউরোসার্জারি মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল। ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর তাদের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। ৬১৮ নম্বর ভিআইপি কেবিনে বেড়ে উঠেছে দুই বোন।
ভোরের আকাশ/রন