logo
আপডেট : ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ ০৯:৪৬
শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা
নেপথ্যে কী
শিপংকর শীল

শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা

রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এক রকম অস্থিরতা চলছে। কখনও বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবি করে সড়ক অবরোধ, আবার কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থেকে বেড়িয়ে পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আন্দোলন। আবার কখনও নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে আন্দোলন। এসব দাবির পর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া। রোগীর মৃত্যুও পর চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো। ওই চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের পাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘোষণা দিয়ে হামলা ও ভাঙচুর। পাল্টা প্রতিশোধ নিতে আবার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এক হয়ে প্রতিপক্ষ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরÑ একের পর এক এসবই চলছে রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিনের মাথায় দায়িত্ব নেন নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর প্রায়ই ছোটখাট ঘটনা নিয়ে রাজধানীর সড়ক অবরোধ করে দাবি-দাওয়া আদায়ের একটি চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এতে করে উদ্বেগ বাড়ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এর নেপথ্যের কারণ জানার চেষ্টা করেছে ভোরের আকাশ। উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য জুলাই অভ্যুত্থানের সমন্বয়কদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও উসকানিকে দায়ী করছেন কেউ কেউ। তাদের মতে, আবেগ সামলাতে না পেরে সহিংসতা ও নাশকতায় জাড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। একটার পর একটা ঘটনা ঘটলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আর অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আবার অনেকে মনে করেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ এসব ঘটনার পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে। দেশে অস্থিরতা তৈরি করে পতিত স্বৈরাচার আবারও ফিরে আসার পাঁয়তারা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররাও সব ছাত্রসংগঠনের নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে। চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে।

গত ২৪ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গত রোববার ন্যাশনাল মেডিক্যালের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অবরোধ করলে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ওইদিন একদল শিক্ষার্থী পুরান ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এই হামলায় রাজধানীর ১৫টিরও বেশি কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন বলে অভিযোগ ওঠে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়েছে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজে মামলা ও ভাঙচুর করে। এই হামলায় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন একাত্মতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রদল সর্বদা একাত্মতা পোষণ করে। কিন্তু আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করলে তা কখনোই ছাত্রদল মেনে নেবে না।’

অন্যদিকে, রোববার রাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থীর আহতের খবর পাওয়া গেছে।

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গত রোববার ন্যাশনাল মেডিক্যালের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন দুপুরে রাজধানীর প্রায় ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফটক অবরোধ ও ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ন্যাশনাল মেডিক্যালে হামলার পর পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও হামলা ও ভাঙচুর চালায় শিক্ষার্থীরা। সেসময় দুই কলেজেই স্নাতক প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান ছিল। এসময় দুই কলেজের শতাধিক পরীক্ষার্থী ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হন।

এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সোহরাওয়ার্দী কলেজের মূল ফটকসহ ক্যাম্পাসে থাকা কলেজের মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকারসহ দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের ডিজিটাল নোটিশ বোর্ডটিও ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের নিচতলা থেকে পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ওঠে বাংলা, ইংরেজি বিভাগ ও অফিস রুমে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করে তারা।

একই ভবনে অবস্থিত ইসলামিক স্টাডিজ এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগেও ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা। বাদ যায়নি পরীক্ষার হলে থাকা বেঞ্চ ও উপাধ্যক্ষের কার্যালয়ও। তৃতীয় তলায় অবস্থিত প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষণাগারে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়, এসময় গবেষণাগারে থাকা কঙ্কালটিকেও লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তী অবস্থা বেগতিক দেখে পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।

সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা আমাদের ওপর হামলা করে। আমাদের সব কক্ষে ভাঙচুর করেছে। কলেজে শিক্ষকদের গাড়িও ভাঙচুর হয়েছে। পুরো কলেজ এখন ধ্বংসস্তূপ। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা আমরা দেখে বলতে পারবো। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বারবার সাহায্য চেয়েছি। কিন্তু তারা শুধু বলেছে, তারা ন্যাশনাল মেডিক্যালে আছেন। কয়েকজন পুলিশ এসেছিল, কিন্তু তারা সংখ্যায় কম ছিল। আমরা বারবার সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছি কিন্তু সেটা পাইনি।

অন্যদিকে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেদিন তাদের আন্দোলন দমন করতে কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা হামলা চালায়। এতে করে তাদের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন জানান, ‘আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার বিচারের দাবিতে মিছিল করেছি। পুলিশ আমাদের সহযোগিতা না করে উল্টো মারধর করেছে। তাদের সঙ্গে এই দুই কলেজের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও যোগ দেয়।’

এ বিষয়ে কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার নয়, বাইরের কোনো উসকানি রয়েছে। উসকানিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা আবেগে জড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষে। সংঘর্ষের ঘটনায় আমাদের ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজে হামলার ‘প্রতিশোধ’ নিতে পরদিন সোমবার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে পাল্টা হামলা, ভাঙচুর ও শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়। এদিন সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক আহত হয়।

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন দাবি করেছেন, রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলায় তাদের প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা এমন করতে পারে আমরা ভাবিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সব ধ্বংস করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে কূচক্রী মহল কাজ করছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশ অন্যদিকে চলে যাবে।

একইদিন রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথাকাটির মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরদিনও সোমবার প্রতিষ্ঠান দুটোর হলগুলোতে ছিল থমথমে পরিস্থিতি।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা সূত্রে জানা যায়, দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েক দফায় সংঘর্ষের পর মাঝরাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একাধিক টিম।

এর আগে গত ১১ নভেম্বর তিন দফা দাবি ও ইউজিসির পাইলট প্রকল্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কেও যুক্ত করার দাবিতে শিক্ষাভবন ঘেরাও করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জবি ক্যাম্পাসে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবি ছিলÑ ‘স্বৈরাচার সরকারের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ প্রকল্প পরিচালককে আইনের আওতায় আনা এবং সাত দিনের মধ্যে প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসার নিয়োগ, সেনাবাহিনীর হাতে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তর এবং হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা (অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হলো) এবং অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার আমলে করা সকল অনৈতিক চুক্তি বাতিল করা।’ সরকার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।

গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। মহাখালী এলাকার সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় শিক্ষার্থীরা।

গত ২০ নভেম্বর রাজধানীর ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের আবার আক্রমণ করতে পারে এমন আতঙ্কে রয়েছে সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এর আগে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধভাবে পদে বসে যাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে টিকে থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রাখেনি সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর জের ধরেই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টিতে উসকানি দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরাই আহত হয়। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, তাদের দেড়শ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেনে, অনেকবার বলা হয়েছে শ্রমিকরা-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। শুধু শিক্ষার্থীরা না, বহু সংগঠন ঢাকা শহরে আন্দোলন করছে। তারা সড়ক আটকাচ্ছে। এগুলোর সমাধান কী করে হবে, আমি তো একা সমাধান করতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের আহ্বান করছি; তোমাদের ন্যায্য দাবি আমার কাছে নিয়ে এসো, সেগুলো পূরণ করা হবে। অনেক দাবি ইতোমধ্যে থেমে গেছে। কারণ আমরা বলেছি, এগুলো ন্যায্য দাবি, আমরা সমাধান করবো। কিছু কিছু দাবি আছে, যেগুলো ন্যায্য না, সেগুলো আমরা মানবো না। ন্যায্য দাবি না হলেও রেললাইন অবরোধ করা হচ্ছে, যাত্রীদের আক্রমণ করা হচ্ছে। এগুলো করলে জনগণই তাদের বিরুদ্ধে যাবে। সেদিক থেকে আমরা সুবিধায় আছি। যারা অন্যায্য দাবি নিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়, তাদের প্রতিরোধ করবে, এমনও বলাবলি হচ্ছে।

রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের হামলাÑ পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অ্যাকশনে গেলে আরও রক্তপাত হতো বলে মনে করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, ‘অকারণে যে কেউ নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে।

গত সোমবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, যদি কেউ অযৌক্তিক কারণে বিশৃঙ্খলা বা নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, সে যে পরিচয়েরই হোক না কেন; দেশের স্বার্থে তাদের প্রতিহত করে জনমানুষের নিরাপত্তা প্রদান করা হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনাকে উসকানি হিসেবে উল্লেখ করেছেন তার ফেসবুক পোস্টে। তিনি লিখেছেন, বাম এবং ডান মানসিকতার কতিপয় নেতৃত্ব বা ব্যক্তি গণঅভ্যুত্থানে, এবং পরবর্তীতে সরকারে নিজেদের শরিকানা নিশ্চিত না করতে না পেরে উন্মত্ত হয়ে গেছেন। তাদের উন্মত্ততা, বিপ্লবী জোশ এবং উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড দেশটাকে অস্থির করে রেখেছে। ছাত্রদের আজ সংঘাতের মুখে ঠেলে দিয়ে হত্যার মাধ্যমে ছাত্রদের বৈধতার সংকট তৈরি হলে, যারা লাভবান হবে, তারা সবাই এই উসকানি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার সঙ্গে জড়িত। ধীরে ধীরে আমরা সবই বলবো। অথবা, আপনারা চোখ খুললেই দেখতে পাবেন।

নিজেদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে মাহফুজ আলম তার পোস্টে লিখেন, অনেক মিত্রই আজ হঠকারীর ভূমিকায়। আমরা আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করি। আমরা শিখেছি এবং ব্যর্থতা কাটানোর চেষ্টাও করছি। আমরা আরও চেষ্টা করবো সবাইকে নিয়ে এগোনোর। কিন্তু, হঠকারিতা এবং ছাত্রদের অন্যায্যতার চেষ্টা এ জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। বড় কোনো পরিকল্পনা না থাকলে একদিনে এতগুলো ঘটনা এটা তো কাকতালীয় নয়। আমরা মনে করছি, এখানে নানা পক্ষের পরিকল্পনা আছে। সরকার সফলভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম করুকÑ এটা অনেকে হয়তো চাচ্ছে না। আমাদের যে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার, তারা তো নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা মনে করি, পুলিশে বড় একটি পরিবর্তন এসেছে। প্রশাসনের স্থবিরতা কাটানোর জন্য প্রশাসনেও পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছি। এই বিষয়গুলো নস্যাৎ করতে আমাদের অনেক বেশি এসব ঘটনায় ব্যস্ত রাখার জন্য, সারা দেশের দৃষ্টি এদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কিনা আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। আমরা এটা তদন্ত করছি। দেশে বা দেশের বাইরে ইন্ধনে কারা জড়িত।

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনাকে আমরা দুর্ঘটনা বলবো না। একটি অবৈধ সমাবেশের মাধ্যমে ছাত্রবেশে সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চায়। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা করেছে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ না করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেও ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারে। কিংবা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে। আমরা চাই শান্তিপ্রিয় সমাধান। আমরা কোনোভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কঠোর হতে চাই না। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলার তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের বাঁধ পরিদর্শন শেষে তিনি আরও বলেন, কলেজের সমস্যা আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। এজন্য আমাদের শিক্ষকরা রয়েছেন। কেউ রাস্তায় নামার প্রয়োজন নেই। রাস্তা ব্লক না করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেও দাবি জানাতে পারে, তাদের প্রতিনিধি গিয়ে আমাদের সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলাপ করতে পারে। বিভিন্ন কলেজের সমস্যা নিয়ে ছাত্র প্রতিনিধিরা নিজেদের মধ্যে আলাপ করতে পারে। আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে। আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

 

ভোরের আকাশ/রন