logo
আপডেট : ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:২৮
তিন রোগের একই বাহক
'এডিস মশা'
শিপংকর শীল

'এডিস মশা'

একই সময়ে ডেঙ্গু, জিকা ও চিকুনগুনিয়া আতঙ্কে ভুগছে রাজধানীবাসী। চলছে ডেঙ্গুর দাপট। তবে চিকুনগুনিয়ার পরিস্থিতি জানার জন্য স্বাস্থ্য সেক্টরের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা নেই। এদিকে ঢাকায় এবারও জিকা রোগীর দেখা মিলেছে। এই তিন রোগের বাহক এডিস মশা।

ঢাকায় গত তিন মাসে আটজনের শরীরে জিকা ভাইরাস পাওয়া গেছে। গত বছরও পাঁচজন জিকা রোগী শনাক্ত হয়। জিকা রোগ দেশে প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে ‘আইসিডিডিআরবি’-এ রক্ত পরীক্ষায় তা জানা যায়। জিকা আক্রান্ত ওই রোগী ছিলেন চট্টগ্রামের। গত বছর পাঁচজন জিকা রোগী শনাক্ত করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। আইসিডিডিআরবি বলছে, ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। বাকি ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তির চামড়ায় লালচে দানার মতো ছোপ (র‌্যাশ) দেখা দেয়। সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখ লালচে হওয়া, মাংসপেশি ও গিঁটে ব্যথা থাকে। আক্রান্ত হওয়ার ৩ থেকে ১২ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়, যা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী থাকে।

আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে, জিকার কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, এর চিকিৎসা উপসর্গভিত্তিক। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে, জ্বর ও ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে কাছের সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে অথবা রোগীকে ভর্তি করাতে হবে।

চিকুনগুনিয়া: আইসিডিডিআরবি পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন জানিয়েছেন, এ বছর বেশ কয়েকজন চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে আইসিডিডিআরবির পরীক্ষাগারে এক মাসে ২৭ জন চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক হালিমুর রশিদ কিছুদিন আগে দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ডেঙ্গু নিয়ে ব্যস্ত। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা যেন ঠিকমতো হয়, আমাদের মনোযোগ সেই দিকে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত রোগ। মশার মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়ায়। ১৯৫২ সালে তানজানিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সর্বপ্রথম এই রোগ ছড়ানোর কথা জানা যায়। সেখানকার কিমাকোন্ডি ভাষা থেকে চিকুনগুনিয়া নামটি এসেছে। স্থানীয়ভাবে এর অর্থ হলো ‘মোচড়ানো’। রোগীর শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়ায় এই রোগের এমন নাম হয়েছে।

চিকুনগুনিয়া হলে সাধারণত হঠাৎ করে তীব্র জ্বর শুরু হয়। সেই সঙ্গে শরীরের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা অনুভূত হয়। এছাড়া মাংসপেশি ও মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি ও চামড়ায় ফুসকুড়ি হতে পারে। অস্থিসন্ধির ব্যথা খুব তীব্র হতে পারে, যা কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। চিকুনগুনিয়া রোগীর চোখ, হৃদপিণ্ড, স্নায়ুতন্ত্র ও গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল সমস্যাও হতে পারে। চিকুনগুনিয়া জটিল রূপ ধারণ করার ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। তবে বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এটি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। উপসর্গগুলো তীব্র না হওয়ায় অনেক সময় রোগ শনাক্ত করতে সমস্যা হয়, যা থেকে বিপদের আশঙ্কা থাকে। খুব কম ক্ষেত্রেই চিকুনগুনিয়া মৃত্যুর কারণ হয়।

ডেঙ্গু: গত কয়েক বছর ধরে দেশে বছরজুড়েই ডেঙ্গুর দাপট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৮৯ হাজার ৬০৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৩.২% পুরুষ এবং ৩৬.৮% নারী রয়েছেন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪৭৫ জন। নভেম্বরের ২৭ দিনেই মারা গেছেন ১৬০ জন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেঙ্গুর মৌসুম শেষ। কিন্তু ডেঙ্গুতে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে না। এ বছর চলতি নভেম্বর মাসেই ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মশা নিয়ন্ত্রণে কিছু কাজ চোখে পড়ে। দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন, শহর ও গ্রামে মশা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে না। মশা না কমলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমে আসার সম্ভাবনা কম। সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক মো. হালিমুর রহমান বলেন, ‘নভেম্বরে ডেঙ্গু কমে আসে। এ বছর তা হতে দেখছি না। সিটি করপোরেশনের মশা মারার কাজটি ঠিকমতো হচ্ছে বলে মনে হয় না। মশা না কমলে ডেঙ্গু কমবে না।’ তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

 

ভোরের আকাশ/রন