দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গত কয়েকদিন যাবৎ দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। এই অস্থিরতা দেখা দিয়েছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে। কথায় কথায় শিক্ষার্থীরা নেমে আসছেন সড়কে। ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বিঘ্ন ঘটছে লেখাপড়ায় ও জন্ম দিচ্ছে সন্ত্রাসী ঘটনার। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় ভুগছেন। শুধু তাই নয় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে এইমর্মে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কখনো বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে সড়ক অবরোধ, আবার কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেড়িয়ে পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। এসব ঘটনার মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। আর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা বড় আকার ধারণ করলেও সমস্যা সমাধানে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছেন না কলেজ অধ্যক্ষরা। সম্প্রতি ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সবচেয়ে কঠোর আন্দোলন করেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা সড়ক অবরোধের পাশাপাশি রেলপথও অবরোধ করে। এছাড়াও রাজধানীর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা বাসে ওঠাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়ালে সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও নিউ মার্কেট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সিটি কলেজ সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়। শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করতে পারেনি দুই কলেজের প্রশাসন। গত রোববার ও সোমবার পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে গত রোববার হাসপাতালে আক্রমণ চালান। এরপর তারা পাশেই অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার ওই দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ভাঙচুর করেন। এতে ডেমরা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধানই তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেনি। তবে জানা গেছে তিন কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রথমত শিক্ষার্থীরা অসহিঞ্চু হয়ে উঠেছেন। তারা কোনো সমস্যায় পড়লে কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ না হয়ে নিজেরাই প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যৌক্তিক হোক আর অযৌক্তিক হোক কাউকে জিম্মি করে তাদের দাবি আদায় করতে চাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে নিতে স্বার্থান্বেষী মহল ঢুকে পড়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে ইন্ধন দেওয়ার চেষ্টা করছে। এতে শিক্ষার্থীরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ছেন। আর তৃতীয়ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারছেন না। যেকোনো ইস্যুর প্রাথমিক অবস্থায় হস্তক্ষেপ করে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কলেজ প্রশাসন। ফলে বড় বড় সহিংস ঘটনার জন্ম হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অস্থিরতা কোনো শুভ লক্ষণ নয়। এভাবে দেশের কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। শিক্ষার পরিবেশ ও মান অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থেই বিষয়টি জরুরিভিত্তিতে দেখা দরকার। কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা, হানাহানি, সংঘর্ষ, প্রাণহানি, নিপীড়ন, নির্যাতন, লাঞ্ছনার ঘটনা শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় ধরনের নেতিবাচক ফ্রভাব ফেলছে। বলা চলে, এসব ঘটনার মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পঙ্গু করার যে চক্রান্ত চলে আসছে। এসব ঘটনা শুধু যে শিক্ষা ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলছে তা নয় জাতীয় জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেশ নিয়ে রাজনৈতিক চক্রান্তকে আরও জটিল করে তুলছে, যা কোনোভাবে প্রত্যাশিত হতে পারে না। এসব ঘটনা শিক্ষাঙ্গনকে কালিমালিপ্ত করেছে। অথচ এসব ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থিতিশীলতা জাতির জন্য খুব জরুরি। কেননা দেশকে অশান্ত করার জন্য বিদ্যাপীঠগুলোকে অস্থির করার চক্রান্ত অতীতে হয়েছে এবং সে ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। সরকার সেইলক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।
ভোরের আকাশ/রন