logo
আপডেট : ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ ০৯:৫৪
নয়াদিল্লির অবস্থানের কড়া প্রতিবাদ ঢাকার
এম. সাইফুল ইসলাম

নয়াদিল্লির অবস্থানের কড়া প্রতিবাদ ঢাকার

সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার ইস্যুতে ভারতের প্রতিক্রিয়ার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থি। কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে পতাকা পোড়ানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতে প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্টত মনে হয়েছে দেশটি বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে ফায়দা নেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত পার্শ্ববর্তী দেশটি।

রাষ্ট্রদ্রোহসহ একাধিক মামলায় ২৫ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইসকনের সাবেক সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জামিন নামঞ্জুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার সমর্থকদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহতের ঘটনায় দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। গতকাল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিষয়টি উঠে আসে। ব্রিফিংয়ে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে যে আইনি প্রক্রিয়া চলছে সেটি স্বচ্ছ ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে হতে হবে। হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর ‘নির্যাতন’ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে ভারত কী করছে- এমন প্রশ্নে রণধীর বলেন, হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হুমকি এবং হামলার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে শক্তভাবে সার্বক্ষণিক উত্থাপন করছে ভারত। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিতের যে দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে, সেটি তারা পালন করবে।

চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামে আইনজীবীকে হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ইসকনকে একটি ‘উগ্রবাদী সংগঠন’ হিসেবে মনে করা হয়- এই প্রশ্নে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ইসকন বৈশ্বিকভাবে প্রখ্যাত সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। তাদের সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান রাখার ভালো রেকর্ড রয়েছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আবারও বলব সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। চিন্ময় দাসের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছি। আমরা দেখেছি আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমরা আশা করি তার বিরুদ্ধে যে আইনি প্রক্রিয়া চলছে, সেটি স্বচ্ছ ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে হবে এবং তার যে আইনি অধিকার রয়েছে, সেটি পুরোপুরিভাবে তিনি পাবেন।

এছাড়াও গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার অভিযোগ এনে ভারতের লোকসভায় করা পাঁচটি প্রশ্নের লিখিত জবাব প্রকাশ করেছে লোকসভা। সেখানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতির ওপর ভারত গভীরভাবে নজর রাখছে। সংখ্যালঘুসহ বাংলাদেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেশটির সরকারের। বাংলাদেশজুড়ে চলতি বছরের আগস্টসহ বিভিন্ন সময়ে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর সহিংসতার খবর দেখেছে ভারত সরকার। তাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। সংখ্যালঘুদের মন্দির ও ধর্মীয় স্থানগুলোতেও হামলার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে ভারত। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।

এর আগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার ও জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় ২৬ নভেম্বর ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্বেগ প্রকাশ করে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুখপাত্রের শুক্রবারের প্রতিক্রিয়া ও গত ২৬ নভেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও পতাকা পোড়ানোর ঘটনার গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের বাইরে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণের সমর্থকরা বিক্ষোভের নামে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর জঘন্য কাজটির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেকোনো ধরনের সহিংস কার্যকলাপের নিন্দা করে বাংলাদেশ। কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন এবং ভারতে বাংলাদেশের অন্যান্য কূটনৈতিক মিশনের পাশাপাশি এর কূটনীতিক এবং অ-কূটনৈতিক সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ।

চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, তা সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা অত্যন্ত হতাশা ও গভীর দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করছি যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করার পর কিছু মহল ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। ভারতের এ ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি শুধু ভুল তথ্য ছড়ানো নয়, বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়া চেতনার পরিপন্থি।

এদিকে, বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল শুক্রবার ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে ভারত অযাচিত উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ভারতের নিজের মাটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটে চলেছে। সেটা নিয়ে তাদের সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। ভারতের এই দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর। ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ (৬৪ দশমিক ১ শতাংশ) মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিতে পারছে। আমরা নিজেরাও দেখেছি, ছাত্রসংগঠন, মাদরাসা ও রাজনৈতিক দলসহ বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রতিক দুর্গাপূজার সময় কিভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেছে। সর্বশেষে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নির্মম ও উসকানিমূলকভাবে হত্যার পরও বাংলাদেশের মুসলমানরা অসীম সংযম ও ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, এরপরও বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর ভারতের অযাচিত উদ্বেগ প্রকাশ থেমে নেই। ভারতের নিজের মাটিতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর অসংখ্য নির্মমতার ঘটনা ঘটে চলেছে। অথচ সেটা নিয়ে তাদের সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। ভারতের এই দ্বিচারিতা নিন্দনীয় ও আপত্তিকর।

এছাড়া ভারতীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভুল তথ্য মোকাবিলায় দেশের সাংবাদিকদের উৎসাহিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজের এক পোস্টে লিখেছেন, আমাদের গল্পগুলো আমাদের মতো করে বলতে হবে। অন্যথায়, তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী আমাদের প্রতিষ্ঠিত করবে। তিনি ভারতীয় মিডিয়ার ভুল তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি লেখেন, ভারতীয়দের জানা উচিত যে, এর পূর্ব সীমান্তেও বুদ্ধিমান লোকেরা বাস করে এবং কয়েক মাস আগে এই মানুষগুলো মানব ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিপ্লবের মাধ্যমে একটি ‘নিষ্ঠুর স্বৈরাচারকে’ উৎখাত করেছে।

প্রেস সচিব বলেন, কিছু সাংবাদিক বন্ধু ভারতীয় গণমাধ্যমে বিশেষ করে তাদের পক্ষপাতদুষ্ট টিভি স্টেশনগুলোর সাথে কথা বলছেন দেখে তিনি আনন্দিত। তিনি বলেন, ভারতীয় কিছু সংবাদমাধ্যম এবং তাদের সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে আসা ‘সাজানো ভুল তথ্য প্রচার’ মোকাবিলা করার সময় এসেছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আপনি যদি সত্যসহ ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন, তাহলে কোনো ভুল তথ্যের প্রচারণা আপনাকে থামাতে পারবে না।

এদিকে, গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সীমান্তের ওপারে বসে স্বৈরাচার নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে। পতিত স্বৈরাচারদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যেটা অর্জন করেছি সেটা যেন বৃথা না যায়। কারণ, সীমান্তের ওপারে স্বৈরাচার বসে আছে। সেখানে বসে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে। প্রতিমুহূর্তে একেকটা ঘটনা ঘটিয়ে সেটাকে সারাবিশ্বে দেখাতে চায় বাংলাদেশ মৌলবাদীদের দেশ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে নাকি সংখ্যালঘু ভাইদের নির্যাতন করা হচ্ছে। ভারতের পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনভাবে লেখা হচ্ছে এবং দেশটি এমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে যেন বাংলাদেশে এসব নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটছে। ঘটনা তো তা না। তাহলে কারা করছে? কেন করছে? অবশ্যই এর পেছনে উদ্দেশ্য আছে।

বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে সংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির জেষ্ঠ্য যুগ্ম-মহাসচিব ও দলের মুখাপাত্র রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, চিন্ময়ের মুক্তি চাওয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি ভারতের উলম্ব অভিযান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার নিজস্ব মেরুদণ্ডের ওপর দাঁড়াবে, তা কখনোই পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র চায়নি। এজন্যই তারা শেখ হাসিনার পতনকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। কথাবার্তা নেই, হঠাৎ করে একটি সংগঠন, তাদের বৈধতা আছে কি না, এ সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ অবহিত নয়। তাদের একজন নেতার বিতর্কিত আচরণের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশের ভেতরের কেউ-কেউ এবং বাহির থেকে সেই বিতর্কিত নেতার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করছেন।

এই প্রতিবাদ আসাটাই সারা দেশের মানুষকে এক ধরনের দুশ্চিন্তার মাঝে ফেলেছে। মানুষ বিস্মিত হয়ে বিষয়টি লক্ষ্য করছে, চিন্ময় নামে একটি ব্যক্তি যিনি একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন; অথচ সেই সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, তাকে আগে অনৈতিক কাজের অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছে।

রিজভী বলেন, ভারত আমাদের স্বার্থে কখনই কাজ করেনি। বাংলাদেশ মরে যাক, ধ্বংস হোক এতে তাদের কিছু আসে যায় না। এটি হচ্ছে দিল্লির ঘোষিত নীতি। শেখ হাসিনা থাকলে তাদের অনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন করতে কোনো বিঘ্ন হতো না। এদেশের গণতন্ত্রমনা মানুষ, জাতীয়তাবাদী শক্তি তারা যেহেতু কিছুটা স্পেস পেয়েছে, গণতন্ত্র এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে, বিশুদ্ধ বাতাস নিতে পারছে, এই জিনিসগুলো পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের ভালো লাগছে না। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চায়। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। কিন্তু এদেশের মানুষ ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে। তারা কারো ষড়যন্ত্রে পা দেব না।

এদিকে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ করেছে। সেখানে সংগঠনটির নেতা মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, সুপরিকল্পিত একটি সাম্প্রদায়িক উসকানির মাধ্যমে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শুধু বর্বর নয়, বরং একটি ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড। ভারতরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতির তীব্র সমালোচনা করছি। ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, বাংলাদেশের ব্যাপারে আপনারা নীতি পরিবর্তন করুন। অন্যথায়, গোটা বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষ রাজপথে নেমে আসবে এবং ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হবে।

এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ভারত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চায়। সে জন্য বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে দেশটি লাভবান হবে। একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তা যেভাবে নাক গলায় যেন আমাদেরকে তারা অঙ্গরাজ্য মনে করে। এদেশে একজন ‘দুষ্টু লোক’ গ্রেফতার হয়েছে। আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। কিন্তু এখানেও তারা হস্তক্ষেপ করতে চায়। পশ্চিমবঙ্গে কাউকে এভাবে গ্রেফতার করা হলে দিল্লিকে তো প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখি না। তিনি বলেন, চিন্ময় দাস কয়েকদিন আগে রংপুরে যে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন সেদিনই তাকে গ্রেফতার করা উচিত ছিল।

 

ভোরের আকাশ/রন