logo
আপডেট : ২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০৮
ইমরান খানকে কী বুশরা মুক্ত করতে পারবেন
আব্দুর রহিম

ইমরান খানকে কী বুশরা মুক্ত করতে পারবেন

রাজনীতি আসলে খরস্রোতা নদীর মতো। বাধা পেলে তা তার গতিপথ পাল্টে ফেলে; নয়তো সামনে যা পায়, তা বিলীন করে দেয়। গতিপথ পরিবর্তনও করে। জেগে ওঠে নতুন চর। সেই চরে ফলে সোনার ফসল। নতুন চাষিও তৈরি হয়। এমনই এক চাষি বুশরা বিবি। কয়েক দিন আগেও তার পরিচয় ছিল একজন আধ্যাত্মিক নারী কিংবা গৃহিণী। সব ছাপিয়ে তিনি এখন বিশ্ব দরবারে ‘রাজনীতিক’।

হেঁসেল থেকে বের হয়ে এসে তিনি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজনীতির মাঠ। এরই মধ্যে তিনি একটি সফল লংমার্চে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সব মিলিয়ে তিনি যে একজন পুরোদস্তুর রাজনীতিক—সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও তিনি এখনও নিজেকে রাজনীতিক হিসেবে পরিচয় দেন না, তবে তার কাঁধে যে স্বামী ইমরান খানকে মুক্ত করার দায়িত্ব এসে পড়েছে, সে কথা তার আর বুঝতে বাকি নেই। এখন প্রশ্ন, তিনি কি স্বামীকে মুক্ত করতে পারবেন? সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। কেন তিনি রাজনীতিতে নাম লেখালেন, তা আগে জানা দরকার।

এশিয়ার রাজনীতিতে দমন-পীড়ন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। পাকিস্তানের মতো দেশে তো সেটা মামুলি বিষয় বৈকি! দুর্নীতির দায়ে ইমরান খান কারাগারে বন্দী। বুশরাও কারাগারে ছিলেন। গত অক্টোবরে তিনি মুক্তি পান। এর পরপরই ইসলামাবাদে শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ। সেই আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ বুশরা বিবি।

ইমরান খানের মুক্তি দাবিতে কয়েক দিন ধরেই অগ্নিগর্ভ ইসলামাবাদ। আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে রাজধানীর বাইরেও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ইমরান সমর্থকদের সংঘর্ষও হচ্ছে। ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। চলছে ধরপাকড়। কিন্তু কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না বিক্ষোভকারীদের। তাদের একটাই দাবি—ইমরান খানের মুক্তি। এই আন্দোলনে যোগ দিতে গত সপ্তাহে ইসলামাবাদের ডি-চক এলাকায় পৌঁছান ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রায় ১০ হাজার কর্মী-সমর্থক। কিন্তু মঙ্গলবার মধ্যরাতের আগে তাদের হটিয়ে দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। অনেক মানুষ হতাহত হন।

এই আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন বুশরা। এর আগে তার জনসমক্ষে আসার ঘটনা বিরল। রাজনীতিতে যে তার অবস্থান শক্ত হচ্ছে, তা বোঝা গেল লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসমা ফাইজের কথায়। তার ভাষ্য, ‘মনে করা হতো বুশরা একজন অরাজনৈতিক মানুষ। সে জন্য (বিরোধীরা) তাকে হুমকি বলে মনে করতেন না। তবে গত কয়েক দিনে আমরা বুশরার ভিন্ন রূপ দেখতে পেয়েছি।’

ইসলামাবাদে আন্দোলনের আগে পিটিআই-সমর্থকদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো দেখা করেছিলেন বুশরা বিবি। সে সময় তিনি ইমরান খানকে রক্ষার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরপর, ইসলামাবাদে যখন আন্দোলনকারী ও নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল, তখন হঠাৎ একটি ট্রাকের ওপর দেখা যায় তাকে। তখন সবার নজর চলে যায় তার দিকে। ট্রাকের ওপর থেকে পিটিআই সদস্যদের উদ্দেশে চিৎকার করে বুশরা বিবি বলেন, ‘আজ আপনাদের একটি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। সেটি হলো ইমরান খান এখানে না আসা পর্যন্ত আপনারা চলে যাবেন না।’ পিটিআই সদস্যরাও তাকে আশ্বস্ত করেছেন।

এখন দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত তারা তার সঙ্গে থাকেন কি না। তারা রাস্তায় থাকলে ইমরান খানকে সরকার মুক্তি দিতে বাধ্য হবে বলেই মনে হয়। ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ইমরান খানের সঙ্গে বুশরার সম্পর্কের কারণেই বিক্ষোভকারীদের কাছে তিনি বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছেন। এই বিক্ষোভকারীরাই সেদিন ইমরানের মুক্তির দাবিতে ইসলামাবাদে বিক্ষোভ করেছেন।

তবে বিক্ষোভে বুশরার ভূমিকার জেরে পিটিআইয়ের মধ্যে বিভেদ দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন কুগেলম্যান। তিনি বলেন, ‘বিক্ষোভে বুশরার উপস্থিতি বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, দলের অনেক নেতার সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব রয়েছে। এরপরও বুশরার এই ভূমিকা দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। এটিই এখন দলটির কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার।’

ইসলামাবাদে বিক্ষোভের আগে কারাগার থেকে নিজের দলের উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়েছিলেন ইমরান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, রাজনীতির সঙ্গে বুশরা বিবির কোনো সম্পর্ক নেই। স্ত্রী হিসেবে তিনি শুধু আমার বার্তাগুলো পৌঁছে দেন। ইমরানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে পিটিআই’র জনসংযোগ বিভাগও বলেছে, তিনি ইমরানের স্ত্রী হিসেবে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন, দলের কোনো রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়।

তবে ঘটনা যা-ই হোক, ঘুরে ফিরে ইমরান খানের মুক্তির জন্য বড় আন্দোলন প্রয়োজন। আর সেই আন্দোলনের মধ্যমণি এখন বুশরা বিবি। তিনি সফল হবেন কি না, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

 

ভোরের আকাশ/রন