ঢাকা ও দিল্লির সম্পর্কে উত্তাপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ছন্দপতন শুরু হয়। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ ও ড. ইউনূসের সরকার নিয়ে গুজব ছড়ানো চলতে থাকে। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি নিয়ে বারবার আপত্তি জানালেও ভারত সরকার তা আমলে নেয়নি। সর্বশেষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের গ্রেপ্তার ইস্যু নিয়ে সে দেশের গণমাধ্যম উঠে পড়ে লেগেছে। প্রতিদিনই ধর্মীয় সংখ্যালঘুর তাস ব্যবহার করে দেশটির গণমাধ্যম প্রচার করছে। এর প্রেক্ষিতে দুই দেশের মানুষের পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তীব্র হচ্ছে। একে-অপরের পতাকার অসম্মান করা থেকে শুরু করে দুই দেশের কর্তা ব্যক্তিরা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য-বিবৃতি ও একে-অন্যকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে লিখিত প্রস্তাবনা পাঠানোর কথা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সর্বশেষ আগরতলায় বাংলাদেশের সরকারি হাইকমিশন অফিসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পোড়ানো হয়েছে বাংলাদেশের পতাকা। এতে করে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে এসে পৌঁছেছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু সরকার নয়, দুই দেশের জনগণের আক্রমণাত্মক অবস্থান ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। প্রভাব ফেলছে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও। সর্বোপরি, দুই দেশের সম্পর্কের এমন অবস্থা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা বাড়ছে।
আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুর ও পোড়ানো হলো জাতীয় পতাকা
বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনার সময়কার কিছু ভিডিওতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার পর তাতে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে হিন্দু সংঘ সমিতি নামের একটি সংগঠনের সভা ছিল আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সামনে। সভা শেষে সংগঠনের ছয়জনের একটি প্রতিনিধিদল হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে যায় স্মারকলিপি জমা দিতে। এ সময় বাইরে থাকা কিছু হিন্দু যুবক হঠাৎ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। ঘটনাস্থল থেকে এমন কিছু ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে। পরে হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইন বোর্ড ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।
বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের কোচবিহারেও। সেখানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় সনাতনী হিন্দু মঞ্চ। সংগঠনটির সদস্যরা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া চ্যাংড়াবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিলও করে। এই কর্মসূচি ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ছিল সীমান্ত এলাকায়। বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের পেট্টাপোল সীমান্তেও। সেখানে সমাবেশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে।
তীব্র প্রতিবাদ বাংলাদেশের
ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল সোমবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এতে বলা হয়, গতকাল সোমবার দুপুরে আগরতলার হিন্দু সংঘ সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভ ও আক্রমণের কারণে বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে ক্ষুব্ধ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্য চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। এ সময় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরের সম্পত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করে। দুঃখের বিষয়, হাইকমিশন প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রাখেনি। সহকারী হাইকমিশনের সব সদস্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
বাংলাদেশ সরকার আরও জানাতে চায় যে, বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক মিশনের ওপর এই জঘন্য হামলা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অসম্মান একটি প্যাটার্নে এসেছে, গত ২৮ নভেম্বর কলকাতায় একই ধরনের হিংসাত্মক বিক্ষোভ হয়েছিল। আগরতলায় কূটনৈতিক মিশনের ওপর এমন হামলা ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশন, ১৯৬১ লঙ্ঘন হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, যেহেতু কূটনৈতিক মিশনগুলোতে যে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ বা ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সেই দেশের সরকারের দায়িত্ব, তাই বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া এবং ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করার জন্য আহ্বান জানায়।
এছাড়া ভারতে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ও অকূটনীতিক সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং কূটনৈতিক মিশনে যে কোনো সহিংসতা প্রতিরোধ করতে আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
ভারতের দুঃখ প্রকাশ
ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাকে ‘গভীরভাবে দুঃখজনক’ বলে বিবৃতি দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কূটনৈতিক ও কনস্যুলার ভবনকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের ভবনে আজকের অনুপ্রবেশের ঘটনা গভীরভাবে দুঃখজনক। কোনো অবস্থাতেই কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পত্তি লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত নয়।’
বাংলাদেশের হাইকমিশন ও তাদের ডেপুটি/সহকারী হাইকমিশনগুলোর জন্য ভারত সরকার নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠাতে ব্যবস্থা নিতে ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ মমতা ব্যানার্জীর
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ইস্যু ঘিরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় দেওয়া বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, জাতিসংঘ যাতে বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠায়, সেজন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি তিনি অনুরোধ জানাচ্ছেন।
তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে এই বিষয়ে ভারত সরকার কথা বলুক যাতে সেখানে তারা শান্তি বাহিনী পাঠাতে পারে। আমাদের এই বিষয়ে অনুরোধ রইল।’
গতকাল সোমবার দুপুরে বিধানসভার অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেন, ‘বর্ডার সিকিউরিটি কেন্দ্রের আওতায়। আমাদের এক্তিয়ার বা দায়িত্বে নেই। আমরা হাউজের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রী যেন সংসদে বাংলাদেশের বিষয়ে কথা বলেন। যদি প্রধানমন্ত্রীর অসুবিধা থাকে কোনও ব্যাপারে তাহলে বিদেশমন্ত্রী যেন সংসদে বিবৃতি দিয়ে জানান যে কেন্দ্র এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমার দ্বিতীয় পরামর্শ, যদি এ জাতীয় ঘটনা (সহিংসতার) ঘটতে থাকে তাহলে আমরা আমাদের লোকদের ফিরিয়ে আনব। সরকার উদ্যোগ নেবে। তারা ফিরে আসলে থাকার, খাওয়ার কোনও সমস্যা হবে না। কোনও ভারতীয়ের ওপর অত্যাচার হবে সেটা আমরা হতে দিতে পারি না।’
‘ভারতীয়দের ওপর অত্যাচার’ বলতে তিনি কাদের বুঝিয়েছেন, তা ওই বক্তব্যে পরিষ্কার করেননি।
বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়নের প্রস্তাব মমতার
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে ও হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল সোমবার বিধানসভা অধিবেশনে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার সময় এ কথা বলেন পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রী। এ সময় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দেশটির সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিবৃতি দাবি করেন তিনি।
মমতা বলেন, আমরা প্রস্তাব দিলাম। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) বিবৃতি দিন। রাষ্ট্রসংঘের নজরে আনা হোক বিষয়টি। কেন্দ্র রাষ্ট্রসংঘের কাছে আবেদন করুক, শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর জন্য।
বিধানসভায় মমতা বলেন, বাংলাদেশে ভারতীয় পতাকাকে লাগাতার অসম্মান করা হচ্ছে। সেসব ছবি গত কয়েকদিন ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গে বিপুল সংখ্যক মানুষের মনে ক্ষোভ ও রাগ তৈরি হয়েছে। এভাবে জাতীয় পতাকার অমর্যাদা করা ঠিক হচ্ছে না। আমি ইসকনের সঙ্গেও কথা বলেছি। এটা একটা স্পর্শকাতর ব্যাপার যেটা আমাদের সবাইকে আঘাত দিচ্ছে। মানসিকভাবে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেসব ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করব না আমি। কারণ, বাংলাদেশ অন্য দেশ। এটা আমার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।
মমতা বলেন, ভারতের জাতীয় পতাকার অপমান এভাবে মেনে নেওয়া যেতে পারে না। কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। ওই দেশে (বাংলাদেশ) কেন্দ্র সরকার প্রতিনিধি পাঠাক শান্তির বার্তা নিয়ে। তাদের ধর্ম পালন করার অধিকার আছে। কেন্দ্র রাষ্ট্রসংঘের কাছে তারা আবেদন করুক, শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর জন্য।
জানা গেছে, মমতার এই প্রস্তাব আবেদন আকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে পাঠাবেন বিধানসভার স্পিকার।
মমতা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী না পারলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে সংসদকে জানান। এমন ঘটনা ঘটে চললে আমাদের লোককে ফিরিয়ে আনতে চাই। একবেলা খাবো, দরকার হলে একটা রুটি ভাগ করে খাবো। আমাদের লোক অত্যাচারিত হোক চাই না।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে এ রাজ্যের প্রায় ৭৯ জন মৎস্যজীবী ভুল করে ঢুকে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। তাদের বাংলাদেশের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়, তারপর জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা এখনও মুক্তি পাননি। কেন্দ্রীয় সরকারকে বারবার বলেও কোনও লাভ হয়নি। আমরা কেন্দ্রকে বলেছি। কিন্তু আজও তাদের মুক্তি দেওয়া হয়নি। অথচ এখানে বাংলাদেশের ট্রলার ডুবে গিয়েছিল। আমরা তাদের উদ্ধার করে দেশে পাঠিয়েছি। কিন্তু আমাদের লোককে ওরা ছাড়েনি। কেন্দ্রও ব্যাপারটা দেখুক।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি গ্লোবাল ক্যাম্পেইন চলছে- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি গ্লোবাল ক্যাম্পেইন চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সমাজের পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সোমবার বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এটি ভুলে গেলে চলবে না যে একটি গ্লোবাল ক্যাম্পেইন চলছে। পৃথিবীর সবাই যে তাতে অংশগ্রহণ করছে, তেমনও নয়। তবে গ্লোবাল ক্যাম্পেইন চলছে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মাধ্যমে। তারা সবখানে আঘাত করার চেষ্টা করছে। গ্লোবাল ক্যাম্পেইন যে চলছে এটি আমরা বিদেশি কূটনীতিকদের আজকে বলেছি।’
গ্লোবাল ক্যাম্পেইন কারা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোন দেশ করছে এটি আমি বলবো না। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান করছে এবং সে প্রতিষ্ঠানগুলোর ধরনটি কী-তা আপনারা ভালো জানেন।’
‘এটি আমাদের মেনে নিতে হবে যে যারা এটি করছে- তাদের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছানোর ক্ষমতা আমাদের থেকে বেশি’ বলে তিনি জানান।
কোন দেশের মিডিয়া পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে খুব স্পষ্ট। এটি প্রধানত ভারতীয় মিডিয়া। কিন্তু এর বাইরেও অনেক মিডিয়ায় ভারতের মিডিয়ার বক্তব্যকে রেফারেন্স করে সংবাদ দেওয়া হয়েছে।’
ব্রিফিংয়ে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ব্রিফ করেছি, যাতে ভুল ধারণা সৃষ্টি না হয়। কারণ ভুল ধারণা সৃষ্টি করার মতো পরিবেশ আছে। বিশেষ করে মিডিয়ার একাংশ, কোন দেশের সেটা বলছি না তারা যতটুকু পারা যায় খারাপ পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সমাজের অংশ এবং সরকার এটি বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কোনও মানুষ ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের কারণে নিগৃহীত হবে না এবং এটি আমরা নিশ্চিত করবো।’
সরকারের চার মাস সময়কালে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকার উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি খারাপ করার জন্য কয়েকবার অপচেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সরকার, রাজনীতিবিদ, শিক্ষার্থীরা সেটি প্রতিহত করেছে বলে তিনি জানান।
দুই-একটা ঘটনা যে ঘটেনি-বিষয়টি সেরকম নয়। তবে এ ধরনের ঘটনা এর আগের সরকারের সময়েও ঘটেছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি খারাপ সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ রকম একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা দেশের ভেতরে ও বাইরেও আছে। এটি যেন সফল না হয় আমরা তা চেষ্টা করছি।’
মমতা ব্যানার্জিও বক্তব্যেও জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জির বক্তব্য আমরা মমতা ব্যানার্জির মতো দেখতে চাই। উনি এ বক্তব্য কেন দিলেন এটি আমি বুঝতে পারছি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটি তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নয়। রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। আমার মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এটি তার জন্য সহায়ক হবে না।’
৫ আগস্টের আগে এবং পরে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এক না। পারস্পরিক স্বার্থ ঠিক রেখে আমরা ভারতের সঙ্গে স্বাভাবিক, ভালো, সুসম্পর্ক চাই বলে তিনি জানান।
‘বাংলাদেশের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করে ভারতের কী স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে’, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি পরিমাপ কীভাবে করবেন। এখন ভিসা বন্ধ আছে এবং এ কারণে অনেকের অসুবিধা হচ্ছে। আবার এ কারণে অনেকের সুবিধাও হচ্ছে। আমি গত রোববার আমার চেকআপের জন্য একটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তাদের সব সিট ভর্তি। এটি ভারতের স্বার্থে যায় কিনা দেখতে হবে।’
ভারতের রাজনীতিবিদদের কোনও বার্তা দিতে চান কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা যে বার্তা দিতে চাই সেটি হলো-এই সরকার কোনও ধরনের সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ বরদাস্ত করবে না এবং হিন্দু বা মুসলিম বলে কথা নয়, আমরা সবাইকে সমান চোখে দেখবো। আমরা এই বার্তা সবাইকে দিতে চাই, শুধু কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে নয়।’
হাইকমিশনে হামলা, বিক্ষোভের ডাক হাসনাতের
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। গতকাল (ডিসেম্বর ২, ২০২৪) রাত ৮টায় রাজু ভাস্কর্যে এ বিক্ষোভ মিছিল হবে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন- ‘ভারতের আগরতলাস্থ বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। সময়: রাত ৮টা, স্থান: রাজু ভাস্কর্য’
ভোরের আকাশ/রন