মানিকগঞ্জে ‘পেপারওয়ালার’ খবর রাখে না কেউ। ভালো নেই জেলাসহ উপজেলার সংবাদপত্র হকাররা। সংবাদপত্রে আসে না হকারদের কষ্টের কথা।
‘গরম খবর, গরম খবর’, ‘আজকের গরম খবর’, সব খবর জানতে পত্রিকা পড়ুন’- এমনভাবে ডাকতে থাকে পত্রিকার হকার। সেই কাক-ডাকা ভোরে শহর থেকে অলিগলি রাস্তায়, বাসা-বাড়ির সামনে কিংবা গ্রামের মেঠোপথে হকাররা জীবনের চাকা ঘুরাতে পত্রিকা বিক্রি করেন।
পাঠক তার পছন্দের পত্রিকাটি অন্তত পাঁচ থেকে দশ টাকার বিনিময়ে সারা পৃথিবীর খবর পেয়ে যায় নিমিষেই হাতের নাগালে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে খবরের কাগজের মালিকপক্ষ রাত ১২টার পর তীর্থের কাকের মতো বসে থাকেন পাঠক মহলে খবরের কাগজ পৌঁছবে বলে। কিন্তু একবারও কি পাঠক ভাবেন, কার মাধ্যমে তার পছন্দের খবরের কাগজটি তিনি সহজেই পেয়ে যান? মালিকপক্ষ কি একবারও ভাবেন, তার কোটি টাকার খবরের কাগজটা কে এসে তার পরিশ্রমের মাধ্যমে পাঠক মহলে ছড়িয়ে দেন? তিনি আর কেউ নন। তাকে পাঠক মহল এক নামে চেনেন, তার নাম হলো, ‘হকার’, যাকে পত্রিকার হকার বলে চেনেন, এমনকি তাকে অনেক সময় ডাকা হয়, ‘এই পেপার’, ‘ওই পত্রিকা’ ইত্যাদি ইত্যাদি নামে। একটা পত্রিকার দাম যদি পাঁচ টাকা হয়, তবে হকার পাঁচ টাকা বিক্রি করে পত্রিকার এজেন্ট এবং এজেন্ট পত্রিকার মালিককে দিয়ে কত টাকা হকার পায়? সে ক্ষেত্রে একজন হকার অবশ্যই নিরীহ মানুষ, যার অঢেল টাকা কামানোর পথ নাই বলেই পত্রিকা বিক্রি করার জন্য নেমে যায়। সময়টা কখন পাঠক জানে? কি দিন, কি রাত, কি বৃষ্টি, কি রৌদ্র, কি গরম, কি শীত—আকাশ পরিবেশের আবহাওয়া যেমনই থাক, হকার তার আরামের ঘুম হারাম করে মোরগ ডাকার আগেই নেমে পড়েন সমিতি কিংবা এজেন্টের কাছ থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করার জন্য, তার পর ছুটে চলেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। পা ক্ষয় করেন, গলা ফাটান শুধু একটা পত্রিকা বিক্রি করার জন্য। সেই গভীর রাত থেকে নেমে সারা দিনের পরিশ্রমের ফল আসে একজন হকারের জন্য সর্বসাকুল্যে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। যেদিন ভালো চলে, সেদিন ৪০০ টাকা।
কিন্তু এই আয়ের কোনো নিরাপত্তা নেই। এমনকি সামান্য এই আয়ের নিমিত্তে বিপন্ন হয় পুরো জীবনটাই। তাছাড়া পরিবার-পরিজন ও সন্তান লালন-পালন করে তাদের শিক্ষা, চিকিৎসাসহ এই আয় দিয়ে টিকে থাকা মুশকিল। এরই মধ্যে জনবহুল ব্যস্ত এই এলাকায় খবরের কাগজ বিক্রির উল্লেখযোগ্য বাজার হিসেবে বেছে নেন রাস্তার চলমান গাড়িগুলোকে। সে জন্য দিতে হয় দৌড়ঝাপ। সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় পড়া স্বাভাবিক। পাঠকের কাছে নিজের জীবন বাজি রেখে খবরের কাগজ পৌঁছায় ঠিকই, কিন্তু দুর্ঘটনায় তাদের পাশে কেউ থাকার নাই। প্রাকৃতিক রোগব্যাধি তো থাকেই। এই এলাকার হিসাব অনুযায়ী, একজন হকারের মাসিক আয় সর্বসাকুল্যে ৯ হাজার টাকা। ব্যস্ততম এই এলাকায় পারিপার্শ্বিক সাপেক্ষে ৯ হাজার টাকায় টিকে থাকার কথা না থাকলেও, নিজের সমস্যা ঢেকে পাঠকদের পত্রিকা ঠিকই পৌঁছে দেয় হকার। তাদের সম্বন্ধে ভাবার জন্য নাই পাঠকের সময়, না পত্রিকার হকার সমিতির সময়, না পত্রিকার মালিকপক্ষের।
পত্রিকার হকাররা তাদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন। সবার মতো তাদেরও একটি তালিকা করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দাবি জানান।
ভোরের আকাশ/রন