হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা ভারতীয় উপমহাদেশের এক দীর্ঘস্থায়ী ও দুঃখজনক বাস্তবতা। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে এবং তারপরেও এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বহুবার সংঘটিত হয়েছে। এসব দাঙ্গার পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ। ব্রিটিশ শাসকরা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতির মাধ্যমে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ এবং পরে ১৯২০-৩০-এর দশকের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এর বড় উদাহরণ। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ এবং পাকিস্তান ও ভারতের জন্মের সময় অসংখ্য মানুষ নিহত ও বাস্তুচ্যুত হয়।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর ভারতের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক দাঙ্গা হয়- যার প্রভাব এসে পড়ে বাংলাদেশেও। লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে হিন্দুদের অসংখ্য মন্দির ভেঙেছে, তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দিয়েছে। যারা বাবরি মসজিদ ভাঙার ‘প্রতিশোধ’ নিতে গিয়ে এই কাজ করলেন, তাদের কত শতাংশ লোক মসজিদে যান, রোজা রাখেন, জাকাত দেন বা ইসলামের অন্যান্য রীতি-নীতি মেনে চলেন, তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। কেননা এখানে ধর্ম বা ধর্মীয় অনুভূতি যতটা না কাজ করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বছরের পর বছর জিইয়ে রাখা বিভক্তির রাজনীতি- যার মধ্য দিয়ে এ দুই ধর্মের লোকদের মধ্যে কেবল অবিশ্বাস ও অনাস্থার দেওয়াল লম্বা হতে থাকলেও রাজনীতিবিদরা এর থেকে সুবিধা নিয়েছেন বা এখনো নিচ্ছেন।
অনেক সময় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধার বৈষম্যও দাঙ্গার কারণ হতে পারে। ধর্মীয় নেতাদের অনেকে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা ও অপতথ্য ছড়িয়ে সংঘর্ষ উসকে দেন। কিছু ক্ষেত্রে গণমাধ্যমও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়াতে ভূমিকা রাখে; কিন্তু দাঙ্গাকারীদের শাস্তি না হওয়ায় এই সহিংসতা চালু থাকে। দাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ক্ষতি বহুবিস্তৃত। যেমন এর দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মানবিক। যেমন প্রাণহানি, লাঞ্ছনা ও বাস্তুচ্যুতি। অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, ঘরবাড়ি এবং অবকাঠামো ধ্বংস। দাঙ্গার কারণে সামাজিক বিভাজন বেড়ে যায়। সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে অবিশ্বাস ও শত্রুতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্ম দেয়।
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট: ১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এই বাংলার মানুষের ওপর যে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিল, সেখানেও ছিল ধর্মের দোহাই। উপরন্তু বাংলাদেশেরই কিছু মানুষ যে পশ্চিম পাকিস্তানের সহযোগী হিসেবে নিজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল, তার পেছনেও প্রধান যুক্তি ছিল এই ধর্ম। অর্থাৎ অনেকেই এটি বিশ্বাস করতেন যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল মূলত মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা। স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পরেও এই ধারণা বা মতে বিশ্বাসী লোকের অভাব নেই। আশ্চর্যের বিষয় হলো, শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিচিত অনেকেই এই মতে বিশ্বাসী এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের এই মতের প্রতিফলনও দেখা যায়। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের পতনের পরে বাংলাদেশে যে ‘ভারতবিরোধিতা’ তীব্র হয়েছে এবং তার বিপরীতে অনেকের মধ্যেই ‘পাকিস্তানপ্রীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সেখানেও বড় ভূমিকা রাখছে এই ধর্ম।
যদিও ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্মের কয়েক মাসের মধ্যে যে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, তার মূলনীতিতেই ধর্মনিরপেক্ষতা (সেক্যুলারিজম) শব্দটি রাখা হয়েছিল এই অঞ্চলের বৃহৎ দুই ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠী মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গা ও নানাবিধ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বাস্তবতা মাথায় রেখে। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদে সংবিধান বিল পেশ করার সময় সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন: ‘সাম্প্রদায়িকতার ভয়াবহ ফল আমরা দেখেছি। ক্ষমতালোভী লোকেরা কীভাবে ধর্মের অপব্যবহার করে, তাও আমরা দেখেছি। সংবিধানে প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব ধর্মপালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার বিলোপ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।’ (ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ গণপরিষদ বিতর্ক, সিসিবি ফাউন্ডেশন/২০১৪, পৃ. ৭৫)।
এর ওই বছরের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে সংবিধান বিল গৃহীত হওয়ার পরে তৎকালীন সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ যুক্ত করার যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে- তাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রে কারও নেই। হিন্দু তাদের ধর্ম পালন করবে- কারও বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে- তাদের কেউ বাধাদান করতে পারবে না। খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে- কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমাদের শুধু আপত্তি হলো এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। ২৫ বছর আমরা দেখেছি, ধর্মের নামে জুয়াচুরি, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেইমানি, ধর্মের নামে অত্যাচার, ধর্মের নামে খুন, ধর্মের নামে ব্যভিচার- এই বাংলাদেশের মাটিতে এসব চলেছে। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না।’ (গণপরিষদ বিতর্ক, প্রাগুক্ত, পৃ. ৯৬৩)।
তবে নির্মম বাস্তবতা হলো, ধর্মের রাজনীতিতে ফিরে আসার যাত্রা শুরু হয় বাহাত্তরের সংবিধান রচনার কিছুদিন পরেই। সেক্যুলারিজমের তত্ত্বটি সঠিকভাবে ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে জনসাধারণ কেউ বুঝে উঠতে পারেননি, অথবা সমাজে এই বোঝাপড়া তৈরির কোনো প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়নি। ধর্ম এবং রাজনীতির সম্পর্ক এবং রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পর্কের বিভিন্ন জটিল ও অনুপুঙ্খ বিষয় নিয়ে সমাজে আলোচনা হয়নি, বিতর্কের সুযোগ তৈরি করা হয়নি। একার্থে সমাজের এক এলিট অংশ যেভাবে বিবেচনা করেছেন তাকেই সবার মতো বলে উপস্থাপন করা হয়েছে। তার পরে সামরিক সরকারগুলো তাদের বৈধতার সংকট মোচনে ধর্ম এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দ্বারস্থ হয়েছে; সংবিধান বদল এবং ধর্মভিত্তিক দলের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।
১৯৭৮ সালে সংবিধান থেকে সেক্যুলারিজম বাদ দেওয়া হয় এবং ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও ইসলামপন্থি দলগুলো অংশগ্রহণ করে। ১৯৯১-পরবর্তী গণতান্ত্রিক পর্বেও ক্ষমতাসীন ও বিরোধী জোট তাদের ক্ষমতা রক্ষা ও দখলের লড়াইয়ে ইসলামপন্থিদের সঙ্গে মিত্রতা করে; আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সহিংস শত্রুতা ইসলামপন্থিদের উত্থানে এবং শক্তি সঞ্চয়ে সহযোগিতা করেছে এটা অনস্বীকার্য। গত কয়েক দশকে যেমন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক ডিসকোর্সে ধর্মকে নিয়ে এসেছে এবং ধর্মীয় ক্রীড়নকদের বৈধতা দিয়েছে, তেমনি ইসলামপন্থি সংগঠন ও আন্দোলনগুলো সমাজে ধর্মের প্রভাব বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের সঙ্গে ধর্মের প্রসঙ্গকে এমনভাবে জড়িয়ে ফেলা হয় যেন নৃতাত্ত্বিক বাঙালি পরিচয়ের সঙ্গে ইসলাম ধর্ম অনুসরণের একটি বিরোধ রয়েছে। অথচ দীর্ঘ দিনের ইতিহাস বাঙালির বহুমাত্রিক পরিচয়ের প্রমাণ দেয়। (আলী রীয়াজ ও সাইমুম পারভেজ, প্রথম আলো, ২০ মার্চ ২০২১)।
ধর্মীয় বিভেদে কার লাভ: সম্প্রতি এই ইস্যুতে বেশ কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে, যার ফলে এখানে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা তৈরি হয় কি না, সেই আশঙ্কাও দেখা দিয়েছিল। প্রশ্ন হলো, এই ধরনের পরিস্থিতিতে কার লাভ কার ক্ষতি? ধর্মীয় বিভেদ ও সহিংসতায় মানুষের কোনো লাভ হয় না। লাভ হয় কিছু রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল ও উগ্রবাদী কিছু সংগঠনের- যারা ধর্মকে তাদের বিশ্বাস ও ভোটের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। যারা ধর্মের আফিম খাইয়ে দেশ শাসন করতে চায় এবং দেশের মানুষের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। পরকালের লোভ ও ভয় দেখিয়ে যারা মানুষকে দুর্বল করে রাখে। যারা ধর্মকে পারস্পরিক শান্তি সৌহার্দ্য বজায় রাখার বিপরীতে অন্য ধর্মের ওপর নিজের ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে সমাজ ও রাষ্ট্রে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়। ফলে যখনই কোনো উপলক্ষ তৈরি হয় তখনই তারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় উসকানি দেয়। ধর্মের দর্শন তথা শান্তির বারতার বদলে তারা সেই উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢালে। এই প্রবণতা বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই লক্ষ্য করা যায়। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি যা করে, বাংলাদেশেও অনেক ধর্মীয় দল ও সংগঠন এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভাব বিস্তারকারী কিছু কিছু ধর্মীয় নেতা তাতে বাতাস দেন।
সমাধান কী: একটা ব্যক্তিগত ঘটনা শেয়ার করি। একদিন রাস্তায় মেয়েকে নিয়ে হাঁটার সময় তার একজন শিক্ষকের সঙ্গে দেখা। আমার মেয়ে তাকে সালাম দিল না। বাসায় গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি ‘টিচারকে সালাম দিলে না কেন?’ সে বলল: ‘মিস তো খ্রিস্টান!’
তার উত্তর শুনে আমি এবং আমার স্ত্রী উভয়ই লজ্জিত হই এবং কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হই। যেমন-
১. ক্লাস থ্রির একটি শিশুর মনে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান বোধটি কীভাবে প্রবেশ করল?
২. তার এই বোধ তৈরির পেছনে বাবা-মা হিসেবে আমাদের দায় কতখানি?
৩. স্কুলে কি এই বিষয়ে কিছু শেখানো হয়নি যে, রাস্তায় শিক্ষককে দেখলে কী বলে সম্বোধন করতে হবে বা কীভাবে তাকে সালাম অথবা অন্য কোনো ভাষায় তাকে সম্মান জানাতে হবে?
৪. স্মার্টফোনে আসক্ত শিশুদের মনোজগতে ধর্ম কীভাবে প্রভাব বিস্তার করছে? তারা যেসব কনটেন্ট দেখে তাতে ধর্মীয় ইস্যুতে তাদের মধ্যে কী ধরনের বোধ তৈরি হয়?
এমতাবস্থায় কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:
ক. ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং শৈশব থেকেই শিশুদের এই চিন্তায় গড়ে তোলা।
খ. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রচার।
গ. সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় উসকানিদাতা, ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ও দাঙ্গাকারীদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
ঘ. ধর্মকে রাষ্ট্র ও রাজনীতির বাইরে রাখার জন্য এ বিষয়ে সংবিধান ও আইনি কাঠামো গড়ে তোলা।
ঙ. গণমাধ্যম যাতে এই ধরনের পরিস্থিতিতে কোনো গুজব না ছড়ায় বা গুজব ছড়াতে উৎসাহ না দেয়, সে জন্য তার দায়িত্বশীল ভূমিকা নিশ্চিত করা। গুজব ছড়ালে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা।
চ. বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংলাপ ও সহমর্মিতা বাড়াতে নাগরিক সমাজের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সক্রিয় হওয়া। এ বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি চালিয়ে যাওয়া।
ছ. মসজিদ, মন্দিরসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব তুলে ধরা এবং মানুষ যাতে কোনোভাবেই কারো কথায় উত্তেজিত হয়ে অন্য ধর্মের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ না চালায়, সে জন্য উদ্বুদ্ধ করা।
পরিশেষে, এই ভূখণ্ডে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা একটি জটিল সমস্যা, যা কেবল আইনি পদক্ষেপ নয় বরং রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সামাজিক সচেতনতা এবং নাগরিক উদ্যোগের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। এই সমস্যা সমাধানে সব সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হলে তার মাধ্যমে ভারতে বিজেপি এবং বাংলাদেশে কিছু ধর্মীয় মৌলবাদী দল ও উগ্রপন্থি দলেরই লাভ- আখেরে এর দ্বারা হিন্দু-মুসলমান কারোরই কোনো লাভ নেই। বরং এই ধরনের ঘটনা সব ধর্মের সাধারণ মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করে; যা পরস্পরের মধ্যে অনাস্থা ও অবিশ্বাসের জন্ম দেয়। একটি দেশে বা প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে এই ধরনের অনাস্থা ও অবিশ্বাস শুধু মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়ায়।
ভারতের খ্যাতিমান শিল্পী কবীর সুমন বাংলাদেশ-ভারতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন : ‘তোরা ধর্ম আর রাজনীতি নিয়ে ঝগড়া কাজিয়া করে মর। আমি প্রেম করছি, প্রেম করে যাব।’
কবীর সুমনেরই একটা গানের লাইন দিয়ে শেষ করা যাক:
‘আমি চাই বিজেপি নেতার সালমা খাতুন পুত্রবধূ
আমি চাই ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে মানুষ শুধু।’
লেখক: সাংবাদিক।