শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ও গ্রহণের মতোই গুরুত্বপূর্ণ অংশ খেলার মাঠ। খেলাধূলা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক বিকাশসহ বিভিন্নভাবে শিখতে এবং বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। তেমনি খেলাধুলার অভাবে শিশুদের মধ্যে মোবাইল কার্টুন, ভিডিও গেম আসক্তি বাড়ছে। তাদের গঠন প্রক্রিয়া শুরু লগ্নে বড় বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। খেলাধূলা শিক্ষার্থীদের অধিকার। অথচ পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার ১১৯ নং পশ্চিম গাওখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই অধিকার থেকে চরমভাবে বঞ্চিত। দুর্ভাগ্যের বিষয়, একটি মাঠের অভাবে কোমলমতি শিশুরা সকালে সমাবেশের আগে এবং টিফিনের সময় খেলাধুলা করতে পারছে না। নদী ভাঙনে বিদ্যালয়টির খেলার মাঠ বিলীন হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ না থাকায় খেলাধুলা এখন বন্ধ, যার প্রভাব পড়ছে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে। টিফিনের সময় তাদের শ্রেণিকক্ষে বসে থাকা খুবই দুঃখজনক।
স্কুলে খেলার মাঠ না থাকায় খেলাধুলা করার সুযোগ পাচ্ছে না অত্র বিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও প্রাত্যহিক প্রাতঃসমাবেশ কার্যক্রমেও বিঘ্ন ঘটছে।
৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবির হোসেন জানায়, মাঠ না থাকায় খেলাধুলারও সুযোগ পাচ্ছে না, এমনকি বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
চতুর্থ শ্রেণীর জননী মন্ডল নামে এক শিক্ষার্থী জানান, বিদ্যালয়ের খেলাধুলার জন্য মাঠের প্রয়োজন। আমরা খেলাধুলা করতে পারলে শরীর ও মন ভালো থাকবে। তাহলে পড়াশোনায় আরও আগ্রহী হতে পারব।
আরেক শিক্ষার্থী জানায়, টিফিনের সময় বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে মন চায়। কিন্তু মাঠ না থাকায় আমরা খেলাধুলা করতে পারি না।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮১ সালে বিদ্যালয়টি ২৫ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি নদীভাঙনের মুখে পড়েছে। পার্শ্ববর্তী খালের পানি বিদ্যালয়ের একেবারে কাছে চলে এসেছে। সেখানে স্রোতের তোড় আঘাত হানছে, যা প্রতিদিন বিদ্যালয়টিকে হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বিদ্যালয়টি পর্যায়ক্রমে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ভাঙনের কারণে বর্তমানে বিদ্যালয়ের সামনে রয়েছে একচিলতে জায়গা। বড় সমস্যা হচ্ছে, ছোট শিশুদের সবসময়ই চোখে চোখে রাখতে হয়, যাতে নদীতে পড়ে না যায়। সব খেয়ালই শিক্ষকদের রাখতে হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব কুমার বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা মাঠের অভাবে খেলাধুলা করতে পারে না। তা ছাড়া বিদ্যালয়টি বার্ষিক ক্রীড়াপ্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারে না। এ ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ের ফুটবল খেলায়ও অংশগ্রহণ করতে পারে না। তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভালোভাবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে একটি খেলার মাঠ তৈরির এবং ভাঙন রোধে যথাযথ ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান তিনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোসা. হেনায়ারা বেগম বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভোরের আকাশ/রন