logo
আপডেট : ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১০:৩৮
আসাদ সাম্রাজ্যের পতন
সিরাজুল ইসলাম

আসাদ সাম্রাজ্যের পতন

১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান হলো সিরিয়ায়। গতকাল রোববার সকালে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ। এর মধ্য দিয়ে ৫৩ বছরের আসাদ সাম্রাজ্যের পতন হলো। বেকারত্বের ক্ষুদ্র বিক্ষোভ থেকে সৃষ্ট আন্দোলন ১৩ বছর আগে রূপ নেয় গৃহযুদ্ধে। এতে চরম বিপাকে পড়েন প্রেসিডেন্ট বাসার। এ সময় তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঘনিষ্ঠ দুই মিত্র রাশিয়া ও ইরান। তাদের বাহিনী দামেস্কোর সেনাবাহিনীর পক্ষ হয়ে লড়ছিল। প্রতিবেশী তুরস্কের বাহিনীও লড়ছিল তাদের সুরক্ষার জন্য। অপরদিকে বাসার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছিল মার্কিন বাহিনী এবং তাদের কয়েকটি মিত্র দেশের সেনারা। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শহরের নিয়ন্ত্রণ আগেই নিয়েছিলেন বিদ্রোহীরা। অবশেষে গতকাল সকালে তারা রাজধারী দাসেস্কের উপকণ্ঠে পৌঁছে যান। ‘সময় শেষ’ বুঝতে পেরে বিদ্রোহী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বাসার। সেখানে তিনি পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যেতে রাজি হন। এর কিছুক্ষণ পরই তাকে নিয়ে একটি বিমান আকাশে উড়ে। তবে এটি কোথায় গেছে তা জানা যায়নি। বিমানটি রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। ইসরায়েল ও বিদ্রোহীরা দাবি করেছেন বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে বাসার আল আসাদ নিহত হয়ে থাকতে পারেন। বাসার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ধ্বংসের খেলায় মত্ত হয়েছেন বিদ্রোহীরা। তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বাসার আল আসাদের বাবা হাফিজ আল আসাদের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেন। অনেকে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যান। বাইরে ট্যাংকের ওপর উঠে নাচানাচি করেন বিদ্রোহীরা। তারা নানা ধরনের সেøাগানও দেন। ইসলামপন্থি সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এই বিদ্রোহ করেন। এতে নেতৃত্ব দেন এইচটিএসের প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। এদিকে বিদ্রোহীরা ক্ষমতা নেননি। আপাতত দায়িত্বে আছেন বাসারের প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-জালালি। তাকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন বিদ্রোহীরা। তবে খুব তাড়াতাড়ি তিনি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন বলে জানা গেছে।

বাশার আল আসাদের অন্যতম মিত্র রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশ ছাড়ার আগে বাশার আল আসাদ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করে সিরিয়া ছাড়তে সম্মত হন। তিনি বৈঠকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। সিরিয়ার চলমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থেকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানাই। এই প্রক্রিয়ায় সিরিয়ার সব বিরোধী পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে রাশিয়া।

সিরিয়ার রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটিগুলো সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে ঘাঁটিগুলোর জন্য মারাত্মক হুমকি নেই।

জানা গেছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। বিদ্রোহী যোদ্ধাদের রাজধানী দামেস্ক দখলের মুখে গতকাল রোববার সকালে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে দেশ ছাড়েন তিনি।

রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, বাশার আল আসাদ টানা ২৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এর আগে তার বাবা হাফিজ আল আসাদ টানা ২৯ বছর সিরিয়া শাসন করেন। বাশার আল আসাদের পালানোর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় ৫৩ বছরের আল আসাদ পরিবারের শাসনের অবসান হলো। গত কয়েক দিনে আলেপ্পো, হোমসসহ সিরিয়ার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নেন বিদ্রোহীরা। তারা ধীরে ধীরে দামেস্কের দিকে এগোতে থাকেন। গত রাতে দামেস্কের উপকণ্ঠে পৌঁছে যান বিদ্রোহীরা। গতকাল সকালে তারা দামেস্কে ঢুকে পড়েন। বাশার আল আসাদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর বিদ্রোহীরা দামেস্ক ও সিরিয়াকে ‘মুক্ত’ বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

আল-জাজিরা বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া। ধন-মান-ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিতে একসময়ের বেশ সমৃদ্ধ দেশটি এখন রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে চলছে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। ১৩ বছর পরও লড়াই-রক্তপাত থামেনি। এরই মধ্যে ইতিহাসের ভয়াবহতম মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে সিরিয়া। সিরিয়ার কথা বলতে গেলে অবধারিতভাবে আসবে আল আসাদ পরিবারের কথা। কেননা, টানা পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করছে পরিবারটি। এর মধ্যে ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন হাফিজ আল আসাদ। ২০০০ সালে তার মৃত্যু হয়। এরপর ওই বছরই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তার ছেলে বাশার আল আসাদ। টানা দুই যুগ (২৪ বছর) ধরে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন। যে গৃহযুদ্ধে বাশার আল আসাদের শাসনামলের অবসান হলো; সেটা দেশের বেকার তরুণদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ থেকে। তারুণ্যের সেই প্রতিবাদ দমাতে খড়্গ হাতে তুলে নেন বাশার। এতে রাজপথে রক্ত ঝরে, অশান্তি ও সংঘাত ছড়ায় দেশজুড়ে। এরপর সিরিয়া সংকটে একে একে জড়িয়ে পড়ে আঞ্চলিক শক্তি থেকে বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলো।

অতিসম্প্রতি সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের (আলেপ্পো ও হামা) নিয়ন্ত্রণ নেন বিদ্রোহীরা। পরে কৌশলগত হোমসসহ অন্যান্য শহরের নিয়ন্ত্রণ নেন। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্বে থাকা হায়াত তাহরির আলশামের (এইচটিএস) নেতা আবু মোহাম্মদ আল জোলানি বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে উৎখাত করা তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

হাফিজের হাত ধরে উত্থান : হাফিজ আল আসাদকে ‘আধুনিক সিরিয়া’র রূপকার বলা হয়। ১৯৩০ সালে সিরিয়ায় তার জন্ম। ছিলেন আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টির নেতা। ১৯৪৬ সালে দলটির রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। ১৯৫৫ সালে হাফিজ বিমানবাহিনীর পাইলট হিসেবে যোগ দেন।

সিরিয়ায় বাথ পার্টিকে শক্তিশালী করতে হাফিজের ভূমিকা ছিল। ১৯৬৬ সালে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানে বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন হাফিজ। রাজনৈতিকভাবে উচ্চাকাক্সক্ষী ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে নিজ রাজনৈতিক গুরু ও সিরীয় নেতা সালাহ আল জাদিদকে সরাতে অভ্যুত্থান ঘটান হাফিজ। পরের বছরই সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বরাবর ‘খেলুড়ে’ নেতা ছিলেন হাফিজ আল আসাদ। ১৯৭৩ সালে মিসর-ইসরায়েল যুদ্ধে তিনি মুসলিম মিত্র কায়রোর পক্ষে অবস্থান নেন। প্রায় দুই দশক পর ১৯৯১ সালে তিনিই আবার ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। ইসরায়েলের দখলে থাকা গোলান মালভূমি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় ভূমিকা রাখেন।

ইরাকের নেতা সাদ্দাম হোসেনকে ‘দীর্ঘদিনের শত্রু’ মনে করতেন হাফিজ। ১৯৯০-৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে সিরিয়া বাগদাদের বিপক্ষে ছিল। তিনি এ যুদ্ধে পশ্চিমা জোটকে সমর্থন দিয়েছিলেন। টানা ২৯ বছর ক্ষমতায় থেকে ২০০০ সালের ১০ জুন দামেস্কে মারা যান হাফিজ। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের শাসনের সূচনা হয়। ওই বছরের ১৭ জুলাই প্রেসিডেন্ট পদে বসেন তার ছেলে বাশার আল আসাদ। বাশারের জন্ম ১৯৬৫ সালে, দামেস্কে। শৈশবে দামেস্কে পড়াশোনা শুরু। তিনি দামেস্ক ইউনিভার্সিটি থেকে চক্ষুবিজ্ঞানে পড়েছেন। হতে চেয়েছিলেন চিকিৎসক। ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় পারদর্শী তিনি।

হাফিজ আল আসাদ তার দীর্ঘদিনের শাসনে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিজের পছন্দের ও বিশ্বস্ত লোকদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাদের মাধ্যমে দেশ শাসন করতেন তিনি। বাশার ক্ষমতায় এসে এ পদগুলোয় পরিবর্তন আনতে শুরু করেন। বিশেষ করে নিরাপত্তা সংস্থা ও সামরিক বাহিনীতে রদবদল করেন। নিজের আস্থাভাজন ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে বসিয়ে প্রশাসনের লাগাম শুরু থেকেই নিজের হাতে রাখেন বাশার।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে-পরে একজন সাংবাদিক বেশ কয়েকবার প্রেসিডেন্ট বাশারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি এএফপিকে বলেন, বাশার একজন ব্যতিক্রমী ও জটিল চরিত্রের মানুষ।

নিজের নাম গোপন রাখার শর্তে বাশারের সঙ্গে দেখা করার অভিজ্ঞতা জানিয়ে ওই সাংবাদিক বলেন, প্রতিবারই তাকে বেশ শান্ত দেখেছি। এমনকি যুদ্ধের চরম উত্তেজনার সময়ও বেশ শান্ত থাকেন। বাবার কাছ থেকে এ গুণ পেয়েছেন তিনি।

৩৪ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট : হাফিজ আল আসাদের উত্তরসূরী হওয়ার কথা ছিল না তার ছোট ছেলে বাশার আল আসাদের। প্রথা মেনে হাফিজের পর তার বড় ছেলে বাসেল আল আসাদ ক্ষমতার কেন্দ্রে আসবেন, এটাই ভেবেছিলেন অনেকে। কিন্তু ১৯৯৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় বাসেলের মৃত্যু হয়। এতে সিরিয়ার রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যায়। বাবার উত্তরসূরী হিসেবে দৃশ্যপটে আসেন বাশার আল আসাদ। তখন বাশার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চক্ষুবিজ্ঞানে উচ্চতর পড়াশোনা করছিলেন। বাবার নির্দেশে দেশে ফেরেন। এরপর সিরিয়ায় সামরিক বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। রাজনৈতিক বিষয়ে হাতে-কলমে জ্ঞানার্জন করতে থাকেন।

কাজেই বলা যায়, বাশারকে তার বাবাই একজন শাসক হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। ২০০০ সালে বাবার মৃত্যুর পর মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি দেশের শাসনভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। ২০০৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাশার পুনর্নির্বাচিত হন।

সংস্কারক থেকে কর্তৃত্ববাদী : শাসনামলের শুরুর দিকে বাশার সংস্কারের ভূমিকা রাখেন। প্রশাসনিক-রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক উদারীকরণের পথে হাঁটেন। এ ক্ষেত্রে বাবার আমলের বেশ কিছু কঠোর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেন তিনি। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরোধী তিনি।

প্রেসিডেন্ট হয়েও শুরুর দিকে আসাদকে সাধারণ জীবন কাটাতে দেখা যেত। গাড়ি চালাতেন নিজেই। ব্রিটিশ-সিরীয় স্ত্রী আসমাকে সঙ্গে নিয়ে রেস্তোরাঁয় নৈশভোজে যেতেন। ওই সময় তরুণ, পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত ও আধুনিক মানসিকতার বাশার সিরীয়দের কাছে পছন্দের মানুষ ছিলেন।

তবে পরিস্থিতি ক্রমেই বদলে যায়। সংস্কারকের ভূমিকা থেকে আসাদ কর্তৃত্ববাদী শাসক হয়ে উঠতে শুরু করেন। বিরোধী মত দমনে তার কুখ্যাতি ছড়াতে থাকে। সিরিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয় অনেক সরকারবিরোধী শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবীকে। তিনি বলেন, পশ্চিমা গণতন্ত্র সিরিয়ার জন্য নয়।

আরব বসন্ত থেকে গৃহযুদ্ধ : টানা ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সিরিয়ায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। উদ্বাস্তু হয়েছে দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ। ইতিহাসের সবচেয়ে করুণ মানবিক সংকট শুরু হয় সিরিয়ায়। এত কিছুর পরও আসাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ হয়নি। নিজের কর্তৃত্ব আরও পোক্ত করেন তিনি। দীর্ঘ এ লড়াইয়ে আসাদের পাশে ছিল মিত্র ইরান ও রাশিয়া। লেবাননের হিজবুল্লাহও আসাদের বেশ ঘনিষ্ঠ। এতে পশ্চিমা শক্তিগুলোর ঘোর আপত্তি। বেসামরিক মানুষের নির্বিচার মৃত্যু, ২০১৪ সালের সাজানো নির্বাচন, বেসামরিক মানুষের ওপর রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে তুমুল বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়ে আছেন বাশার।

ভেঙে ফেলা হচ্ছে হাফিজের ভাস্কর্য : রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেছেন সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। পালিয়ে গেছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। ভেঙে ফেলা হচ্ছে আসাদের বাবা সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদের ভাস্কর্য। ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন হাফিজ আল আসাদ। ২০০০ সালে তার মৃত্যু হয়। ওই বছরই সিরিয়ার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তার ছেলে বাশার আল আসাদ। টানা দুই যুগ ধরে (২৪ বছর) তিনি সিরিয়া শাসন করেন। তার আমলেই ২০১১ সালে সিরিয়ায় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। মিত্র রাশিয়া ও ইরানের সহায়তায় কয়েক বছর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিদ্রোহীদের দমন করতে সক্ষম হন বাশার আল আসাদ। যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি।

কয়েক বছর পর গত ২৭ নভেম্বর আসাদ বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা শুরু করেন সিরিয়ার বিদ্রোহীরা। হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতৃত্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর এবারের আক্রমণের গতি এতটাই দ্রুত ছিল যে সরকারি বাহিনী তাদের সামনে কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। অভিযান শুরুর মাত্র ১২ দিনের মাথায় গতকাল তারা রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেন। গত শনিবার দামেস্ক থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে জেরমানা শহরতলির কেন্দ্রে থাকা হাফিজ আল আসাদের একটি ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ জনতা।

ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই আরেক শহরতলি দ্রুজের বাসিন্দা। তারা সে সময় ফাঁকা গুলি ছোড়েন ও আসাদের পতন দাবি করেন।

বাসারের প্রধানমন্ত্রীর ওপর বিদ্রোহীদের ভরসা : প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ পালিয়ে গেলেও নিজ বাসভবনেই অবস্থান করছেন তার নিয়োগকৃত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল জালালি। বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কসহ পুরো সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলেও তার হাতেই এই মুহূর্তে সিরিয়া সরকারের ভার। এইচটিএসের পক্ষ থেকেও ঘোষণা এসেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত মোহাম্মদ আল জালালিই সামলাবেন শাসনভার। এদিকে নতুন সিরিয়া গঠনে বিদ্রোহীদের সবরকম সহায়তা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও। গতকাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

প্রতিবেদেন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের রাজধানী ত্যাগের পর বিবৃতি দেওয়া হয়েছে এইচটিএসের পক্ষ থেকে। এতে গোষ্ঠীটির প্রধান আবু মোহাম্মদ আল জোলানি বলেন, দামেস্কের কোনো প্রতিষ্ঠানের দখল নিতে নিষেধ করা হয়েছে বিদ্রোহীদেরকে। আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থাকবে এসবের ভার। উৎসবের সময়গুলো চালানোও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের মাধ্যমে নতুন সিরিয়ার সূচনা হলো মন্তব্য করে তিনি বলেন, নতুন সিরিয়া হবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জায়গা, যেখানে ন্যায়বিচারের জয় হবে এবং সিরিয়ানদের মর্যাদা রক্ষা করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/রন