logo
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১৩:৩১
সিরাজগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আজ
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আজ

আজ ১৪ ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে সিরাজগঞ্জ শহর মুক্ত হয়।

৯ ডিসেম্বর, বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জ মুক্ত করার জন্য একত্রিত হন এবং শপথ গ্রহণ করেন। ১০ ডিসেম্বর, শহর থেকে প্রায় ৩ মাইল দূরে শৈলাবাড়ি ক্যাম্পসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে আক্রমণ চালান। তিন দিনের এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসিকতা ও মরণপণ লড়াই করে।

১৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে টিকতে না পেরে রেলপথে ঈশ্বরদীর দিকে পালিয়ে যায়। এরপর, ১৪ ডিসেম্বর ভোরে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা এবং হাজারো জনতা সিরাজগঞ্জ শহর দখল করে। স্বাধীন বাংলার মাটিতে সেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

হানাদারদের মনোবল ভাঙার সূচনা
১০ ডিসেম্বর থেকেই সিরাজগঞ্জে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়তে থাকে। তাদের সহযোগী তথাকথিত শান্তি কমিটি, রাজাকার এবং আল-বদরদের কার্যক্রমও সীমিত হয়ে আসে। ১৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং স্থল ও নৌপথের নিয়ন্ত্রণ নেয়। শুধুমাত্র রেলপথ হানাদারদের দখলে ছিল।

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আমির হোসেন ভুলু, পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আব্দুল লতিফ মির্জা, আব্দুল আজিজ সরকার, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, মরহুম লুৎফর রহমান অরুন, এবং পান্না বাহিনীর প্রধান প্রয়াত টিএম শামীম পান্নার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা রেলওয়ে ঘাট, যমুনা নদীর তীর, কাজীপুর মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের চিফ-ইন-কমান্ড (সিএনসি) সোহরাব আলী সরকার জানান, ৯ ডিসেম্বর শৈলাবাড়ি ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা হামলা চালান। সেদিনের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হলেও ১১ ও ১২ ডিসেম্বর পুনরায় আক্রমণ চালান। ১৩ ডিসেম্বর তিন দিক থেকে চালানো আক্রমণে রাত ৩টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে।

পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে ঈশ্বরদীর দিকে ট্রেনে পালিয়ে যায়। যুদ্ধে শহিদ হন ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবিব, সুলতান মাহমুদসহ পাঁচজন।

দেশ গঠনের শপথ ও নেতৃত্ব ঘোষণা
হানাদাররা পালানোর পর মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ধ্বংসপ্রাপ্ত শহিদ মিনারের পাদদেশে সমবেত হন। সেখানে দেশ গঠনের শপথ নেওয়া হয় এবং প্রয়াত আমীর হোসেন ভুলুকে মুক্তিবাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক ও প্রয়াত ইসমাইল হোসেনকে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

পাকিস্তানি বাহিনী পালানোর পর, সিরাজগঞ্জের অন্যান্য থানা এলাকা যেমন বেলকুচি, কামারখন্দ, রায়গঞ্জ, চৌহালী, উল্লাপাড়া, ও শাহজাদপুরও শত্রুমুক্ত হয়।

দিবস উদ্‌যাপনের কর্মসূচি
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং সিরাজগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা বিএনপি, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহিদ মিনার ও মুক্তির সোপানে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা এবং স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান।

 

ভোরের আকাশ/রন