কিছু লোকের রক্তে দখলদারিত্ব মিশে আছে। কারো আগেভাগে এটা প্রকাশ পায়; আবার কারো দেরিতে। দিনদিন এই সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এমনই দখলদারের খপ্পড়ে পড়েছে তারাপুর চা বাগান। দেশের ঐতিহ্যবাহী এই চা বাগান দখল করে নিয়েছে ৭২৩ জন ভূমিদস্যু। শুনতে অবাক হলেও এটাই সত্য যে প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশ এ নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে প্রকৃত সার্ভে ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে অবৈধ দখলসহ ৩২৩ দশমিক ৮ একর ভূমির দায়িত্ব নেন সেবায়েত পঙ্কজ কৃমার গুপ্ত। এখন সেই পরিমাণ ভূমিও নেই এ বাগানের। বাগানের ভূমিতে রয়েছেন ৭২৩ দখলদার।
কাগজে কলমে ৫০০ একরের মধ্যে ৩২৩ দশমিক ৮ একর ভূমির ১৩০ একর বাগানের দখলে আছে। বাকি সব ভূমি বেদখল।
শহরের লাগোয়া হওয়াতে ভূমি-খেকোদের চোখ বাগানের ভূমিতে। বিশেষ করে পাঠানটুলাকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট যুগের পর যুগ তারাপুর বাগান দখল করে আসছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক খান রাজা মিয়া গংরা প্রায় ২৮ কেদার ভূমিতে গড়ে তুলেছেন ‘পার্কভিউ আবাসিক প্রকল্প’। প্রকল্পের প্লট বিক্রি করেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। এরপর আরো আবাসিক স্থাপনা গড়ে ওঠে আশপাশে। এসব জমি তারাপুর বাগান থেকে বেদখল হয়। প্রবাসীদের অনেকে অল্প টাকায় সিন্ডিকেটের কাছ থেকে জায়গা কিনে বসতি গড়েছেন।
তারাপুর চা বাগানের ভূমি ১৯৮৮ সাল থেকে বেদখল হয়ে আসছে। ওই বছর বাগানটি রাগিব আলীর নিয়ন্ত্রণে যায়। ১৯৯৫ সালে বাগানের জায়গায় গড়ে তোলা হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। স্থাপন করা হয় মদনমোহন কলেজের ক্যাম্পাস ও রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের হোস্টেল; ইন্টারন্যাশনাল বয়েজ হোস্টেল। ভূমিখেকোরা জাল দলিল বানিয়ে অবৈধ দখল নিয়ে জায়গার মালিকানা দাবি করেন। অনেকে ভূমির দখল নিয়ে বিক্রি করেছেন। ভূমির দখল উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। এর মধ্যে জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দখলে ৬ একর; রাগিব রাবেয়া হাসপাতালের নার্সিং হোস্টেলে ৪৫ শতাংশ; সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দখলে ২ একর ১২ শতাংশে পাকা টিনশেড বাংলোবাড়ি ও খালি জায়গা রয়েছে। মদন মোহন কলেজের দখলে এক একর।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ; তার ঘনিষ্ঠজন সাবুল আহমদ; সাইদ আহমদ; গোলাম রব্বানী; শাহিদা আক্তার মুন্নী ও এহছান মিয়ার নামে রয়েছে এক একর ৮০ শতকে পুকুর- দীঘি; ৩টি টিনশেড ঘর ও খালি জায়গা। আলহাজ আবু মিয়ার দখলে এক একর ৬৫ শতকে সাজিদ আলী কমিউনিটি সেন্টার ও মার্কেট; ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার নামে ২৭ শতাংশে টিনশেড বাসা ও খালি জায়গা; সাবেক কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাসের সাড়ে ৫ শতাংশ পাকা ভবন ও খালি জমি; স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক খান রাজা মিয়ার দখলে ৩টি প্লটে ৫৪ শতাংশ পাকা ঘর; পাকা টিনশেড ও দোকান এবং খালি জমি। আওয়ামী লীগের শাব্বির খানের দখলে ৬৬ শতাংশে টিনশেড বাসা ও খালি জায়গা; ৮ শতাংশ খালি জমি; পার্কভিউ আবাসিক এলাকায় সাড়ে ৯ শতাংশে একতলা বাসা রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আজিজ খান সজীব গংদের দখলে ২৪, ১৯ ও ৩ শতাংশের ৩টি প্লটে মার্কেট; খালি জায়গা ও টিনশেডের ৫টি ঘর রয়েছে। শাহপরান জামেয়া ইসলামিয়া এতিমখানার দখলে ২ একর ২০ শতক ভূমি; গৌছুল উলুম জামেয়া ইসলামিয়া মাদরাসা পীরমহল্লায় ৪৫ শতাংশ। তাদের কাছ থেকে জমি উদ্ধার করা কঠিন; তবে অসম্ভব নয়। আশাকরি প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভোরের আকাশ/রন