আলু নিয়ে বহুদিন ধরেই অস্বস্তি চলছে। এ বছর আলুর দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সব চেয়ে প্রিয় এই সবজির কেজি ৮০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সাড়ে ১৪ লাখ টন আলু মজুত থাকার পরও সংকটের অজুহাতে দাম বাড়ানো হয়েছে। এই উচ্চ মূল্যের কারণে এ বছর আগের চেয়ে অধিক চাষি আলু চাষে ঝুঁকছেন। এখানেও সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে। আলু বীজের উচ্চ মূল্য ও তীব্র সার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। এ পরিস্থিতিতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজের দাম প্রতি কেজি ৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে ওই দামে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্র্যাক ও কিষাণ সিডসহ কিছু কোম্পানির বীজ বাজারে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এমনিতেই বিএডিসি ও হিমাগারে সংরক্ষিত আলুবীজের প্রতি কৃষকের আগ্রহ কম। বরং বেশির ভাগ আলুচাষি সাধারণত হল্যান্ড থেকে আমদানি করা বীজের ওপরই নির্ভরশীল। কিন্তু ওই বীজ কৃষক পর্যায়ে পৌঁছতেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দাম। ৫০ কেজির এক বাক্স আলু আমদানিতে যেখানে খরচ পড়ছে ১৩ হাজার টাকা, কৃষক পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ২৬ হাজার টাকায়। অথচ গত বছর একই বীজ ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বলছেন, আমদানি করা বীজের দাম অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। আমদানিকারকের কাছ থেকে ডিলারের হাত হয়ে কৃষক পর্যায়ে পৌঁছতেই বীজের দাম দ্বিগুণের বেশি হয়ে যাচ্ছে। বিক্রয় রশিদে দাম ১৩ হাজার টাকা উল্লেখ থাকলেও কৃষকের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ২৬ হাজার টাকা। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে কৃষক পর্যায়েই আলুর দাম হবে ৮০ টাকা কেজি।
মূলত ডিলাররা আমদানি করা বীজের প্রতি কৃষকের আগ্রহকে পুঁজি করছে। যদিও চলতি আলু মৗসুমের শুরুতে ১৬-১৮ হাজার টাকায় বীজ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন দাম অনেক বেড়ে গেছে।
দেশে সর্বোচ্চ আলু উৎপাদনকারী একটি জেলা হচ্ছে মুন্সীগঞ্জ। চলতি মৌসুমে মুন্সীগঞ্জে ৩৪ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; যা থেকে ১০ লাখ ৪৫ হাজার টন আলু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৭৩ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ শেষ হয়েছে। সিরাজদিখান উপজেলায় গত বছর আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ হাজার ৭৫৫ হেক্টর। এ বছর আবাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার হেক্টর। সব মিলিয়ে এ বছর বীজের চাহিদা রয়েছে ৭৬ হাজার টন। এর মধ্যে জেলার ৫৮টি হিমাগারে ৪৪ হাজার টন বীজ মজুত রয়েছে। ওই জেলায় চার-পাঁচজন আলুবীজ আমদানি করেন। প্রতি বাক্স বীজের দাম পড়ে ১৩ হাজার টাকা। কিন্তু কৃষক পর্যায়ে তা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বীজ আমদানির হিসাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আলু চাষাবাদের ভরা মৌসুমে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের কৃষক সার নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে। সার সংগ্রহ করতে গিয়ে চাষিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একই সঙ্গে গুনতে হচ্ছে বেশি টাকা। চাষিদের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতারা ডিলারদের বরাদ্দ থেকে অধিকাংশ সার নিয়ে যাচ্ছে। আবার ওই সার চাষিদের কাছে তারা বেশি দামে বিক্রি করছে।
সার ডিলারদের দাবি, তারা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে চাষিদের ঠিকমতো সার দিতে পারছেন না। যদিও বাজারে আলুর চড়া দামের কারণে এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। তাই আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে জমি তৈরি করছেন চাষিরা। আর আলুবীজ সংকটের মধ্যে এবার চাষিদের সার কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোথাও চাহিদামতো সার পাচ্ছে না তারা। ক্ষেত্রবিশেষে বস্তা প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে বেশি দিয়ে তাদের সার সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ফলে আলু আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সার সঙ্কট কাটানো এবং আলু বীজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে।
ভোরের আকাশ/রন