যে বয়সে বাড়ির আঙ্গিনায় খেলাধুলার সাথে সাথে ক্লাসের পাঠ্য বই নিয়ে স্কুলে ছুটবে, সেই বয়সে জিহ্বা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ১২ বছরের জুবায়ের আল মাহামুদ। কথা বলা, খাওয়া-ঘুম থেকে শুরু করে হাটাচলায় জিহ্বা নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাকে।
আর সারাক্ষণ জিহ্বার উপর একটি তোয়ালে দিয়ে আটকে রাখায় খাবারের স্বাদ ও ভুলতে বসেছে শিশুটি। জুবায়ের এবং তার পিতাসহ পরিবারের সদস্যরা দেশ-বিদেশের সকল মানুষের কাছে বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়েছে। পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ ইউনিয়নের ছারছিনা দরবার শরীফের পিছনে আমিনুলের বাড়ি। পরিবারের তিন ছেলের মধ্যে জুবায়ের বড়। জুবায়েরের পিতা বলেন, জন্মের পর থেকেই জুবায়ের জিহ্বা সমানে বের হয়ে থাকতো। এভাবে বেড়ে উঠতে থাকে জুবায়ের। বয়স বাড়ার সাথে সাথে
জিহ্বাও বেশী বের হতে থাকে। এরপর বিভিন্ন চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেও সঠিক কারন কোন চিকিৎসক জানাতে পারেননি। এরপর ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে শুরু হয় জুবায়ের চিকিৎসার পালা। চার বছর বয়স থেকে ২০ জন চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়েছেন। সেখান থেকে বের হয়ে এসেছে এটি একটি বিরল রোগ। এ রোগের নাম হচ্ছে রক্তনালী টিউমার। সেখান থেকে জিহ্বা কেটে ফেলারও সিদ্ধান্ত হয়। তাতে করে বোবা হয়ে বেঁচে থাকতে পারবে জুবায়ের। কিন্তু পিতামাতা তা মেনে নিতে পারেননি। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারেন ভারতের ভেলোরে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব। এরপর ফাস্টফুডের দোকান থেকে শুরু করে বসতভিটা বাদে যা ছিল সকল জমি বিক্রি করে ছেলেকে নিয়ে যান ভারতের ভেলোরে। সেখানে গিয়ে ১৬ লাখ টাকা খরচ করেও সমাধান মেলেনি। টাকা শেষ হলে ফিরে আসেন দেশে। এখন বাহিরে এ চিকিৎসার জন্য ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু কোন টাকা নেই তাদের কাছে। পাঁচ সদস্যের পরিবারের তিনবেলা খাবার জোগাতে অটো চালানো শুরু করেছেন আমিনুল। সেখান থেকে একটি টাকাও জুবায়েরের পিছন ব্যয় করতে পারেন না। এ জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন তিনি। স্থানীয় এবং বিভিন্ন মাধ্যমে যা সাহায্য আসে তা দিয়ে জুবায়েরের ওষুধের খরচ বহন করছেন। দৈনিক ভোরের আকাশ কে আমিনুল বলেন, চিকিৎসকরা জুবায়ের এর জিহ্বা কেটে ফেলার জন্য বলেছিল। কিন্তু আমার ছেলেটা বোবা হয়ে বেঁচে থাকবে এটা আমরা চাই না। এ জন্য বসত ভিটাটুকু রেখে সকল জমি বিক্রি করে দিয়েছি। দেশে কোটি কোটি মানুষ রয়েছে। তারা যদি সামান্য সহযোগিতা করে তাহলে আমার ছেলেটা বেঁচে যায়। এ সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি আমিনুল। জুবায়েরও তার চিকিৎসার জন্য সকলের কাছে সাহায্য চেয়েছে। জিহ্বার জন্য খাওয়া থেকে শুরু করে খেলাধুলা, ঘুম কিছুই করতে পারে না। সব সময় জিহ্বা ঢেকে রাখায় তার খুব সমস্যা হয়। এটা বহন করতে পারছে না। এ জন্য সকলের কাছে সাহায্য চায় জুবায়ের। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে তিনি জুবায়েরের বিরল রোগের বিষয়টি জানতে পেরে তাকে সহায়তা করার জন্য তাকে অফিসে ডেকে এনেছেন। অফিসে আসার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জুবায়েরের অবস্থা দেখে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। একই সাথে বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলা ইভেন্ট-৮৪ থেকে তাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
এছাড়া পিরোজপুরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাথে কথা হয়েছে তারা জুবায়েরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবেন। বরিশাল জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ দেশবাসীকে আর্থিক সহায়তা করার অনুরোধ জানান।
ভোরের আকাশ/মি